• facebook
  • twitter
Friday, 2 May, 2025

শুধু চাকরিহারাদের কথাই কেন, ছাত্রছাত্রীদের কথাও তো ভাবতে হবে

তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমানে জেলবন্দি) ওটাকে তুচ্ছ টাইপিংয়ের ভুল বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান তো হয়ইনি, বরং কেসের সংখ্যা বাড়তে আরম্ভ করে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রবীর মজুমদার

৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমার প্রায় নজিরবিহীন এক রায়ে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ-দ্বাদশ, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক এবং গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মী নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করেছেন। স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির এবং কারচুপির অভিযোগ উঠলেও এইভাবে সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। স্বাভাবিকভাবেই এই রায়ের অভিঘাত আলোচনার এক বিশেষ অভিমুখ তৈরি করেছে।

একসঙ্গে এতজন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষায় এক অভূতপূর্ব সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনিতেই ২০১৬ সালের পর থেকে আর কোনো শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষা পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিতে পারেনি। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর অপ্রতুলতা প্রায় সব স্কুলেই। তার উপর হঠাৎ এতজন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী উধাও হয়ে যাওয়ায় স্কুলগুলোর পরিকাঠামো যে একবারে ভেঙে পড়েছে তা বলাই বাহুল্য। প্রশ্ন জাগে, এমতাবস্থায় নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া সরকারি স্কুলশিক্ষাকে টিকিয়ে রাখার উপায় কী?

অদ্ভুতভাবে দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে শিক্ষামন্ত্রী বা বিরোধী দলনেতা এবং সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়া বাম দলগুলিও এ প্রসঙ্গে নীরব। এঁদের যাবতীয় বক্তব্য বাতিল শিক্ষকদের ঘিরে। অথচ শিক্ষকের অভাবে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাও যে আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষ বাতিল করে দেবেন, সেই ভাবনায় কোনো দলই ভাবিত নয়। এরপর দেখা যাবে, যেখানে সুযোগ রয়েছে সেখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষও সাধ্যের বাইরে টাকা খরচ করে ছেলেমেয়ের জন্য বেসরকারি স্কুলশিক্ষাকেই বেছে নেবেন। মুখ্যমন্ত্রী এখন পর্যন্ত চাকরি যাওয়া শিক্ষকদের স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ার আবেদন করা ছাড়া স্কুলগুলো কীভাবে সচল থাকবে তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা বলেননি। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনের ভিত্তিতে তো কোনো ব্যবস্থা চলতে পারে না, বিশেষ করে যার সঙ্গে অধিকার জড়িয়ে আছে। শিক্ষার অধিকার যে সাংবিধানিক অধিকার তা কতজনের মনে আছে অবশ্য বলা মুশকিল। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দেওয়া বা দেওয়া ঐচ্ছিক। কিন্তু স্কুলশিক্ষা তো ঐচ্ছিক হতে পারে না!

জনস্বার্থ রক্ষা করা রাজনীতির অন্যতম প্রধান কাজ । চাকরি যাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে যোগ্যদের জন্য আন্দোলন করা যেমন রাজনৈতিক দলগুলির কাজ, তেমনই স্কুলশিক্ষার অন্যতম অংশীদার ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্যও আন্দোলন করা উচিত। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে গিয়ে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে বললেন, অন্যদিকে গত বুধবার জেলাভিত্তিক আন্দোলনে নেমে পুলিসের হাতে তাঁরা মার খেলেন। এভাবে এই সংকট কী করে কাটবে?

আজ সামনের দিকে তাকিয়ে সরকারি স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস আর অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখছি না। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। কী হল, কেন হল সেসব নিয়ে বহু আলোচনা, সমালোচনা হয়েছে, বিরাট বিরাট লেখা বেরিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো দিশা পাওয়া যায়নি। পাওয়ার কথাও ছিল না। রাজ্যের বুদ্ধিজীবীরা বা সমাজের অগ্রণী অংশের মানুষজন সব জেনে বুঝেও সমস্যার মূলটা সোচ্চারে বলতে বা লিখতে পারেননি।

সচেতন পশ্চিমবঙ্গবাসীর সংখ্যাটা লজ্জাজনক রকমের কম হলেও সমস্যাটা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন বা আছেন। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত এ ব্যাপারে কোর্টের কর্মকাণ্ডে চোখ রেখেছিলেন, তাঁরা ছাড়া আজকের রায় অনেকের কাছেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত মনে হচ্ছে। ফলে নানারকম ব্যাখ্যা, হাহুতাশ, রাগ, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা ইত্যাদিতে চারপাশ ভরে উঠছে।

ঘটনার শুরুটা আজ বা কাল নয়, অনেক আগে। ২০১৬ সালে রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন কয়েক ধাপে সরকারি স্কুলের জন্য সব স্তরে – অর্থাৎ পঞ্চম থেকে অষ্টম, নবম ও দশম এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। পরবর্তীকালে শিক্ষা কর্মী (গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি) নিয়োগের জন্যেও দুটো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

২০১১ সালের আগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এই এসএসসি পরীক্ষা প্রতিবছর হত। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগ ব্যাপারটা অনিয়মিত হয়ে পড়ে এবং ২০১৩ ও ২০১৪ সালে প্রাথমিক ও হাইস্কুলে যেসব নিয়োগ হয়, সেগুলো নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। যদিও বঙ্গবাসীর মধ্যে তা খুব একটা আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি , সেসব অভিযোগের সুরাহাও হয়নি। কিন্তু ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে স্কুলগুলোতে লক্ষ লক্ষ নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ফলে রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবসমাজ প্রবল উৎসাহে বিজ্ঞপ্তি বের হতেই ফর্ম পূরণের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই। সমস্যা শুরু হয় এর পর থেকে। বি এড ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং ওই ডিগ্রিবিহীন প্রার্থীদের সম্পর্কে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) সংস্থার নিয়ম আর এসএসসির বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য নিয়ে বেশকিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকেই চটজলদি এক সমাধান বলে দেওয়া হয়। তারপর ধাপে ধাপে প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো (টেট) সম্পন্ন হয় এবং সমস্যা ও অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। ভুল প্রশ্ন, ভুয়ো পরীক্ষার্থী, নজরদারিতে ইচ্ছাকৃত গাফিলতি, বিশেষ কিছু পরীক্ষার্থীকে সহায়তা ইত্যাদি নানাবিধ অভিযোগ ওঠে।

প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যায় টেট পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতেই। অনেক অনুত্তীর্ণ প্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হন উত্তরপত্র এবং প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশের দাবি নিয়ে। অদ্ভুতভাবে সেসময় আদালত দীর্ঘসূত্রিতায় আক্রান্ত হয় এবং মামলাগুলো অমীমাংসিত থাকা অবস্থাতেই ধাপে ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এদিকে মামলার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তারপর আদালতের রায়ে টেট পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায় বিচিত্র কাণ্ডকারখানা। কম পেয়ে উত্তীর্ণ আর বেশি পেয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর ছড়াছড়ি। ফলে সমস্যা জটিলতর আকার ধারণ করতে থাকে। কিন্তু তখনো আদালত চলছিল ধীর লয়ে। এর মধ্যেই চূড়ান্ত পর্বের ইন্টারভিউ সম্পন্ন হয় এবং চূড়ান্ত ফল প্রকাশ পায় ইন্টারনেটে। সেখানেও ভয়াবহ ভুলের ছড়াছড়ি। একটি খুব বিখ্যাত বা কুখ্যাত ভুল ছিল – চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরের পাশে নামের জায়গায় ‘xxx’ লেখা। না, ভুল পড়েননি। ‘xxx’-ই লেখা ছিল। দুর্জনে বলতে শুরু করে – ওটা বুক করা সিট, উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে নাম বসিবেক।

যদিও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমানে জেলবন্দি) ওটাকে তুচ্ছ টাইপিংয়ের ভুল বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান তো হয়ইনি, বরং কেসের সংখ্যা বাড়তে আরম্ভ করে। তারপর আদালতের আরও এক রায়ে চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত (নম্বর সহ) হলে দেখা যায় তালিকায় বহু গোলমাল। এই সময় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে। বিচারপতি বাগ ১,১০০ পাতার তদন্ত রিপোর্টে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লেখেন, স্কুলে নিয়োগের সব ক্ষেত্রে বিপুল দুর্নীতি হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু সিআইডি আদৌ কোনো তদন্ত করেছিল কিনা সে খবর রাজ্যের মানুষ আজও জানেন না। ইতিমধ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন এসে পড়ে। সেই নির্বাচনে শাসক দলের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল ক্ষমতায় এসেই স্কুলে নিয়োগ সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান। যদিও ভোটে জেতার পর ওসব কথা শাসক দল মনে রাখেনি।

