রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০

রাজ্যে করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০। গত ২৪ ঘন্টায় ২৪ জনের সংক্রমণ হয়েছে। এই মুহূর্তে অ্যাক্টিভ করোনা রোগির সংখ্যা ১৪৪।

Written by SNS Kolkata | April 17, 2020 6:08 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

রাজ্যে করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০। গত ২৪ ঘন্টায় ২৪ জনের সংক্রমণ হয়েছে। এই মুহূর্তে অ্যাক্টিভ করোনা রোগির সংখ্যা ১৪৪। গত চব্বিশ ঘন্টায় ছাড়া পেয়েছেন ৯ জন। এখনও পর্যন্ত মোট ৫১ জন রোগি করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানালেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় পশ্চিমবঙ্গে করোনায় সংক্রামিত হয়েছে ১৮ জন। ফলে বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৩১ জন। চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন ৪২ জন। করোনায় মৃতের সংখ্যা বাদ দিলে স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী অ্যাক্টিভ করোনা রোগির সংখ্যা ১৮২ জন।

এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে অ্যাক্টিভ করানা রোগির সংখ্যা নিয়ে কেন্দ্র রাজ্যের মধ্যে ফারাকটা থেকেই যাচ্ছে। এই ফারাকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যসচিব জানিয়ে দেন করোনায় আক্রান্তের খবর এলে তা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের ড্যাশবোর্ডে তৎক্ষণাৎ আপডেট হয়ে যায়।

করোনা আক্রান্ত হয়ে করোনা সন্দেহে কারও মৃত্যু হলে, সেই কেল চলে যায় স্বাস্থ্য দফতরের অডিট কমিটির কাছে। কাদের অ্যাক্টিভ করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেয় অডিট কমিটি। মুখ্যসচিব জানিয়ে দেন এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কিছু বক্তব্য থাকে না।

বৃহস্পতিবার করোনায় বিশ্ব উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রখ্যাত ডাক্তার সুকুমার মুখার্জি বলেন, ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয় কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। একটিকে বলা হয় ইমিডিয়েট কজ অফ ডেথ। সেখানে রোগির কোনও কো মরবডিটি অর্থাৎ হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, হাইপারটেনশন কিংবা হাই ডায়াবেটিস থাকলে, মৃত্যুর কারণ হিসেবে সেটাই লেখা হয়।

আবার অ্যান্টিসিডেন্ট কজ অফ ডেথ-এর সূচকটি ধরলে সেখানে নিউমোনিয়া, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস (সারি) কিংবা এআরডিএস থাকলে সেগুলিকে কোডিভ সংক্রমণের লক্ষণ বলে ধরা যেতে পারে। এছাড়া অন্য কিছু আন্ডারলাইন ডিজিজের জন্যও ডেথ হতে পারে।

তাই ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সিদ্ধান্তই গুরুত্ব পাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ডা. সুকুমার মুখার্জি। এদিন তিনি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ কাদের নেওয়া উচিত সেই বিষয়েও কিছু পরামর্শ দেন। যেসব ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত, তারা এই ওষুধ ডাক্তারের নির্দিষ্ট করে দেওয়া ডোজ অনুযায়ী খেতে পারেন। আর যারা করোনা আক্রান্ত রোগিদের সংস্পর্শে এসেছেন, তারাও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিতে পারেন। তবে এই ওষুধ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের চোখের কিংবা হার্টের কোনও কমপ্লেক্স অসুখ আছে কিনা দেখে নিতে হবে।

মুখ্যসচিব এদিন বলেন, স্বাস্থ্য বিষয়টি এমনিতে রাজ্য সরকারের আওতায় থাকলেও কোভিড ১৯ অতিমারি একটি জাতীয় বিপর্যয়। তাই এখানে কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথভাবে কাজ করছে। কেন্দ্র নির্দেশ দেবে, রাজ্য সেইমত কাজ করবে, বিষয়টা এরকম নয়। করোনা প্রতিরোধে যা কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার আছে সেটা সকলের মতামত নিয়েই করা হচ্ছে। এর জন্য উপদেষ্টা কমিটিও রয়েছে।

মুখ্যসচিব এদিন জানান, রাজ্যে মোট করোনা টেস্টের সংখ্যা ৩৮১১। যেখান থেকে বেশি কেস আসছে, সেখান থেকে যাতে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে না যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাজীব সিনহা এদিন বলেন, এই মুহুর্তে রাজ্যে ৫৮২’টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার আছে। এর মধ্যে সরকারি কোয়ারেন্টাইনে আছে ৩৯১৫ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে ৩৬,৯৮৩ জন।

মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, কোথাও কোথাও ব্যাঙ্কগুলির জন্য সোস্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখতে অসুবিধে হচ্ছে। অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে দেওয়ার সংবাদ জানিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে বহু মানুষকে এসএমএস করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বহু মানুষ ব্যাঙ্কে চলে আসছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনেরও কোনও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে না।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন মুখ্যসচিবরে দায়িত্ব দেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে, যাতে ছোট গ্রুপ করে উপভোক্তাদের ডাকা হয়। লকডাউনকে কঠোরভাবে মেনে চলা এবং মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক ও সচেতন থাকতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।