কেরল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রহস্যজনকভাবে খুন হলেন আলিপুরদুয়ারের এক পরিযায়ী শ্রমিক। মুখে পাথর গুঁজে গলায় ফাঁস দিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম হাঞ্জালা ফিরদৌস (২১), বাড়ি আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটার ময়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের লছমনডাবরি গ্রামে। শুক্রবার ওড়িশার গঞ্জাম জেলা থেকে উদ্ধার হয় ওই যুবকের মৃতদেহ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় মাস আগে রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য কেরল গিয়েছিলেন হাঞ্জালা। গত ১২ অক্টোবর কেরল থেকে ট্রেনে চেপে বাড়ি ফেরার পথে রওনা দেন তিনি। ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় পরিবারের সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা হয় তাঁর। তখনও তিনি ট্রেনেই ছিলেন। এরপর থেকে আর যোগাযোগ করা যায়নি। হাঞ্জালার ফোন বন্ধ থাকায় পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় হাঞ্জালার পরিবার স্থানীয় জিআরপি থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করে। অবশেষে ২৫ অক্টোবর, শুক্রবার খবর আসে, ওড়িশার গঞ্জাম জেলার ভুবনেশ্বর সংলগ্ন এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। পরে ওড়িশা পুলিশ মৃতদেহের ছবি পাঠালে পরিবারের সদস্যরা তা শনাক্ত করেন।
পরিবারের দাবি, হাঞ্জালাকে খুন করা হয়েছে। তাঁর মুখে পাথর গুঁজে দেওয়া হয়েছিল এবং গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানো ছিল। তবে কী কারণে এই খুন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ব্যক্তিগত শত্রুতা নাকি লুটপাটের উদ্দেশ্য, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মৃতের মাসি নুরজাহান বেগম বলেন, ‘ওড়িশা থানার কাছ থেকে আমরা জেনেছি, হাঞ্জালাকে খুন করা হয়েছে। আমরা সিআইডি তদন্ত দাবি করছি। ভিনরাজ্যে গিয়ে এভাবে বাংলার শ্রমিকরা অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।’
হাঞ্জালার মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ তাঁর পরিবার। বাড়িতে রয়েছেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে মৃতদেহ আনতে ওড়িশার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আতিয়ুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার ন্যায়বিচার চাই। সিআইডি তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী জানিয়েছেন, ‘ওই যুবক কয়েক দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। এখন মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। পরিবারের পাশে থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে।’ এই ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।
Advertisement