বিপুল সংখ্যক প্রার্থী, যাঁরা প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী যোগ্য হয়েও ইন্টারভিউতে ডাক পাননি বা যাঁদের নিয়োগ হয়নি, তাঁরা উপায়ান্তর না দেখে কলকাতার রাস্তায় আমরণ অবস্থানে বসে যান। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এবং বর্তমানে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলাগুলোকে একত্র করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তের ফলে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির ছবি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে আরম্ভ করে। সেই সূত্রেই তৃণমূল সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং এসএসসির একাধিক কর্তাব্যক্তি গ্রেফতার হন। তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একের পর এক চাকরি বাতিলের রায় দেন এবং বিচারপতি অমৃতা সিনহা বারবার তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে দুর্নীতির শিকড় খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেইসব রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে এবং স্থগিতাদেশ পায়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঘটনাক্রমে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে পৌঁছয় এবং শেষ পর্যন্ত ৩রা এপ্রিলের নজিরবিহীন রায় দান।

এই বিচার চলাকালীন সময়ে একাধিকবার খুব সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল, ২০১৬ সালে নিযুক্ত সমস্ত প্রার্থীই তো আর অযোগ্য বা বেআইনিভাবে নিযুক্ত নন! যাঁরা নিজের মেধা, যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন তাঁরা কারা? কেনই বা তাঁরা অন্যদের অপরাধে শাস্তি পাবেন? নিশ্চিতভাবেই এই প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর মধ্যে যথেষ্ট যোগ্য, সৎভাবে নিযুক্ত প্রার্থী আছেন। সেই কারণেই বিচার চলাকালীন বারবার এসএসসি তথা রাজ্য সরকারের কাছে সেই যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা উত্তর দেয়নি। কেন দেয়নি?

যদি যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হত, তাহলে কিন্তু ঝুলি থেকে শুধু বেড়াল নয়; শেয়াল, কুকুর, গরু, গাধাও বেরিয়ে আসত। স্পষ্ট বোঝা যেত এই এদের মধ্যে কত শতাংশ বেআইনিভাবে নিযুক্ত। সাধারণ বুদ্ধি বলে, বেআইনি নিয়োগের পরিমাণটাই বেশি বলে এসএসসি যোগ্যদের তালিকা দেয়নি। তাতে কী লাভ? লাভ এই, যে এখন যে কোনো সংখ্যা বলে দেওয়া যাচ্ছে বেআইনি নিয়োগ হিসাবে। কেউ লিখছেন ২,০০০ আবার কেউ বলছেন কয়েকশো। যদিও তথ্য আসলে কারোর কাছেই নেই।

এরপর কি হবে তা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, এই রায় বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলবে? সামাজিক প্রভাব অত্যন্ত ভয়ানক হতে চলেছে। নিয়োগে যে অতলান্ত দুর্নীতি হয়েছে তা একাধিকবার আইনত এবং জনমনে প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে রাজ্যের হাজার হাজার স্কুলে। একদিকে প্রশাসনিক অস্থিরতা, অন্যদিকে শিক্ষক ঘাটতির আশঙ্কায় কাঁপছে স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা। স্কুল শিক্ষা দফতরের সাম্প্রতিক সমীক্ষা আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ স্তরে ধাক্কা ৩১২৫টি স্কুলে। প্রায় প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলেই অন্তত একজন কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। অনেক স্কুলে দুজন বা তারও বেশি সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। এর ফলে পঠন-পাঠন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কাজ—সব কিছুর উপরই ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক সংগঠন ও অভিভাবকেরা।

মনে রাখতে হবে, কোন শিক্ষক যোগ্য আর কে অযোগ্য তা বোঝা না গেলেও সমস্ত ছাত্রছাত্রীই কিন্তু যোগ্য, এবং সঠিক শিক্ষা পাওয়ার অধিকার এদের প্রত্যেকের আছে। আজ যদি সরকার এ বিষয়ে উদাসীন থাকে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি যদি এ বিষয়ে চুপ থাকে, বিশেষ করে বাম দলগুলি, তাহলে শহুরে এবং মফস্বলের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাধ্য হবে তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য মহার্ঘ শিক্ষা বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে কিনতে। বস্তুত তাতে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে, অনেকের লেখাপড়াই বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের লেখাপড়ার করার বয়সে প্রবাসী বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক হয়ে যাওয়ার দায় তখন কিন্তু কেবল সরকারের উপর চাপবে না। বিরোধীরা, বিশেষ করে বামেরা, নিজেদের দায় অস্বীকার করতে পারবেন না। মনে রাখতে হবে, শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকাঠামো, পুষ্টির মতো বিষয়গুলি রাজনীতির উপাদান নয়। তার সঙ্গে এক শিশুর সর্বাঙ্গীণ উন্নতির প্রশ্নটি জড়িয়ে থাকে। সেখানে যে কোনও প্রকার গাফিলতি অক্ষমণীয়।