২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একাই লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকতেই বিধানসভায় তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠকে জানিয়ে দিলেন মমতা। দুই–তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে ফের তৃণমূলই বাংলার ক্ষমতায় ফিরবে বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন, সংগঠনে তিনিই শেষকথা বলবেন। তাঁর সাফ কথা, দলে থাকতে হলে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যে মানবে না তাঁকে কোনওভাবেই রেয়াত করা হবে না।
বৈঠকে মমতা জানিয়ে দেন, ২০২৬ সালের ভোটে দুই তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে তৃণমূল কংগ্রেস। চতুর্থবারের জন্য বাংলার মসনদে ক্ষমতায় ফেরা প্রসঙ্গে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যেই বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাংলার শাসকদল। নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিধায়কদের কী কী করতে হবে সেই বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বসিত বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিল্লিতে বিজেপির উত্থান বাংলার নেতৃত্বকে আলাদা অক্সিজেন দেবে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। এর নেতিবাচক প্রভাব যাতে তৃণমূল বিধায়কদের উপর না পড়ে সেই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধায়কদের আরও আত্মবিশ্বাসী হতে বলেছেন তিনি। পাশাপাশি দলীয় বিধায়কদের সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা। তাঁর দাবি, ভোটে জেতার জন্য বিজেপি ভিন রাজ্যের ভোটারদের ভোটার তালিকায় নাম তুলে দিতে পারে। এই নিয়ে আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
অপরদিকে, আদি তৃণমূল ও নব্য তৃণমূলের মধ্যে ঝামেলা ইস্যুতে ফের বার্তা দিয়েছেন মমতা। দলের মধ্যেই এখন অনেক নতুন নেতাদের উত্থান ঘটেছে, যাঁরা মূলত অভিষেকপন্থী হিসেবেই পরিচিত। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে মতভেদ দেখা যায় নেতা মন্ত্রীদের মধ্যে। আর এই সব সংঘাত মেটাতেই ফের কড়া নির্দেশ দিলেন মমতা। ফের একবার তিনি মনে করিয়ে দিলেন, দলে তিনিই সর্বেসর্বা। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, অনেকে বার বার ভুল করছে আবার বারবার ক্ষমা চাইছে। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। বার বার ভুল করলে আর ক্ষমা করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সোমবার বিধানসভায় শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশন। এই অধিবেশন শুরুর আগে পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত, দলের অন্দরে কোনও রদবদল প্রয়োজন কি না, অথবা ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনের রণনীতি কী হবে এই সব সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।
২০২৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা ভোট। বৈঠকে এই বিষয়টি সকলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ঐক্যবদ্ধভাবে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে দলের নেতা–কর্মীদের আরও বেশি করে সংগঠনের কাজে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুথে বুথে কাজে আরও বেশি করে জোর দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। দলের পুরনো নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দলের অনুমতি ছাড়া কোনও বেফাঁস মন্তব্য করা যাবে না বলে মন্ত্রী থেকে বিধায়ক সকলকে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বারংবার এই কাজ কেউ করলে তাঁকে ক্ষমা করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এদিন বৈঠক চলাকালীন বর্ধমানের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের একটি কার্যালয় নিয়ে সমস্যা সমাধান করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সম্প্রতি দলবিরোধী মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। আইপ্যাক ইস্যুতে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এই কারণে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে তাঁকে। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধেও মাঝে মধ্যেই দলবিরোধী মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও আরও কয়েকজন বিধায়ক–মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। এদিনের বৈঠকে সরাসরি কারও নাম না করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত এদিন সকলকে সতর্ক করে দিয়েছে। এই নির্দেশ না মানলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে, সে যেই হোন না কেন।
নির্বাচনের আগে বিধায়ক–মন্ত্রীদের আরও বেশি করে জনসংযোগ করার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইটাহারে কর্মীদের সঙ্গে বসে ১২/১৪ ঘণ্টা জনসংযোগ করেন বিধায়ক মোশারেফ হোসেন। এদিনের বৈঠকে তাঁর উদাহরণ তুলে ধরে তাঁর থেকে বাকিদের শেখার অনুরোধ জানালেন।
এদিনের বৈঠক থেকে কয়েকজন বিধায়ককে ধমকও দেন মমতা। জামুরিয়ার বিধায়ক নরেন চট্টোপাধ্যায় ও আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়কে ধমক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের নিজেদের ঝামেলায় তো কান পাতা দায়। নিজেদের দ্বন্দ্ব মেটান।’ অপরদিকে মালদহে সাবিনা ইয়াসমিন ও রহিম বক্সিকে ধমক দিয়ে অবিলম্বে নিজেদের ঝামেলা মেটানোর নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সদ্য হওয়া দিল্লির নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও বৈঠকে সুর চড়িয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তিনি কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর দাবি, কংগ্রেস সমঝোতার পথে এলে এমনটা হত না। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গে ফের তৃণমূলই যে ক্ষমতায় আসবে, তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মমতা। তাঁর দাবি, বাংলায় একা লড়াই করে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল।