হিন্দু ধর্মকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ বলে দাবি করে পরিবেশগত কারণ দেখিয়ে ভারতের মুসলিমদের সূর্য নমস্কার ও নদী পুজো করা উচিত— এমন মন্তব্য করে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিলেন আরএসএস নেতা দত্তাত্রেয় হোসাবেল। উত্তরপ্রদেশের সন্ত কবীর নগরে সংঘের একটি সভায় তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহল ও সামাজিক স্তরে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবারের ওই সভায় হোসাবেল বলেন, ‘মুসলিম ভাইরা যদি সূর্য নমস্কার করেন, তাতে ক্ষতি কী? এতে তো তাঁদের মসজিদে যাওয়া বন্ধ করা হচ্ছে না।’ তাঁর দাবি, সূর্য নমস্কার যোগার অঙ্গ, যা বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।
Advertisement
আরএসএস নেতা আরও বলেন, ‘যাঁরা নামাজ পড়েন, তাঁরা যদি প্রাণায়াম করেন, তাতে কোনও ভুল নেই। আমরা তো বলছি না, যোগ করলে নামাজ ছেড়ে দিতে হবে।’ তাঁর মতে, হিন্দু দর্শন মানুষসহ সমস্ত জীবের প্রতি অহিংসার বার্তা দেয় এবং সেখান থেকেই এই ভাবনা উঠে আসে।
Advertisement
এই বক্তব্যের পাশাপাশি দত্তাত্রেয় হোসাবেল সংবিধান থেকেও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থার সময় এই শব্দগুলি সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে খোলা বিতর্ক হওয়া উচিত বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
আরএসএস নেতার এই মন্তব্যের পরেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধীদের প্রশ্ন, মুসলিমরা সূর্য নমস্কার বা কোনও ধর্মীয় আচার পালন করবেন কি না, তা ঠিক করার অধিকার কোনও সংগঠন বা নেতার আছে কি না। নামাজ পড়া বা মসজিদে যাওয়ার প্রসঙ্গই বা কেন তোলা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বিদেশি লেখক সলমন রুশদির সমালোচনার প্রেক্ষিতেই এই মন্তব্য করেছেন হোসাবেল। প্রসঙ্গত, ‘স্যাটনিক ভার্সেসে’র লেখক রুশদি সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘হিন্দুরা ভাল আর মুসলিমরা খারাপ— এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করতেই ইতিহাস লেখার চেষ্টা চলছে।’ সেই প্রসঙ্গ টেনেই অনেকে মনে করছেন, আরএসএস নেতা বলতে চেয়েছেন, হিন্দু সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে মুসলিমদের কোনও ক্ষতি হবে না। তবে তাঁর বক্তব্যে ধর্মীয় সহাবস্থানের বদলে বিভাজনের সুরই বেশি স্পষ্ট— এমনটাই দাবি সমালোচকদের।
Advertisement



