৩ মাস পর ঘুম ভাঙল চিকিৎসকের জানেন না মা-বাবার মৃত্যুর খবর

ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ‘কোমার’ ঘোর কাটিয়ে আপাতত অনেকটাই স্বাভাবিক এম আর বাঙুর হাসপাতালের ডাক্তার।জুলাই মাসের ঘটনা।

Written by SNS Kolkata | November 13, 2021 4:33 pm

প্রতীকী ছবি (Photo: iStock)

মাস তিনেক আগে পথদুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন মা-বাবা। জানেন না অবস্তিকা। একই দুর্ঘটনা যে তাকেও ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। মাথায় আঘাত পেয়ে টানা ৬২ দিন ঘুমের দেশে ছিলেন এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অবস্তিকা পাল। ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ‘কোমার’ ঘোর কাটিয়ে আপাতত অনেকটাই স্বাভাবিক এম আর বাঙুর হাসপাতালের ডাক্তার। গত জুলাই মাসের ঘটনা।

দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনের বাসিন্দা ডা.অবস্তিকা পাল দুর্গাপুরে মামাবাড়ি গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গাড়িতে ফেরার পথেই মারাত্মক দুর্ঘটনা। মামা শিবশঙ্কর দত্ত জানিয়েছেন, গলসির কাছে জাতীয় সড়কের উপর মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মা মণিদীপা পাল , বাবা সুমন্ত পালের। মাথায় গুরুতর চোট পান অবস্তিকা।

প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। সেখান থেকে আরও এক নার্সিংহোম ঘুরে কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে। হাসপাতালের রিহ্যাবের ডিরেক্টর চিকিৎসক সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোমায় চলে গিয়েছিলেন অবস্তিকা।

গ্লাসগো কোমা স্কেল সূচক ছিল থ্রি-টি। চিকিৎসকরা বলছেন, অবস্তিকার জিসিএস স্কেলই বলে দিচ্ছিল, রোগীর হাল কেমন। ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ডা.অবস্তিকাকে যখন আনা হয়, মুখের চোয়াল ছিল বাবার টুকরো টুকরো। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ম্যান্ডিবুলার ফ্র্যাকচার। কোমরের বাঁ দিকের হাড় ভাঙা।

ডা.দীপেন্দ্র প্রধানের অধীনে প্রথম ভর্তি হন রোগী। চিকিৎসকরা বলেন, অপারেশন করে কী হবে? কতদিনই বা বাঁচবে। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন ডা সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়। অবস্তিকাকে নিয়ে আসেন নিউরো রিহ্যাবে। মুখের চোয়ালে অস্ত্রোপচারে না হলে রোগী মুখ খুলতে পারছিলেন না। শুরু করা যাচ্ছিল না কোমা স্টিমুলেশন প্রোগ্রাম।

চোয়াল মেরামতের পর চিকিৎসকের নজর ছিল, কীভাবে দ্রুত রোগীর ঘুম ভাঙানো যায়। এ কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডা সুচেতা সাহা, ডা.মধুশ্রী সেনগুপ্ত। সেপ্টেম্বরের শেষে প্রথমে একটা চোখ খোলেন। হালকা নাড়ান ডান হাতটা। ডা সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখে তখন যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। ধীরে ধীরে বের করা হয় ট্র্যাকিওস্টমি। তাও বড় সহজ ছিল না।

মানসিকভাবে ট্র্যাকিওস্টমির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। চলে একাধিক থেরাপি। যার মধ্যে ছিল, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, ল্যাঙ্গোয়েজ থেরাপি। আস্তে আস্তে কথা বলছেন অবস্তিকা।

আমার বাবা কোথায়? ওরা তো ভয়ঙ্কর বিপদে। মাঝেমধ্যেই বলে উঠছেন অবস্তিকা। ডা.সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, এই মুহূর্তে পোস্ট ট্রমাটিক অ্যামনেশিয়া ফেজে রয়েছে ও। আগামী ৮ মাসের মধ্যেই হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে পারবে।