১৪ দিনের জেল হেফাজতে পার্থ-অর্পিতা

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতার কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই। ঘুষ দিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় চাকরি দিয়েছেন এমন কেউই বলেনি এখনও। এর কোনও প্রমাণও নেই।

Written by SNS Kolkata | August 6, 2022 4:10 pm

Partha, Arpita.

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বিশেষ আদালত জেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ১৪ দিনের জন্য ইডি’র হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে।

এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ে আসা হয় প্রিজন ভ্যান। ১১০ কেজি ওজনের পার্থকে প্রিজন ভ্যানে তোলার জন্য প্রথমে একটি কাঠের টুল আনা হয়।

কিন্তু সেই টুলের উচ্চতা বেশি থাকার জন্য পার্থর পক্ষে সেই টুলে ওঠা সম্ভব হয়নি। সেই সঙ্গে টুলটি ছিল নড়বড়ে, যা পার্থর ওজনে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা ছিল।

সে কারণে একটা ঠান্ডা পানীয় রাখার ক্রেট আনা হয়। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর এই ক্রেটের উপর পা দিয়ে প্রিজন ভ্যানে ঢোকেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। অর্পিতার বর্তমান ঠিকানা আলিপুর জেল।

এদিকে পার্থর জেল যাত্রা নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমার জেলজীবনে যা হয়েছিল, আমি যখন বলেছিলাম চক্রান্ত, তখন এই পার্থ এবং কেউ কেউ বলেছিলেন আমি নাকি পাগল। আমাকে দলবিরোধী বলা হয়েছিল। আর এখন উনি নিজেই টের পাবেন।’

এদিন ইডির আইনজীবী নিজেদের হেফাজতে রাখার আবেদন জানাননি, তবে জেলের মধ্যেও যেন ইডি জেরা চালিয়ে যেতে পারে সেই আবেদন রাখে ইডি।

এদিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির আর্জি গ্রহণ করে থাকে আদালত। ধৃত দুজনের ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।

গত ১২ দিন ধরে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হেফাজতে ছিলেন। তাঁদের এই ১২ দিন ধরে কখনও একটানা কখনও বা মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেছেন ইডি অফিসাররা।

শুক্রবার পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হলে তাঁদের ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ফের তোলা হয়। সেখানে ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে তাঁদের। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে চাইছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

এদিন আদালতে দাবি রাখেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় ‘প্রভাবশালী’ বলে দাবি করে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেছে ইডি। সেই অভিযোগকে নস্যাৎ করতেই পার্থ যে বিধায়ক পদও ছেড়ে দিতে তৈরি, এ দিন আদালতের সামনে দাবি করেন প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রীর আইনজীবী।

ইতিমধ্যেই মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। স্লীয় সব পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

এরফলে আপাতত শুধুমাত্র বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পদই রয়েছে পার্থর। জামিন পেতে সেই বিধায়ক পদ ছাড়তেও রাজি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী

প্রাক্তন মন্ত্রীর জামিনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে তাঁর আইনজীবী দাবি করেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় একজন সাধারণ মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই। তাঁর বয়সও ৭২ বছর।

ফলে জামিন পেলেও তিনি কোথাও পালিয়ে যাবেন, এমন আশঙ্কা নেই। সওয়াল করতে গিয়ে এ দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী দাবি করেন, এই ঘটনায় পার্থ নিজেই চক্রান্তের শিকার।

পার্থর বয়সের কথা উল্লেখ করে যে কোনও মূল্যে তাঁর জামিনের আর্জি জানান তাঁর আইনজীবী। যদিও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের বিরোধিতা করেন ইডি-র আইনজীবী।

জেল হেফাজতে রেখে পার্থ এবং অর্পিতাকে জেরা করা প্রয়োজন বলেও আর্জি জানায় ইডি। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ৩১টি এলআইসি-তে পার্থকে নমিনি করা ছিল, আদালতের সামনে সেই তথ্যও তুলে ধরেন ইডি-র আইনজীবী।

দু’পক্ষের সওয়াল শুনে ১৪ দিনের জেল হেফাজত নির্দেশ দেয় আদালত। শুক্রবার ব্যাংকশাল মাদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যাতে জামিন হয়ে যায় তার সম্পূর্ণ চেষ্টা করছেন তাঁর আইনজীবী।

আদালতে এদিন তিনি জানিয়েছেন, যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধায়ক পদও ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। তিনি সাধারণ মানুষ হয়েই থাকতে চান।

কিন্তু কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে এইভাবে আটকে রাখার কোনও অর্থ নেই বলেই দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী।

পাশাপাশি এও জানিয়েছেন যে, এলআইসির সব নথি ভুয়ো। আদালতে এদিন পার্থর আইনজীবীর দাবি, ‘যা উদ্ধার হয়েছে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে, এতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও যোগ নেই।

তাছাড়া যে ৩১টি এলআইসি পলিসির কথা বলা হচ্ছে তা ভুয়ো, কারণ রক্তের সম্পর্ক না থাকলে নমিনি করা যায় না।

এখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতার কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই। ঘুষ দিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় চাকরি দিয়েছেন এমন কেউই বলেনি এখনও। এর কোনও প্রমাণও নেই।

তা সত্ত্বেও পার্থ ইডির সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। ২২, ২৪ ঘণ্টা তাঁর বাড়িতে ইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

প্রমাণ ছাড়া কেউ কী ভাবে দোষী হতে পারে’, সেই প্রশ্নই তুলেছেন তিনি। আইনজীবীর আরও দাবি,’ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বয়স ৭২ বছর এবং তাঁর সব সময়ে ওষুধের প্রয়োজন। তাই তাঁর জামিন হওয়া খুব জরুরি।

প্রয়োজনে তিনি প্রভাবশালী তকমা ছেড়ে দিয়ে, বিধায়ক পদ ছেড়ে দিয়ে একেবারে সাধারণ হয়ে থাকবেন।

এই যুক্তিতেই তাঁর জামিন চেয়েছেন আইনজীবী। যদিও আদালত পার্থ চট্টপাধ্যায় সহ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ জারি করেছে।