বাজেট অধিবেশন চলাকালীনই রাজ্যে ভুয়ো ভোটার নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন তিনি। ভোটার তালিকা কারচুপি–মুক্ত রাখতে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গড়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন, প্রতিটি ব্লকে কোর কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিগুলি রাজ্য কমিটিকে রিপোর্ট দেবে। তৃণমূল সুপ্রিমোর অভিযোগ, ভুতুড়ে ভোটারের মাধ্যমে বাংলা দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি। কোনোভাবেই যাতে গেরুয়া শিবিরের এই প্রচেষ্টা সফল না হয়, সেই দিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের মহা সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলায় ভোটার লিস্টে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ভোটার লিস্ট পরিষ্কার করার বার্তা দিয়েছেন তিনি। গেরুয়া শিবিরের চক্রান্ত ফাঁস করে নেত্রীর অভিযোগ, অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডস ও কোম্পানি ইন্ডিয়া ৩৬০— এই দুটি এজেন্সিকে দিয়ে অনলাইনে এসব কাজ করানো হচ্ছে। এর সঙ্গে কয়েকজন বিএলআরও–ও জড়িত রয়েছেন। বাংলার মানুষ যাতে ভোট দিতে না পারে তাই একই এপিক কার্ডে বাইরের লোকের নাম তোলা হয়েছে। হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, বিহারের ভোটার বাড়ানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের ভোটারগুলিকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এই বলে মুর্শিদাবাদের নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা।
মমতার আরও অভিযোগ, ইলেকশন কমিশনের অফিসে বসে বাংলার ভোটার তালিকায় কারচুপি করা হয়েছে। এই একই পদ্ধতিতে দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। তাই বিধানসভা নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করে দিলেন মমতা। ভোটার তালিকা দেখে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এমনকী ডেটা অপারেটরদের উপরও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তালিকা থেকে ভূতুড়ে ভোটার চিহ্নিত করতে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এই কমিটিতে থাকছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়, ফিরহাদ হাকিম, দেবাংশু ভট্টাচার্য্য, বাপি হালদার, জগদীশ বাসুুনিয়া, সুমন কাঞ্জিলাল, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়া-সহ একাধিক শীর্ষ নেতা। এই কমিটিকে ১০ দিনের ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছেন মমতা। এছাড়াও জেলাতেও কোর কমিটি গঠন করে নজরদারি চালানো হবে। জেলার কমিটিগুলি রাজ্য কমিটিকে রিপোর্ট পাঠাবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ করবে রাজ্য কমিটি।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে একাধিক বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফের একবার ‘খেলা হবে’ স্লোগান তুলে রাজনৈতিক ময়দানে লড়াইয়ের বার্তা দিলেন তিনি। নির্বাচনের অনেক আগেই তিনি বেঁধে দিলেন দলের টার্গেট। তাঁর বার্তা, ২১৫টা আসন পেতেই হবে। এর কম যেন কোনও মতেই না হয়। আরও বেশি আসন পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এদিন তিনি একযোগে আক্রমণ করেছেন বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএমকে। এই রাজনৈতিক দলগুলির জামানত জব্দ করার বার্তাও দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
রাজ্য সম্মেলন থেকে মমতা বলেছেন, বিজেপির আয়ু ২–৪ বছরের বেশি নেই। তাই বাংলাকে টার্গেট করেছেন তাঁরা। এই নিয়ে দলের নেতা কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনের আগে আর সময় নষ্ট না করার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘যাঁরা ভালো কাজ করেন তাঁদের পদোন্নতি হবে। যাঁরা মানুষের পাশে নেই তাঁদের উপর আমার দয়া মায়া নেই।’
তৃণমূলের সম্মেলনে মমতার বক্তব্যে উঠে আসে আরজি কর প্রসঙ্গ। এখনও পর্যন্ত আরজি করের কেসটি সমাধান করতে না পারায় সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তিনি। তাঁর আরও অভিযোগ, ইডি, সিবিআই ইত্যাদি কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখায় বিজেপি। বলে দেওয়া হয় কোন কোন খবর চলবে। ভোটের আগেই চার্জশিট পেশ করা হয়। টাকা ও এজেন্সির জোরে বিজেপি মিথ্যা মামলা করে।
রাজ্য কমিটিতে যাঁরা রয়েছেন
সুব্রত বক্সী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম,
মানস ভুঁইয়া, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, বীরবাহা হাঁসদা, দেবাংশু ভট্টাচার্য, সায়নী ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, সব্যসাচী দত্ত, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত বসু, মলয় ঘটক, ডেরেক ও’ব্রায়েন, উদয়ন গুহ,
বিপ্লব মিত্র, বেচারাম মান্না, মমতাবালা ঠাকুর, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলচন্দ্র রায়, সুমন কাঞ্জিলাল, অর্পিতা ঘোষ, সামিরুল ইসলাম, বাপি হালদার, পুলক রায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য,
মালা রায়, জগদীশ বর্মা বসুনিয়া, মোশারফ হোসেন, প্রকাশ চিক বরাইক, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়,
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু ও তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।