• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

‘বেঙ্গল ফাইলস’ সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে বাংলায় ; প্রতিবাদে সরব গণমঞ্চ

টিজারেই তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে৷ ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে সম্পূর্ণ সিনেমা জুড়ে। এমনকি বাঙালিদের প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজোকেও বিকৃত করা হয়েছে৷

নিজস্ব চিত্র

আগামী ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। রাজ্যের শাসক দল বিরোধী দলগুলিকে কোনওক্রমেই জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু বিরোধী দলগুলিও মেহনতে কোনও কসুর করছে না৷ বিশেষ করে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি তো একেবারেই করছে না৷ বাংলায় পসার জমাতে না পেরে অন্য কায়দা অবলম্বন করেছে বিজেপি৷ ভিনরাজ্য থেকে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের খেদানো, বাংলা ভাষা বললেই বাংলাদেশি বলে স্ট্যাম্প মেরে দেওয়া, বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করে আবার ফিরিয়ে আনা, মালদা-মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করা, আরজিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা, এসআইআর চালু করে নির্বাচন কমিশনকে লেলিয়ে দিয়েছে বাংলার মানুষের জীবন অতীষ্ট করে তোলার জন্য। তাতেও তারা শান্তি পায়নি।
১৬ আগস্ট, শনিবার, বিজেপির ঘরের ছেলে বলে পরিচিত চিত্রপরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী তাঁর নতুন ‘প্রোপাগাণ্ডা’ সিনেমা ‘বেঙ্গল ফাইলস’-এর টিজার প্রকাশের জন্য বাংলায় এসেছেন। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই ১৭ আগস্ট, রবিবার, কলকাতার প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ। এই সভার সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, অভিনেতা রাহুল চক্রবর্তী, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুমন ভট্টাচার্য, সংগীত শিল্পী সৈকত মিত্র, অনন্যা চক্রবর্তী, ডা. ভাস্কর চক্রবর্তী, সংগীত শিল্পী ও অধ্যাপক নাজমুল হক, অভিনেতা ভিভান ঘোষ, অভিনেত্রী সোমা চক্রবর্তী, সংগীত শিল্পী অমিত কালি।

গণমঞ্চের সদস্যরা তীব্রভাবে ‘বেঙ্গল ফাইলস’-এর নিন্দা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য চিত্রপরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর সিনেমা ‘বেঙ্গল ফাইলস’ বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াবে। টিজারেই তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে৷ ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে সম্পূর্ণ সিনেমা জুড়ে। এমনকি বাঙালিদের প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজোকেও বিকৃত করা হয়েছে৷ তাতে দেখানো হয়েছে মা দুর্গার কাঠামো জ্বলছে, যা কখনোই বাংলার সংস্কৃতি নয়৷ আমরা সবাই জানি, ১৯৪৬-এ বাংলায় ঘটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা, সেই দাঙ্গায় দাঙ্গাবাজদের কীভাবে দমন করেছিলেন গোপাল মুখার্জি ওরফে গোপাল পাঁঠা সেই বিষয়েও জানি। কিন্তু এই সিনেমায় গোপাল মুখার্জিকে শুধুমাত্র মুসলিম নিধনকারী হিসেবেই দেখানো হচ্ছে, যা একেবারেই সত্যি নয়। সংগীত শিল্পী সৈকত মিত্রের বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায়, গোপাল মুখার্জির নাতি এই বিষয়টি নিয়ে এফ আই আর-ও করেছেন।

Advertisement

গণমঞ্চের সদস্যদের স্পষ্ট বক্তব্য এটাই, যে বিজেপি বাংলার মানুষদের নিজের আয়ত্তে আনতে পারছে না বলেই নানারকমের উপায় অবলম্বন করছে বাংলায় বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য, চক্রান্ত করছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর জন্য। এবং সেই কারণেই ‘বেঙ্গল ফাইলস’ তৈরি। কিন্তু দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সদস্যরা এটাও মনে করিয়ে দিয়েছে, যে বিবেক অগ্নিহোত্রী যেদিন থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিনেমা তৈরি করা শুরু করেছেন, এবং এরকম ‘প্রোপাগাণ্ডামূলক’ সিনেমা তৈরি করা শুরু করেছেন, সেইসময় থেকেই বিজেপি হার সুনিশ্চিত হয়েছে। ‘বেঙ্গল ফাইলস’-ও তার ব্যতিক্রম হবে না, সেটা যেন বিজেপি মনে রাখে৷ বাংলার ইতিহাসকে বিকৃত করে, বাংলা ভাষাকে অপমান করে বাংলায় রাজনীতি করা যাবে না। বাংলার মানুষ নিজের ইতিহাসকে মনে রেখেই এই সিনেমা বয়কট করবেন বলে দাবি করেছে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ।

Advertisement

Advertisement