ফের শিরোনামে যাদবপুর

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক, ফের শিরােনামে এল বিশ্ববিদ্যালয়।

Written by SNS Kolkata | September 20, 2019 1:06 pm

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। (Photo: IANS)

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক, ফের শিরােনামে এল বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সমর্থকদের হাতে বেনজিরভাবে হেনস্থা হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ধস্তাধস্তি থেকে শুরু করে জামা টেনে ছিঁড়ে দেওয়া, এমনকি মারধরও করা হয়েছে বলে অভিযােগ। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আটকে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

তাঁর দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার খবর পাওয়ামাত্রই দ্রুত প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল। এরপরও অবস্থা স্বাভাবিক না হলে রাজ্যপাল পৌঁছন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বাবুল সুপ্রিয়কে নিজের গাড়ি করে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে রাজ্যপালের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ছাত্র সংগঠন। রাজ্যপালের গাড়িতে চাপড়, ঘুসি মারার দৃশ্যও ধরা পড়ে।

এদিন দুপুরে এবিভিপি’র একটি অনুষ্ঠানে যােগ দিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করার সময়ই তাঁকে ঘিরে প্রবল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়য়ারা। কোনওভাবেই বাবুলকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে শুরু করে চিৎকার চেঁচামেচি। ওঠে ‘বাবুল সুপ্রিয় গাে ব্যাক’ স্লোগানও। কেন্দ্রীয় এই মন্ত্রী ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। জামা ধরে টানাটানি করা হয় বলেও অভিযােগ।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তিনি বাবুল সুপ্রিয়কে তার ঘরে নিয়ে যেতে চান। যদিও উপাচার্যের একথা প্রত্যাখ্যান করে বাবুল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, তিনি যে অনুষ্ঠানের জন্য এখানে এসেছেন, সেখানেই যাবেন। চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। অভিযােগ তাঁর পরামর্শ উপেক্ষা করেই বাবুলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বামপন্থী ছাত্ররা। ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি কিল, চড় মারা হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। ক্ষমা না চাইলে কোনওভাবেই তিনি ক্যাম্পাস ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন বাবুল।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে হেস্থার ঘটনার কথা জানার পরই উপাচার্যকে ফোন করেন ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এভাবে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অটকে রাখা যায় না। প্রয়ােজন হলে উপাচার্যকে পুলিশি সাহায্য নেওয়ার কথা বলেন তিনি। যদিও রাজ্যপালের পুলিশি সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন উপাচার্য। ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকলে পরিস্থিতি আরও আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে বলে জানান তিনি। জানা যায়, এরপরই রাজাপাল ফোন করেন মুখ্যসচিবকে। এবিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তির জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে। শুধু তাই নয়, এই পরিস্থিতির বিষয়ে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন বলে জানা গেছে। রাজভবনের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয় যাদবপুর কাণ্ড নিয়ে। জানা যায়, বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে। পাশাপাশি, আইনরক্ষাকারী সংস্থাগুলি কীভাবে কাজ করছে, এ নিয়েও প্রশ্ন তােলা হয়।

দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আটকে থাকায় সন্ধেবেলা নিজেই গাড়ি নিয়ে রওনা দেন রাজ্যপাল। ক্যাম্পাসে ঢুকে তাঁর দেহরক্ষী ও পুলিশের সাহায্য নিয়ে বাবুল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসি ক্যান্টিনের সামনে যেখানে বাবুলকে আটকে রাখা হয়েছিল, রাজ্যপাল হেঁটেই সেখানে পৌঁছে যান। বাবুলকে তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসতে বলেন। তিনি আগলে নিয়ে বাবুলকে নিজের গাড়িতেও তােলেন।

যদিও এই ঘটনার পরও তাঁরা ক্যাম্পাসের বাইরে বেরােতে পারেননি। একদল বিক্ষোভকারী ছাত্র রাজ্যপালের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। একই সঙ্গে রাজ্যপালের গাড়ির উপর চাপড় মারতেও দেখা যায়। বিক্ষোভত পড়ুয়াদের। পড়ুয়ারা বলেন, গাড়ি নিয়ে বেরােতে গেলে তাঁদের চাপা দিয়ে যেতে হবে।

এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের মধ্যে ৪ নম্বর গেটের সামনে থাকা ইউনিয়ন রুমে ভাঙচুর করেন এবিভিপি’র সদস্যরা বলে অভিযােগ। ক্যারাম বাের্ড থেকে কম্পিউটার এবং ইউনিয়ন রুমের ফ্যান থেকে আলমারি ভাঙচুর করা হয়। দেওয়ালে লিখে দেওয়া হয়েছে এবিভিপি।

প্রায় ১ ঘণ্টা আটকে থাকার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজ্যপালের কনভয় নিরাপদে বের করতে সক্ষম হয় পুলিশ। কার্যত বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের চোঁখে ধুলাে দিয়ে রাজ্যপালের কনভয় ৪ নম্বর গেট দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। তিন নম্বর গেট দিয়ে রাজ্যপালের কনভয় বেরােনাের কথা ছিল। কিন্তু কনভয়ের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন পড়ুয়ারা। ঘণ্টাখানেক ধরে আটকে থাকে রাজ্যপালের কনভয়। সামনে বিক্ষোভকারীরা থাকলেও গাড়িটির পিছনে ছিল রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশবাহিনী, ফলে রাজ্যপালের গাড়িটি ঘুরিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি ৪ নম্বর গেট দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।