মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যার তত্ত্ব তৃণমূলের, বিক্ষোভে বাম-কংগ্রেস

বুধবার রাজ্যপালের ভাষণের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর জবাবী বক্তব্যে রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে বাম ও কংগ্রেসের একজোট হওয়ার বার্তাকে বিকৃত করা হয়েছে।

Written by SNS Kolkata | June 28, 2019 1:45 pm

বিধানসভা থেকে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস দলের নেতারা একযােগে ওয়াকআউট করল। (Photo: IANS)

বুধবার রাজ্যপালের ভাষণের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর জবাবী বক্তব্যে রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের একজোট হওয়ার বার্তাকে বিকৃত করা হয়েছে। এই মর্মে বৃহস্পতিবার উল্লেখ পর্বেই ‘পয়েন্ট অফ ইনফরমেশন’ নিয়ে আসেন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য তাপস রায়।

তাঁর যুক্তি ছিল, দেশ ও রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে একসঙ্গে চলার আবেদন রাখতেই পারেন। কিন্তু তা নিয়ে বামফন্ট এবং কংগ্রেস বিধায়করা অপব্যখা করেছেন বলে দাবি করেন তাপসবাবু। এই প্রসঙ্গে সমালােচনা করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমেরও।

এরপরই ধুন্ধুমার বেধে যায় বিধানসভায়। এই ‘পয়েন্ট অফ ইনফরমেশন’কে চ্যালেঞ্জ করে ‘পয়েন্ট অফ অর্ডার’ আনতে চান বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। মমতার এই আবেদনকে গুরুত্বহীন বলেই মনে করেছেন লােকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী।

বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বিরােধীদের পাশে নেওয়ার আবেদন রাখার পর থেকেই তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস উভয়েই। সেই কটাক্ষের জবাব দিতেই বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে নতুন করে বিশ্লেষণ করতে ওঠেন তাপস রায়।

এই বিশ্লেষণকে ‘পয়েন্ট অফ ইনফরমেশন’ হিসেবে মানতে নারাজ হন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর এইভাবে কোনও মন্ত্রী ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। এই বিষয়ে আরও কিছু বলতে গেলে সে সুযােগ তাঁকে দেওয়া হয় না।

তাপসবাবু এরপর উচ্চগ্রামে তাঁকে বক্তব্য রাখতে নিরস্ত করতে চান। এরপর স্পিকারের আসনের দিকে তেড়ে যান সুজনবাবু। ধাক্কাধাক্কিতে একজন নিরাপত্তারক্ষী প্রায় পড়ে যান। এরপরই বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস দলের নেতারা একযােগে ওয়াকআউট করে।

তৃণমুলের পরিষদীয় নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে বিরােধীরা। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। বিজেরি সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে রাজ্যে অশান্তি লাগানাের সৃষ্টি করছে। যা জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে।

এই বিজেপিকে ঠেকাতেই অন্য বিরােধীদের সঙ্গে থাকার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন সময় এসেছে, সংবিধানকে বাঁচানাের, পরিস্থিতির মােকাবিলা করার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হল।

এরপর বৃহস্পতিবার সুজন চক্রবর্তীর মারমুখী ভূমিকায় বিধানসভার গরিমা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন পার্থবাবু। তিনি সুজনবাবুর বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ আনার দাবি করেন। সঙ্গে পার্থবাবু এটাও বলেন, স্পিকার অত্যন্ত সহনশীল। তিনি প্রিভিলেজ আনবেন কিনা, সেটা তাঁর ব্যাপার।

অন্যদিকে তাপসবাবু বলেন, স্পিকার অনুমতি দিয়েছে বলেই এই ‘পয়েন্ট অফ ইনফরমেশন’ এনেছি। বিধানসভার রুল বুক মেনেই এটা করা হয়েছে।

এদিকে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন আমার বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ এনে দেখান। যেভাবে বিধানসভা চালানাে হচ্ছে, তা একেবারেই আইনমাফিক নয়। আর মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনও সারবত্তা নেই বলে মন্তব্য করেন সুজনবাবু। লাে

কসভা নির্বাচনের আগে যে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসকে শেষ করে দিতে চাইতেন মুখ্যমন্ত্রী এখন তাদেরই হাত ধরতে চাইছেন। কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা আবদুল মান্নান বলেন, হিটলার, মুসােলিনীর বিদায়বেলার মতাে তাঁরও অবস্থা হবে।

এদিন অধীর চৌধুরীও বাম কংগ্রেস পাশে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার লড়াইয়ের আর্জি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, তিনি কি এই বিষয়ে সত্যিই সিরিয়াস? তাহলে তাে কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে হবে! পশ্চিমবাংলায় মমতাই হাত ধরে বিজেপিকে নিয়ে এসেছে। এখন বিপদ বুঝে অন্য কথা বলছেন।

এদিন বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার, কোনও পরিস্থিতিতেই তৃণমূলের সঙ্গে একসঙ্গে চলতে রাজি নয় তারা।