দু’সপ্তাহের জন্য সিল করে দেওয়া হল কলকাতা ও সল্টলেকের কিছু এলাকা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে লকডাউনকেই প্রধান হাতিয়ার করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে হটস্পট এলাকা ধরে র‍্যাপিড টেস্ট।

Written by Debashis Das Kolkata | April 19, 2020 5:45 pm

দু'সপ্তাহের জন্য সিল করে দেওয়া হল বেগবাগান সংলগ্ন এলাকা। (Image: Twitter / @KPSouthDiv- DCP South Kolkata)

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে লকডাউনকেই প্রধান হাতিয়ার করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে হটস্পট এলাকা ধরে র‍্যাপিড টেস্ট। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছে এরাজ্যে হটস্পট বলে কিছু নেই। বেশ কয়েকটি এলাকার ওপর বাড়তি নজরদারি রয়েছে।

তবে জানা গিয়েছে, কলকাতা ও সল্টলেকের বেশ কয়েকটি এলাকা স্পর্শকাতর। সেকথা মাথায় রেখে শনিবার রাত থেকে দু’সপ্তাহের জন্য কেশ কিছু এলাকা সিল করে দেওয়া হবে এমনটাই জানা যাচ্ছে। এই দু’সপ্তাহ এই এলাকাগুলি থেকে কাউকে ঢুকতে এবং বেরোতে দেওয়া হবে না।

ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে গড়ে তোলা হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় নতুন করে বাজার তৈরি হয়েছে। সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এইসব এলাকায় পুলিশের নজরদারি আগের থেকে বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। তবে, মানুষজনের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর যাতে অসুবিধা না হয় সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এইসব এলাকায় বিশেষ নজরদারির জন্য কলকাতা পুলিশের ডিসি পদমর্যাদার অফিসাররা থাকছেন।

যেসব এলাকাগুলি দু’সপ্তাহের জন্য আপাতত সিল করে দেওয়া হচ্ছে সেগুলি হল—

সল্টলেক
৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ইডি, ইই, ডিএল, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের এএ, এবি, এসি, এডি, বিবি, বিসি, বিডি।

উত্তর কলকাতা
বেলগাছিয়া এবং দত্তবাগান সংলগ্ন এলাকা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের টালা, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাগবাজার সংলগ্ন এলাকা, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের নারকেলডাঙ্গা, ফুলবাগান, কাঁকুরগাছি সংলগ্ন এলাকা।

উত্তর ও মধ্য কলকাতা
৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেলেঘাটা, শিয়ালদা এবং রাজাবাজার সংলগ্ন এলাকা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাজার এবং কলুটোলা সংলগ্ন এলাকা, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বউবাজার এবং শিয়ালদা সংলগ্ন এলাকা, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালতলা এবং মৌলালী সংলগ্ন এলাকা, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিয়ালদা এবং এন্টালি সংলগ্ন এলাকা।

মধ্য-পূর্ব কলকাতা
৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস এবং বেগবাগান সংলগ্ন এলাকা।

উত্তর-পূর্ব কলকাতা
৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের ট্যাংরা, ধাপা এবং ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ড সংলগ্ন এলাকা।

দক্ষিণ কলকাতা
৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের ট্যাংরা (যেটি মধ্য কলকাতার মধ্যে অবস্থিত) এবং তপশিয়া, সায়েন্স সিটি, ফোরাম অ্যাটমসফিয়ার এবং তিলজলা সংলগ্ন এলাকা। ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের বালিগঞ্জ এবং বেগবাগান সংলগ্ন এলাকা। ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডের খিদিরপুর সংলগ্ন এলাকা। ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ আলিপুর, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড সংলগ্ন এলাকা। ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালীঘাট সংলগ্ন এলাকা। ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের বালিগঞ্জ, রবীন্দ্র সরোবর এবং ঢাকুরিয়া সংলগ্ন এলাকা। ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের হালতু, সন্তোষপুর, অজয়নগর, হাইল্যান্ড পার্ক, চকগড়িয়া। ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডের টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড-নিউ আলিপুর সংলগ্ন এলাকা। ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেহালা সংলগ্ন এলাকা।

সম্প্রতি দেশের ১৭০’টি জেলাতে সংক্রমণের হটস্পট বলে চিহ্নিত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া সহ চারটি জেলা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের মোট করোনা আক্রান্তের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি হওড়ার বাসিন্দা। হাওড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি বলে সেখানে নমুনা পরীক্ষাও বেশি।

হওড়াতে ইতিমধ্যে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হাওড়ার একাধিক স্পর্শকাতর এলাকাগুলি সম্পূর্ণ সিল করে দেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। চলছে নাকাচেকিং। এবার কলকাতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিল করে দেওয়া হচ্ছে করোনা সংক্রমণকে রুখে দেওয়ার জন্য।

ইতিমধ্যে এই নিয়ে কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া অকারণে যাতে বাইরে না বেরোন তার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় পুলিশি তৎপরতা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাস্তায় নেমে জনগণকে সচেতনতা করেছে সেই সঙ্গে নিজেও মাস্ক বিতরণ করছেন।

শনিবার কলকাতা পুলিশের কমিশনার অনুজ শর্মা থেকে শুরু করে পুলিশের আরও বেশ কয়েকজন আধিকারিককে দেখা যায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাস্ক বিতরণ করতে। এই ছবি ধরা পড়েছে বেলগাছিয়ায়ও। বেলগাছিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকা ডিএস, ইএসডি, ওসি উল্টোডাঙ্গা এক হাজারেরও বেশি মাস্ক বিতরণ করেন আমজনতার মধ্যে। আড়াই হাজার সাবানও বিতরণ করা হয়। সেই সঙ্গে সম্প্রীতির নজির হিসেবে বেলগাছিয়ায় পুরোহিত ও ইমাম একসঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন এই ছবিও দেখা গিয়েছে শহর কলকাতায়।