নতুন করে কোভিডের বাড়বাড়ন্তে উদ্বিগ্ন কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের প্রধান নির্বাচনী আধিকারিক ও জেলার জেলাশাসকদের কঠোরভাবে কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি রাধাকৃষ্ণান ও বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জির ডিভিশন বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় নির্দেশ পালনের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। কোনও কারণে যেকোনও রকম অসুবিধায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সাহায্য গ্রহণের কথাও নির্দেশে জানানাে হয়েছে।
রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনী জনসভা ও ভােটের লাইনে কোনও কম দূরত্ব বিধি না মানা ও মাস্কের ব্যবহার না করার প্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্ট এই নির্দেশ জারি করেছে। এক বছরের অধিক সময় ধরে এমন কড়াকড়ি অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলার ফলে মানুষ কিছুটা হলেও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
কারণ স্বাভাৰ্কি জীবনযাত্রা নির্বাহে এমন বিধিনিষেধ তাদের কাছে অসহ্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রশাসন বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষ করােনার নতুন করে সংক্রমণ এড়াতে মানুষকে আবারও বিধিনিষেধ মেনে চলার কথা শােনাতে বাধ্য হচ্ছে। এক বছর আগে মানুষ বাধ্য হয়ে সচেতন ব্যবহার করেছে।
কিন্তু ২০২০ এপ্রিলের তুলনায় ২০২১ এপ্রিলের করােনা আরও ভয়াহু বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিচ্ছেন। বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা উদ্বেগেরই। উন্নত দেশগুলিতে বিগত বছরে সংক্রমণ হয়েছে অস্বাভাকি হারে। সে তুলনায় ভারতে সংক্রমণ এড়ানাে সম্ভব হয়েছে যে কোনও কারণেই হােক।
কিন্তু চলতি সময়ে তা আর রােধ করা সম্ভব হচ্ছে না মুলত মানুষের বেপরােয়া ভাবের জন্যই। এক্ষেত্রে বেঞ্চ প্রয়ােজনে ১৪৪ ধারা জারি করে দূতত্ব বিধি পালন ও মাস্ক এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। কারণ এখন অবস্থা বাস্তবিক পক্ষেই ভয়াবহ। প্রশাসনও অসহায় তাই বাধ্য হয়েই আইনি পথে গিয়ে মানুষকে সংশ্লিষ্ট বিধিনিষেধ পালনে বাধ্য করা হচ্ছে।
এব্যাপারে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার হাইকোর্টের নির্দেশ কিভাবে পালন করল তার বিব্রণ দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে পরবর্তী শুনানির দিন ১৯ এপ্রিল তারিখে। প্রয়ােজনে সংশ্লিষ্ট বিধিনিষেধ অবহেলা, পালনে অস্বীকার ও অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
হাইকোর্ট মনে করে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বেপরােয়া স্বভাবের ব্যক্তিদের আচরণের জন্য সমাজের বৃহত্তর অংশের মানুষ এমন মারণ সংক্রমণের খপ্পরে পড়বেন এটা কখনই মেনে নেওয়া যায় না।
এব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন বা বৃহত্তর অর্থে সমাজের কোনও অংশের মানুষই যাতে এই বিধিনিষেধ অবহেলা না করেন সেটা নিশ্চিত করার জন্যই আদালত এমন নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছে। কোভিডের লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধির ধরন দেখেই সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতেই এমন ব্যবস্থার নিদান দিয়েছে আদালত।
মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটার সম্ভানা একই ধরনের বলে মনে করা হচ্ছে। একারণে আদালত চারটি আবশ্যিক বাধ্যতামূলর নির্দেশ পালনের কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে অতি অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা, স্যানিটাইজার ব্যবহার, নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখা ও জমায়েত হতে না দেওয়া।
সাধারণের সচেতনতার ঔরকে আরও উন্নত করার প্রয়াস পাওয়াটাও এক জরুরি কর্তব্যের মধ্যে নিতে হবে বলে আদালত জানিয়েছে।