সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বাজেটে অন্নসংস্থান থেকে কর্মসংস্থানে বরাদ্দ কমিয়ে ভরতুকি বাড়ানো হয়েছে কর্পোরেটদের। কেন্দ্রীয় বাজেটকে একারণেই সরাসরি ‘কর্পোরেটদের তোফা’-র বাজেট বলে মনে করছে শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনগুলি। সাধারণ মানুষের আয় বাড়িয়ে বাজারের চাহিদা বৃদ্ধির প্রস্তাব বারে বারে অর্থমন্ত্রীকে জানানো হলেও সে ব্যাপারে আমলই দেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। উলটে কর্পোরেটদের বাণিকসভা সিআইআই অর্থমন্ত্রীর কাছে ঢালাও আর্থিক সংস্কারের যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা তিনি এবারের বাজেটে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বলে দেখা গেল। আগেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঢালাও বেসরকারিকরণে মোদী সরকার ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপ লাইন রুট (এনএমপিআর) চালু করেছিল। সেই পথে এবার ফের ঢালাও বেসরকারিকরণের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সীতারামন।
আগমী পাঁচ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণে মোট ১০ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। প্রাক্ বাজেট আলোচনার সময় অর্থমন্ত্রীকে বেসরকারিকরণ স্তব্ধ করে শূন্যপদে নিয়োগ চালু করার দাবি জানান হয়েছিল। উলটে কর্পোরেটরা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের যে প্রস্তাব রাখে, তা মেনেই চালুর আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে কর্মসংস্থানের কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণে কর্মী ছাঁটাই আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আর্থিক সমীক্ষকরা।
কেন্দ্র যতই এই বাজেটকে জনমুখী ও আর্থিক বৃদ্ধি বলে প্রচার করুক না কেন, এই বাজেট হলো সরাসরি কর্পোরেটমুখী এবং জনবিরোধী। মোদী সরকার সব সময়েই কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখে চলেছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের আয় কমে যাওয়া নিয়ে কেন্দ্রের কোনও মাথাব্যথা নেই। মোদী জমানায় কর্পোরেট মুনাফা বেড়েছে ১৫ গুণ, অথচ সাধারণ মানুষের আয় প্রতিদিন কমেছে। এতে বাজারে চাহিদা কমে গিয়ে শিল্প-বাজারে সঙ্কট দেখা গিয়েছে। এক্ষেত্রে কর্পোরেট সংস্থার সম্পদের উপর অতিরিক্ত কর বসিয়ে অর্থসংগ্রহ করা উচিত কেন্দ্রের। কিন্তু দেখা গেল, অতিরিক্ত কর না চাপিয়ে কর্পোরেটদের আরও বেশি কর মকুব করা হলো। এতে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে বলে দাবি করা হলেও দেখা গেছে বেসরকারি শিল্প তাদের বিনিয়োগ বাড়ায়নি। যেখানে শিল্পের বাজার নেই সেখানে তাদের বিনিয়োগ বাড়ছে না জানা গেলেও কর ছাড়ে বিরাম নেই কেন্দ্রের।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণে ভালো মানের চাকরির সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, রেগায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বরাদ্দ প্রতি বছর কমতে থাকায় কাজের সুযোগ কমে যাচ্ছে। দেখা গিয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে রেগায় বরাদ্দ ছিল ৮৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। এই বছর বরাদ্দ কমে হয়েছে ৮৫ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। ফলে দুই বছরে রেগায় বরাদ্দ কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকার উপর।
মোদী সরকার বাজেটে বরাবর কর্পোরেটদের নানা ছাড় ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি, করলেও তাতে শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি। কর্পোরেটদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অর্থ ফের ঢালাও বেসরকারিকরণ শধু নয়, ভরতুকি কমানো হচ্ছে জরুরি সামাজিক প্রকল্পেও। যেমন কর্পোরেট ছাড়ের ভরতুকি দিতেই কমানো হয়েছে খাদ্য ভরতুকি। ২০২৩-২৪ সালের তুলনায় খাদ্যে ভরতুকি কমেছে ৮ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা (পিএমজিএইচওয়াই) প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। অন্নসংস্থান থেকে কর্মসংস্থান সবেতেই বরাদ্দ কমিয়ে কর্পোরেটদের ভরতুকি বাড়ানো হচ্ছে।