• facebook
  • twitter
Saturday, 14 June, 2025

বিশ্বের শিল্পপতিদের কাছে আরও বড় আকারে আত্মপ্রকাশ করবে বাংলা

বিশ্বের শিল্পপতিদের কাছে আরও বড় আকারে আত্মপ্রকাশ করবে বাংলা

ফাইল চিত্র

প্রথম থেকেই ২০২৫ সালের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনকে অন্যবারের তুলনায় বড় আকারে করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতোই চলছে প্রস্তুতি। রাজ্যের প্রথম সারির সব শিল্পপতি ও কলকাতার সমস্ত উপদূতাবাসের সঙ্গে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি বৈঠক করেছেন মমতা। রাজ্য সরকারের দাবি, এবারের সম্মেলনে বেশ কিছু বড় বড় বিনিয়োগ আসতে পারে।

বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস) শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের সম্মেলনের আগে রাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগের পরিবেশ আরও ভালো করে গড়ে তুলতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাকে বিভিন্ন দেশের শিল্পপতিদের সামনে আরও বিনিয়োগযোগ্য করে তুলতে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি, আরও বেশি করে বিনিয়োগ টানতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজ্য। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র, ছোটো ও মাঝারি উদ্যোগ সহ প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন, পর্যটন, শক্তি, কারিগরি শিক্ষা বিভাগ, উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ইত্যাদি একাধিক ক্ষেত্রকে। ২০২৫ সালের এই সম্মেলনেও বিশ্বের বিভিন্ন শিল্পপতিদের বাংলার একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানানো হবে।

ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ ও ৬ তারিখ বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টার ও বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। উপস্থিত থাকবেন ৩০টি শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। সব মিলিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৬০০ জনের বেশি প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানে বাংলাকে আরও ভালো করে সকলের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবে রাজ্যের প্রতিনিধিরা। রাজ্যে বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে সকলেই জানেন। পশ্চিমবঙ্গ খুব দ্রুত ইকোনমিক পাওয়ার-হাউসে রূপান্তরিত হচ্ছে, যার ভৌগলিক অবস্থান শিল্পপতিদের কাছে বেশ লোভনীয়। এছাড়াও সরকারের নীতি, দক্ষ কর্মচারী এবং প্রাণবন্ত ব্যবসায়িক পরিবেশ এই রাজ্যকে বাকি সব সবার থেকে আলাদা করে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরে। ভারতের অর্থনীতিতেও রাজ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কলকাতায় আয়োজিত অষ্টম বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন এই দিকগুলি শিল্পপতিদের সামনে তুলে ধরতে চাইছে রাজ্য।

এমএসএমই বা ক্ষুদ্র, ছোটো ও মাঝারি উদ্যোগে আরও বেশি করে বিনিয়োগ টানতে উদ্যোগী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন বেশ উল্লেখযোগ্য, ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে উপরের সারিতে। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের কারণেই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

সরকারের দাবি, ২০২৪–২৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের জিএসডিপি ১৮.৭৯ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে যেতে পারে। এই রাজ্য উৎপাদন, আইটি, সিমেন্ট, চামড়া, লোহা ও ইস্পাত, টেক্সটাইল ইত্যাদি বিভিন্ন শিল্পের বিস্তৃত ক্ষেত্র। পূর্ব ভারতের সবথেকে বৃহত্তম অর্থনীতির রাজ্য হিসেবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যে আয়োজিত হতে চলা অষ্টম বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন শিল্পপতিদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করবে বলেই মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

কলকাতায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক গ্লোবাল হাব গড়ে তুলতে চাইছে আইটিসি ইনফোটেক। আসন্ন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। সংস্থার গ্রিন সেন্টার ক্যাম্পাসে গ্লোবাল এআই হাব গড়ে তোলা হবে। এই হাব থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রাহকরা পরিষেবা পাবেন।

পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষ কর্মী পেয়ে যাবে সংস্থা। এআই হাব গড়ে উঠলে কলকাতার আইটিসি ইনফোটেকে প্রায় ৩০ শতাংশ কর্মী বাড়বে। ৩–৪ বছরের মধ্যে এই হাব পুরোপুরি কাজ শুরু করে দেবে।
রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির আরও উন্নতি সাধন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রচুর কর্মসংস্থানের পথ খুলে যাবে। তাই শুধু সরকার বা বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়, রাজ্যবাসীর জন্যেও এই সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বছর সম্মেলনে বিশেষ কোনও ক্ষেত্রকে নয়, রাজ্যে শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রতিটি ক্ষেত্রকেই গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো সম্মেলনের সূচির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।

এবারের বিজিবিএসে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন অতিথি উপস্থিত থাকতে পারেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন, ভুটানের রাজা জিগমে খোসার নামগেল ওয়াংচুক সহ আরও অনেকে। পাশাপাশি গত বছরের মতো এ বছরও হাজির থাকতে পারেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এবারের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে একাধিক নীতি ঘোষণা হতে পারে। সম্মেলনের ঠিক আগের দিন অর্থাৎ আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকে একাধিক মউ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে বলে খবর।