৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বেঙ্গলি প্যানোরমা বিভাগে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরীর ছবি ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’। দেশ বিদেশের নানা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে এই ছবি। প্রশংসা ও পুরষ্কারে এ সম্মানিত হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আজই মুক্তি পাচ্ছে এই ছবি। তার আগে কী বললেন ঋষভ?
‘অভিজিৎদার সাথে এটা আমার দ্বিতীয় প্রজেক্ট। প্রথমটা ছিল ‘টুরু লাভ’, লকডাউন এর সময়, হইচই-এর জন্য একটা সিরিজ। তাই বলা যায় এটা আমাদের একসাথে দ্বিতীয় কাজ। অভিজিৎদার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা সব সময়ই খুবই ভালো, কারণ অভিজিৎদার সাথে আমার একটা অদ্ভুতরকমের বোঝাপড়া আছে। উনি যেটা বোঝাতে চান সিনেমার মাধ্যমে, অভিনেতা হিসাবে আমি সবসময় চেষ্টা করি সেটাই ফলো করে চরিত্রের মনস্তত্ত্বটা তুলে ধরার। এই ছবিটা করার সময় আমরা অনেক বারই বসেছি স্ক্রিপ্ট নিয়ে, স্ক্রিপ্ট এর সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অনেক বার আলোচনা করেছি, ওয়ার্কশপ করেছি এবং বাকি সহ অভিনেতাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি সিনগুলোর করিয়োগ্রাফ নিয়ে। সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রসেস ছিল আমাদের জন্য। একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ওয়ার্কশপ হয়েছে, টিমওয়ার্ক ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।
এই স্ক্রিপ্টের সবথেকে রোমাঞ্চকর বিষয় হচ্ছে বাংলার চারজন চিত্র শিল্পীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই ছবিতে এতগুলো দিক আছে- এই ছবিটার মধ্যে একটা লাভ স্টোরি আছে, থ্রিলার এলিমেন্ট আছে, সায়েন্স ফিকশন মোমেন্টস আছে! তাই এটাকে একটামাত্র জনর-এর ছবি বলা যায় না, অনেকগুলো জনর-এর ছোঁয়াই আছে ছবির মধ্যে। আর এটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় স্ক্রিপ্টের।
একটা খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার এই ছবিতে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর আঁকা বিসর্জন-এর একটা ছবি। যেটাকে আমরা আমাদের ছবির চিত্রনাট্যে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছি। প্রথমে ওটা চিত্রনাট্যে ছিল না, পরে সেই দৃশ্য যোগ করা হয় এবং আমার মনে আছে আমরা অনেক রাতে একটা লোকেশনে শ্যুট করছিলাম এবং সেখানকার সাধারণ মানুষ আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন। শ্যুটিং-এ লোকেশন সংক্রান্ত আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছিল, সেগুলো তাঁরা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থে সমাধান করে দিয়েছেন। এই সিনটা আমাদের ছবিতে একটা অন্য মাত্রা যোগ করেছে। ডিরেক্টর, প্রোডিউসার দু’জনেই খুব খুশি হয়েছিলেন শ্যুট শেষে। আমাদের স্ক্রিনিং-এও এই সিনটা দেখানোর সময় প্রচুর হাততালি পড়েছিল।
আমাদের একটা চিন্তা ছিল যে, এই ছবিটা মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবেন, কারণ এতগুলো জনর-কে ছুঁয়ে যাচ্ছে ছবিটা। কিন্তু যখন কলকাতাতে স্ক্রিনিং হল, নজরুল তীর্থ এবং রবীন্দ্র সদনে, সেখানে দর্শকদের খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছে ছবিটার। নজরুল তীর্থে হাউস ফুল হয়ে গিয়েছিল। মনে আছে একজন ভদ্রমহিলা যিনি আমার মায়ের বয়সি, আমার কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন যে তোমার চরিত্রটা কেন মেয়েটার কাছ থেকে চলে গেল? সেখান থেকেই বুঝতে পেরেছি সাধারণ মানুষকে এই ছবিটা কতটা ছুঁয়ে যেতে পারবে। আটলান্টা, এনএবিসি এবং কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমাদের ছবিটি নানান বিভাগে জিতেছে, এটা আমাদের কাছে বিশাল বড় পাওনা, এবং পার্সোনালি আমার মনে হয় এনএবিসি-তে সেরা অভিনেতা পাওয়াটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অ্যাচিভমেন্ট।
বিগত কয়েক মাস ধরে বাংলা সিনেমা যেভাবে দর্শকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, আবার সবাই যেভাবে বাংলা সিনেমাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সমর্থন করছেন, বাংলা সিনেমা দেখছেন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে খুবই আশাবাদী যে ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’ শুধু বাংলার দর্শকই নয়, প্যান ইন্ডিয়া অডিয়েন্স খুবই এনজয় করবে এই ছবি।’