পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টরের কাছে পাকিস্তানে আটক হওয়া ভারতীয় জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউ সুস্থ ও নিরাপদ আছেন। শনিবার সকালে এক্স হ্যান্ডলে এই তথ্য জানিয়েছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সকালে বিএসএফের ডিজির সঙ্গে কথা বলেন কল্যাণ। ডিজি জানান, পূর্ণম সুস্থ রয়েছেন। তাঁকে দেশে ফেরাতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এক্স হ্যান্ডলে কল্যাণ লিখেছেন, ‘পাকিস্তানে বন্দি ভারতের বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউকে নিয়ে সদ্যই বিএসএফের ডিজি’র সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ভারতীয় প্রশাসনিক মহল থেকে তাঁকে দেশে ফেরানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করা হচ্ছে। পাকিস্তান হয়তো কিছুটা সময় নিচ্ছে। কিন্তু ভারতের বিএসএফ জওয়ান ঠিকই ফিরবেন দেশে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ভালো আছেন পূর্ণম। তিনি শারীরিকভাবেও সুস্থ রয়েছেন।’
এদিকে পাকিস্তানের হাতে স্বামী বন্দি হয়েছেন খবর পাওয়ার পর থেকেই ঘুম উড়ে গিয়েছে পূর্ণমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর। দিশেহারা বৃদ্ধ বাবা-মাও। পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ সাউ বলেন, ‘ডিজির সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর কাছে আবেদন করছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। বৌমা ও স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আমারও মানসিক অবস্থা ভালো নয়। ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’
কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও পূর্ণমের কোনও খোঁজ না পাওয়ায় উৎকণ্ঠায় পরিবার। উপায় না দেখে রবিবার পাঠানকোটের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন সকলে। শুক্রবার রাতে পাঠানকোটে সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন রজনী। পাঠানকোটে যাওয়ার ব্যাপারে আর্জি জানিয়েছিলেন। সে ব্যাপারে সম্মতি জানানো হয়েছে সেনার তরফে। পূর্ণমের স্ত্রী রজনী বলেন, ‘পাঠানকোটে গিয়ে কোনও লাভ হবে কি না জানি না। তাও সামনে থেকে বিষয়টি বুঝতে পারব। ওখানে যদি কিছু না হয়, দিল্লিতে যাব। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে আবেদন করব ওঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য।’
প্রসঙ্গত, ২৪ এপ্রিল পাঞ্জাবেরর ফিরোজপুর সেক্টরে মোতায়েন ছিলেন বিএসএফের ১৮২ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্য পূর্ণমকুমার সাউ। সেই সময় ভুলবশত সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণমকে আটক করেন পাকিস্তানের রেঞ্জার্সরা। তাঁর মুক্তির জন্য বর্তমানে দুই বাহিনীর মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং চলেছে বলে খবর। পূর্ণমকুমার সাউকে দ্রুত ভারতে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।
ভুলবশত সেনা জওয়ান বা সাধারণ মানুষের সীমান্ত পেরোনোর ঘটনা আগেও হয়েছে। প্রোটোকল অনুযায়ী, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এই জাতীয় সমস্যার সমাধান হয়। প্রাথমিকভাবে আটক করা হলেও ছেড়ে দেওয়া হয়। কাশ্মীরের পহেলগামের কাণ্ডের পর পাকিস্তানের প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারত। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তানও। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই জওয়ানের মুক্তি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে হুগলির তৃণমূল নেতৃত্ব শুক্রবার ওই জওয়ানের রিষড়ার বাড়িতে যান। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরিন্দম গুই, রিষড়া পুরসভার চেয়ারম্যান বিজয়সাগর মিশ্র, হুগলি জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শুভদীপ মুখোপাধ্যায়রা পূর্নমকুমার সাউয়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকার ওই পরিবারের সঙ্গে সবসময় আছে। যে কোনও প্রয়োজনে রাজ্য সরকারকে পাওয়া যাবে।