• facebook
  • twitter
Friday, 21 March, 2025

হিন্দিকে টপকে গেল বাংলা

বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ওষুধ, প্রযুক্তির নানা দিক বা শিক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু ক্ষেত্রে নানা সংস্থার বাণিজ্যিক ব্যবহারেও কাজে লাগে এই তথ্য।

প্রতীকী চিত্র

বিশ্ব মানচিত্রে হিন্দিকে টপকে গেল বাংলা ভাষা। ভারতীয় কোনও কথ্য আঞ্চলিক ভাষার নিরিখে যে সংবাদ বাঙালির গর্বকে আরও বাড়িয়েছে। ২০২৩-এর ক্রমতালিকায় হিন্দি ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা সে বছর ছিল ৬০ কোটি ৯৫ লক্ষ। তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ভারতীয় এই অন্যতম আঞ্চলিক ভাষা। সেখানে বাংলা ছিল ২৭ কোটি ২৮ লক্ষ। ২০২৪-এর পরিসংখ্যান বলছে, এই পর্যায়ক্রমেই হিন্দিকে টপকে গিয়েছে বাংলা। বিশ্বজুড়ে এখন কত সংখ্যক মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলছেন? ইউনেস্কোর স্বীকৃতি-সহ ‘গ্লোবাল পপুলেশন র্যাঙ্ক’ অনুযায়ী তার রিপোর্টে অবশ্য প্রকাশ করা হবে কিছুদিনের মধ্যেই।

প্রতি বছরই এই রিপোর্ট বদলায়। ২০২৪ সালের শেষে সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে বাংলা ভাষার এই ব্যাপ্তির হিসাব নিয়েছে ইউনেস্কো স্বীকৃত নির্দিষ্ট কয়েকটি সংস্থা, যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। রিপোর্টের মূল ভিত হল বাংলাদেশ। তার সঙ্গে এই মানচিত্রে যোগ হয়েছে এদেশের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা-সহ ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মুম্বই ও দক্ষিণ ভারতে বিস্তৃত বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা। তার সঙ্গে ইউরোপ, পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ার একটা অংশে বেশ কিছু সংখ্যায় বাঙালির বাস রয়েছে। একইভাবে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার নানা প্রদেশে বাঙালি তথা বাংলা ভাষাভাষীর বাস রয়েছে। কর্মসূত্রে তাঁরা সেখানে রয়েছেন দীর্ঘদিন।

ইউনেস্কো যাদের মাধ্যমে এই রিপোর্ট তৈরি করে, সেই সব সংস্থাই এই তথ্য সামনে এনেছে। তবে, বিশ্বের নিরিখে বাংলা ভাষা হিন্দিকে টপকে গেলেও দেশে আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে সব থেকে ব্যবহারের তালিকায় থাকা হিন্দি ভাষাই প্রথম স্থানে রয়েছে। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) লিঙ্গুইস্টিক রিসার্চ ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ড. নীলাদ্রিশেখর দাস জানাচ্ছেন, এই রিপোর্ট সামনে আসায় বাঙালি হিসেবে গর্ব তো হবেই। কিন্তু তার সঙ্গে অনেক দায়িত্ব বেড়ে যায়। তার কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার তো বটেই, বাংলাদেশ, ইউনেস্কো বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন বা সোমালিয়ার মতো দেশের অর্থনীতিতেও এই রিপোর্ট প্রভাব ফেলে।

এদের তথ্যভাণ্ডার সমন্বয়ের একটা বড় অংশের কাজ আইএসআইয়ের মাধ্যমেই হয়। সম্প্রতি ব্রিটেন সরকারের সঙ্গে তেমনই কিছু কাজ করেছেন ড. দাস। তারই অন্যতম কাজ এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কী সেই কাজ? ড. দাস জানাচ্ছেন, ‘শুধু যদি আমাদের দেশের কথাই ধরি, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার দেখবে তার কত বাংলাভাষী নাগরিক দেশের বাইরে রয়েছেন। দেখা হয়, তাঁদের কতজন প্রবাসী। এর সঙ্গেই দেখা হয়, কতজন মানুষ দেশের কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত, বাংলাভাষী কত মানুষ ভারতের উপর নির্ভরশীল। সবটা দেখে পর্যালোচনা করে ওই নির্দিষ্ট ভাষার মানুষের জন্য পাল্টা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পথ তৈরি রাখার মতো নানা ধরনের সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ কাজ চালাতে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। অন্য দেশের অধিবাসী কিন্তু মাতৃভাষা বাংলা, এমন মানুষের তথ্যভাণ্ডারও তৈরি রাখা হয়। তবে এইসব তথ্য যে শুধু কোনও দেশের সরকারেরই যে কাজে লাগে, তেমন নয়।

জানা গিয়েছে, বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ওষুধ, প্রযুক্তির নানা দিক বা শিক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু ক্ষেত্রে নানা সংস্থার বাণিজ্যিক ব্যবহারেও কাজে লাগে এই তথ্য। এই সংক্রান্ত প্রত্যেক দিনের তথ্য তাদের প্রয়োজন। তার উপর ভিত্তি করেই বিশ্বের নিরিখে নির্দিষ্ট ভাষার মানুষকে টার্গেট করে নিজেদের পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন তৈরি করে এই সংস্থাগুলি।

বৈচিত্র্যময় বাংলা ভাষার প্রসারে বাঙালি মাত্রই গর্ববোধ করেন। অন্য ভাষার সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, বাংলা ভাষা সহজেই অন্যদেরও গ্রহণ করতে পারে। এইভাবে বহু হিন্দি, আরবি, ফারসি শব্দে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে। ফলে বাংলাভাষার গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।