গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষার্থে ভারত ছাড়তে প্রস্তুত হোয়াট্‌সঅ্যাপ, আদালতে জানাল মেটা 

Written by SNS April 26, 2024 4:04 pm
দিল্লি, ২৬ এপ্রিল – ভারত ছাড়তে হলেও গোপনীয়তা সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করবে না হোয়াট্‌সঅ্যাপ। দিল্লি হাই কোর্টে এমনটাই জানিয়ে দিলেন মেটার আইনজীবী। ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইনকে চ্যালেঞ্জ করেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে মেটা-র মালিকানাধীন সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ। মেসেজিং সংস্থা সাফ জানিয়েছে, তাদের মেসেজের এনক্রিপশন ভাঙতে বলা হলে, তারা ভারতে আর থাকবে না। পরিষেবা বন্ধ করে দেবে। মেটা-র তরফে  আইনজীবী জানিয়েছেন, গোপনীয়তার নিশ্চয়তার কারণেই হোয়াট্‌সঅ্যাপ ব্যবহার করেন মানুষ। তাই তার সঙ্গে কোনও আপস করা যাবে না।
 
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইনফরমেশন টেকনোলজি রুল, ২০২১ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। তাতে বলা হয়েছিল, টুইটার অর্থাৎ যা বর্তমানে এক্স, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াট্‌সঅ্যাপের মতো সমাজমাধ্যমগুলিকে নতুন নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে চ্যাট অনুসরণ করে কোনও ভাইরাল তথ্য নিয়ে সন্ধান করতে হবে।
 
হোয়াট্‌সঅ্যাপে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ পরিষেবা পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে যে কোনও চ্যাট সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাইরের কেউ সেই কথোপকথনের নাগাল পান না। এমনকি, হোয়াট্‌সঅ্যাপের মূল সংস্থা মেটাও সেই চ্যাট পড়তে পারে না। কেন্দ্রের ঘোষিত নিয়মে প্রয়োজন হলে হোয়াট্‌সঅ্যাপের এই গোপনীয়তার সীমা ভাঙার কথাও বলা হয়েছিল, কিন্তু তাতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।

এই শুনানিতে দিল্লি হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মনমোহন এবং বিচারপতি  প্রীতম সিংহ অরোরার বেঞ্চে হোয়াট্‌সঅ্যাপের আইনজীবী জানান, যে পদ্ধতিতে তাঁরা গোপনীয়তা রক্ষা করেন, তা ভাঙা সম্ভব নয়। সেটা করতে গেলে মেসেজের একটি দীর্ঘ তালিকা দীর্ঘ সময়ের জন্য রেখে দিতে হবে। কারণ কখন কোন মেসেজ সংক্রান্ত তথ্য জানার প্রয়োজন হবে, তা আগে থেকে নির্ণয় করা যাবে না। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মেসেজ বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে, যা সম্ভব নয়।  তাই এই নিয়ম হোয়াট্‌সঅ্যাপের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে তারা ভারত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে। পৃথিবীর অন্য কোনও দেশেও হোয়াট্‌সঅ্যাপ সংক্রান্ত এমন কোনও নিয়ম চালু করা হয়নি বলে জানান তাদের আইনজীবী। হোয়াটসঅ্যাপের তরফে আরও বলা হয়, মূল যে তথ্য প্রযুক্তি আইন রয়েছে, তাতে এনক্রিপশন ভাঙার কথা বলা হয়নি। দক্ষিণ আমেরিকা, ব্রাজিলেও এমন কোনও নিয়ম নেই।

এই মামলাতেই কেন্দ্রের আইনজীবীর যুক্তি, হোয়াট্‌সঅ্যাপকে হাতিয়ার করে অনেক সময় আপত্তিকর বার্তা  সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা জনগণের পক্ষে ক্ষতিকর। এমনকি, ওই ধরনের বার্তাগুলি কখনও কখনও সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তাই ২০২১ সালের ওই নিয়মটি চালু করা প্রয়োজন ছিল।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, সাধারণ মানুষের গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তা কখনওই নিরঙ্কুশ নয়। দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন। আগামী ১৪ অগস্ট এই মামলাটি আবার দিল্লি হাই কোর্টে শুনানির জন্য উঠবে।