রাজ্যে তৈরি হচ্ছে ৬টি ইকোনমিক ফ্রেইট করিডর। বুধবার বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন থেকে একথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই করিডর তৈরি হলে অন্তঃরাজ্য পণ্য পরিবহণে ব্যাপক উন্নতি হবে। এছাড়াও উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি, বাণিজ্য ও পরিষেবা ক্ষেত্রের অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, ছয়টি করিডরের মধ্যে চারটে করিডরই ডানকুনির উপর দিয়ে যাবে। প্রথম দফায় পানাগড় থেকে কোচবিহার, রঘুনাথপুর–তাজপুর, ডানকুনি–ঝাড়গ্রাম এবং ডানকুনি–কল্যাণী করিডর তৈরির কাজ চলছে। দ্বিতীয় দফায় পুরুলিয়ার গুরুডি থেকে জোকা ও খড়গপুর থেকে মোরগ্রাম করিডর গড়ে তোলা হবে। এর জন্য আপাতত সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়েছে। পানাগড় থেকে কোচবিহার ৬৩৯ কিলোমিটার সড়ক, রঘুনাথপুর থেকে ডানকুনি হয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর মোট ৩৯৮ কিমি সড়ক, ডানকুনি থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত ১৬০ কিমি এবং ডানকুনি থেকে কল্যাণী ৪৩ কিমি করিডর গড়ে তোলার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে রাজ্য। দ্বিতীয় দফায় পুরুলিয়ার গুরুডি থেকে জোকা ২৩৪ কিমি এবং খড়্গপুর-মোরগ্রাম, ২৩০ কিমি করিডর গড়ে তোলা হবে। এই করিডরগুলির মধ্যে চারটি করিডরই ডানকুনিকে কেন্দ্র করে। কারণ ডানকুনি থেকে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা পর্যন্ত রয়েছে ভারতীয় রেলের ফ্রেইট করিডর। সব কটি করিডরই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ককে সংযুক্ত করবে। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
এই করিডরগুলি তৈরি হলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থাই শুধু নয় ভিন রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হবে। বাংলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এই উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সব করিডরের কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জমি। কিন্তু এক্ষেত্রে রাজ্যের কোনও সমস্যা হবে না বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ রাজ্যের কাছে নিজস্ব ল্যান্ড ব্যাঙ্ক ও জমি নীতি রয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, করিডর তৈরির জন্য বাজার দরের চেয়ে বেশি দরে সিংহভাগ জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সূত্রে জানা গিয়েছে, ডানকুনি ও চন্দননগরে ১৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে নিফা গ্রুপ। সিঙ্গুরে তৈরি হবে ফ্যাশন ও গয়না সামগ্রীর রপ্তানি কেন্দ্র। হাওড়ার সাঁকরাইলে রাবার কারখানা তৈরি হবে। এখানে ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে রাজ্য সরকার। হ্যাভআস এরোটেক ব্যারাকপুরে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির কেন্দ্র গড়ে তুলবে। হলদিয়ায় ৯১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে পেট্রো কার্বন অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেড। বীরভূমের পাঁড়ায় পুরুজ্জীবিত হবে ময়ূরাক্ষী কটন মিল। ক্ষুদ্র, ছোটো ও মাঝারি শিল্পের জন্য রাজ্যে ৬০টির বেশি শিল্প পার্ক তৈরি করা হবে। সেল গ্রোথ ওয়ার্ক নামের একটি সংস্থা আসানসোলে ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণে ২১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
এক নজরে
ডানকুনি ও চন্দননগরে ১৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে নিফা গ্রুপ।
সিঙ্গুরে তৈরি হবে ফ্যাশন ও গয়না সামগ্রীর রপ্তানি কেন্দ্র।
হাওড়ার সাঁকরাইলে রবার কারখানা তৈরি হবে।
ব্যারাকপুরে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির কেন্দ্র গড়বে হ্যাভআস এরোটেক।
হলদিয়ায় ৯১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে পেট্রো কার্বন অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেড।
বীরভূমের পাঁচড়ায় পুরুজ্জীবিত হবে ময়ূরাক্ষী কটন মিল।
ক্ষুদ্র, ছোটো ও মাঝারি শিল্পের জন্য রাজ্যে ৬০টির বেশি শিল্প পার্ক তৈরি করা হবে।
সেল গ্রোথ ওয়ার্ক নামের একটি সংস্থা আসানসোলে ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণে ২১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
নিউটাউনে আইটিসি ইনফোটেকের ক্যাম্পাসে ‘গ্লোবাল এআই সেন্টার অফ এক্সেলেন্স’ তৈরি হবে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও এনার্জি সেক্টরে আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সংস্থা।
৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে মুকেশ আম্বানির সংস্থা রিলায়্যান্স।
আগামী ৫–৬ বছরে রাজ্যে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হর্ষবর্ধন নেওটিয়া।
১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শালবনিতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা জেএসডব্লিউ–এর।
বাংলায় গ্লোবাল সেক্টর ফর ইন্টেলিজেন্স তথা কৃত্রিম মেধার হাব তৈরির সিদ্ধান্ত আইটিসি-র।