• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বাঙালির ভাষা

বর্ধমান শহরে রাজবাড়ির আওতায় ছেনা চালগুঁড়ি দিয়ে ও রসের সংযোগে যে ভাতের মতো দেখতে নরম সুখাদ্য সৃষ্টি হয়েছে তার নাম সীতাভোগ।

ফাইল চিত্র

শ্রী সুকুমার সেন

পূর্ব প্রকাশিতর পর

Advertisement

রসগোল্লার রং সাদা। রসগোল্লাকে রসে আরও বেশিক্ষণ পাক করলে তা শক্ত ও কালচে হয়ে যায়। তারপর তা তুলে রসে না রাখলে গায়ের রস শুকিয়ে চিনির মতো হয়ে যায়, অথবা চিনি ছড়িয়ে দেয়। তখন নাম হয় দানাদার। আকার বদল করে রসগোল্লার বা দানাদারের পাকে যা তৈরী হচ্ছে তার নাম বিভিন্ন। যেমন চক্রাকার হল ক্ষীরমোহন, চৌকো আকার হল চমচম ইত্যাদি।

Advertisement

ছেনা মেড়ে ঘিয়ে অল্পবিস্তর ভালো করে ভেজে নিয়ে খুব পাতলা রসে ডুবিয়ে রাখলে হয় পানতুয়া। শব্দটির আসল মানে হল পানিতে (অর্থাৎ জলে) থুয়া (রেখে দেওয়া)। ভাজার অনুপাতে রং হয় হালকা লাল বা লালচে থেকে ঘোর কালো পর্যন্ত।

আকার গোল ও রং ঘোর কালো হলে গোলাপজাম। তাকিয়ার আকারে হলে একদা বলত লেডিকেনি (Lady Canning এর নাম অনুসারে), এখন বলে ল্যাংচা। (এ শব্দটির মূলে সংস্কৃত লিঙ্গ শব্দটি আছে।) চৌকো আকারের হলে বলে চিত্রকূট। এ নাম কলকাতাতেই চলে।

তিন-চারশ’ বছর আগে যে ছেনাবড়া চলতি ছিল তা রসে ফেলা হত কিনা জানি না। রসে ফেলা হলে তা অবশ্যই এখানকার পান্তুয়া লেংচার পূর্ব-পুরুষ।

এখনকার দিনে ছেনা নিয়ে নতুন নতুন খাবার তৈরী হয়েছে। ছেনার সঙ্গে ক্ষীর গুলে মালপোর মতো করলে বলে ছেনার মালপো অথবা ক্ষীরের লুচি (পূর্ববঙ্গীয়ারা)। কাঁচাগোল্লার পাকে দুধ ছেনার মালপো অথবা ক্ষীরের লুচি (পূর্ববঙ্গীয়রা)। কাঁচাগোল্লার পাকে দুধ ছেনা চিনি মিলে হয় ছেনার পায়েস।

বর্ধমান শহরে রাজবাড়ির আওতায় ছেনা চালগুঁড়ি দিয়ে ও রসের সংযোগে যে ভাতের মতো দেখতে নরম সুখাদ্য সৃষ্টি হয়েছে তার নাম সীতাভোগ। নামটি হওয়া উচিত সিতাভোগ। অর্থাৎ মিছরিভোগ, ‘সিতা’ মানে মিছরি। সীতাভোগ মোদকদের এক কীর্তি। সীতাভোগের অনুকরণে এখন হয়েছে ছানার পোলাও (কলকাতা অঞ্চলে)।

রসগোল্লার প্রসঙ্গে একটা কথা ভুলে গিয়েছি। রসগোল্লার সাজের মধ্যে কমলালেবুর খোসাবাটা ইত্যাদি দিয়ে এবং/অথবা ক্ষীর প্রভৃতির পুর দিয়ে বড়ো বড়ো গোল মিষ্টান্ন তৈরী হয়।

(ক্রমশ)

Advertisement