অর্থনীতির শ্লথগতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ অমিত মিত্রের

অর্থনীতিতে শ্লথগতি, লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতি দুয়ে মিলে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর এক ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে ভারতে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অমিত মিত্র।

Written by SNS Kolkata | January 15, 2020 12:00 pm

পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। (File Photo: IANS)

দেশজুড়ে সিএএ, এনআরসি নিয়ে শােরগােলে চাপা পড়ে যাচ্ছে মােদি জমানায় অর্থনীতিতে ধস নামার বিষয়টি। একদিকে অর্থনীতিতে শ্লথগতি অন্যদিকে লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতি দুয়ে মিলে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর মতাে একটা ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে ভারতে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

মঙ্গলবার নবান্নে তিনি বাজেট পূর্ব বৈঠকে বসেছিলেন বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নােটবন্দি এবং অপরিকল্পিত জিএসটি’র জন্য মােদি জমানায় মুদ্রাস্ফীতির হার সর্বোচ্চ। অন্যদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিম্নমুখী হওয়ায় জিডিপি বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমে যাচ্ছে। নােটবন্দির আগে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.১ শতাংশ, যা এখন কমে ৫ শতাংশেরও নীচে নেমে গিয়েছে। ঠিকভাবে হিসেব করলে এই হিসেব ৩ শতাংশের মতাে দাঁড়ায়’।

সােমবারই অর্থনীতির তীব্র সঙ্কট নিয়ে কেন্দ্রীয় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই রিপাের্টের ভিত্তিতেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এটা এমন এক অবস্থা যখন আর্থিক বৃদ্ধির হার কমবে, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে’। অমিতবাবু বলেন, ১৯৭২ সালে, যখন তিনি আমেরিকায় পড়াশুনাে করেন, তখন সেখানে এরকম স্ট্যাগফ্লেশন হয়েছিল। মধ্য প্রাচ্য দেশে আমেরিকাকে তেল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায়। কিন্তু সেটা ছিল ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু ভারতে এখন যে স্ট্যাগফ্লেশন তৈরি হচ্ছে, তা আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতির জন্য।

কিছুদিন আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিংহ সতর্ক করেছিলেন এই ‘স্টাগফ্লেশন’ নিয়ে। বলেছিলেন, এর জাঁতাকলে পড়লে, সেখান থেকে বেরনাে কঠিন। মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও বলেন, ভারতের অর্থনীতিতে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই, যা এই স্টাগফ্লেশনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

অমিত মিত্র এদিন বলেন, আনাজের দামে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ৬০.২ শতাংশ। ভােগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। রপ্তানির হার কমছে। লগ্নির হার ঋণাত্মক হয়ে গিয়েছে। এর ফলেই মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে ৭.৩৫ শতাংশ হয়েছে। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ আটটি আর্থিক ক্ষেত্র যেমন–কয়লা, অপরিশােধিত তেল, পরিশােধিত দ্রব্য, সার, ইস্পাত, সিমেন্ট, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির হার উত্তরােত্তর বাড়ছে। একই সঙ্গে জিডিপি বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমছে। এমনকী প্রতিবেশি বাংলাদেশ, চিন ইত্যাদি দেশের চেয়েও নীচে নেমে গিয়েছে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার।

অন্যদিকে গত ৪৫ বছরের মধ্যে মােদি জমানাতে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে একটা শােচনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক শােচনীয় অবস্থা সামলানাের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনায় রাজ্যের রাজস্বেও টান পড়ছে। অমিতবাবু বলেন, জিএসটি চালু করার জন্যই প্রবেশ কর, ভ্যাট ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয়েছে।

জিএসটি চালু করার সময় সংবিধানে সংশােধনী এনে বলা হয়েছিল, জিএসটি আদায় ১৪ শতাংশের কম হলে চালু হওয়ার পাঁচ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছে না কেন্দ্র। এই বিষয়ে অনেক আবেদন নিবেদনের পরে সম্প্রতি আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে কেন্দ্র।

অমিতবাবু বলেন, এখনও যে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের যে ক্ষতিপূরণ বকেয়া রয়েছে, সে সম্পর্কিত কাগজপত্র গত শনিবার রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জিএসটি আদায়ের ক্ষেত্রে যে ৪৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর।

অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, এটা শুধু কেন্দ্রের হিসেব। তবে সব রাজ্যের হিসেব ধরলে এই অঙ্কটা প্রায় হাজার কোটিতে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন অমিতবাবু। সব মিলিয়ে অর্থনীতির এই শােচনীয় অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশ বিদেশের বণিকমহল। মঙ্গলবারের বৈঠকে হাজির ছিলেন ফিকি, অ্যাসােচেম, সিআইআই, ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স, বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এমনকী জেলাস্তরের বণিকসভা মিলিয়ে মােট উনিশটি সংস্থা।

সম্প্রতি ব্যাঙ্ক থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা ছােট এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার কথা ঘােষণা করা হয়েছে। এই ঋণ কী কী প্রকল্পে কাজে লাগানাে লাভজনক হবে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করেন বণিকসভার প্রতিনিধিরা। এছাড়া অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা যােজনার আওতায় এনে নথিভুক্ত করা, এই বিষয়ে পরিসংখ্যান (ডাটাবেস) তৈরি করা, ক্ষুদ্র, ছােট ও ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, দক্ষতা বাড়ানাে এবং উদ্যোগপতি তৈরি করার বিষয়েও কিছু প্রস্তাব রাখেন বণিকসভার প্রতিনিধিরা।