• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

আগ্রাসী মনােভাব

পঞ্চম দফায়ও হিংসা এড়ানাে গেল না। অথচ প্রতিটি বুথেই আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মােতায়েন করা হয়েছিল।

(ছবি istock)

পঞ্চম দফায়ও হিংসা এড়ানাে গেল না। অথচ প্রতিটি বুথেই আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মােতায়েন করা হয়েছিল। যে সাতটি কেন্দ্রে নির্বাচন হল , প্রতিটিতেই কোনও না কোনও হিংসার ঘটনা  ঘটেছে । যদিও মানুষ তা উপেক্ষা করে নিজের ভােট নিজেই দিতে পেরেছেন।

মহিলা ভােটদাতাদের মধ্যেই উৎসাহ , উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে বেশি। সাতসকালে গৃহকাজ ফেলে ভােট শুরু হওয়ার দেড় – দু ‘ ঘণ্টা আগেই বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এমন জাগরণ দেখা গিয়েছিল সেই ২০১১ সালে , যখন দীর্ঘদিন চলা তদানীন্তন বাম সরকারকে বিদায় জানাতে  তাঁরা এসে ভােটের লাইনে দাড়িয়েছিলেন । আবারও বুথের সামনে সেই রকমই একটা দৃশ্য দেখা গেল। ভরা বৈশাখের তীব্র দাবদাহও তাঁদের দমাতে পারেনি । এই যে নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভােট দেওয়া তাদের অধিকার , এই বােধটা তাঁদের মনে জাগ্রত হয়েছে । তাই  চতুর্থ দফায় দুবরাজপুরের একটি কেন্দ্রে মহিলারা কোনও দলের  কর্মীদের শাসানির ফলে ভােট দেওয়ার জন্য বুথমুখী না হতে পেরে নিজেরাই দলবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে ভােটদানের অধিকার রক্ষায় মারমুখী হয়েছেন। এটা গণতন্ত্রের বিকাশের পক্ষে একটি সুলক্ষণ।

Advertisement

পঞ্চম দফার ভােটে প্রমাণিত হয়ে গেল , বুথে বুথে অধিক সংখ্যায় কেন্দ্রীয় ফোর্স মােতায়েন করেও হিংসার ঘটনা থামানাে গেল না । পরে দুটি দফার ভােটে  এখন কী হয় তার জন্য মানুষ অপেক্ষা করে থাকবেন। গলদটা গােড়ায় । যে গলদ কেন্দ্রীয় ফোর্সের উপড়ে ফেলার কোনও উপায় নেই। রাজনৈতিক দলগুলি , ভােট আদায় করার জন্য যে আগ্রাসী মনােভাবের পরিচয় দিচ্ছে। শক্তিপ্রয়ােগ করছে আর হিংসা ডেকে আনছে । যেনতেনপ্রকারে , অসৎ পথে , কারচুপির আশ্রয় নিয়ে , পেশীশক্তি প্রয়ােগ করে ভােট ঝুলিতে ভরতে হবে , এই অবস্থার থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভােটে অশান্তি এড়ানাে যাবে না।

Advertisement

শাসকদল সহ অন্য বিরােধী দল ভােটের আসরে নামে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য মাথায় নিয়ে তা হল , আমাদের এতগুলি আসন পেতেই হবে। শাসকদল চাইছে ৪২ – এ ৪২ , বিজেপি চাইছে ন্যূনতম ২৩ , বাম এবং কংগ্রেসের সেরকম  কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই , তবে আশাবাদী তাদের ঝুলিতেও কিছু আসন আসবে । কারণ তারা মানে , শাসকদল ও বিজেপির তুলনায় তারা দুর্বল ।

একটা সময় ছিল বাংলার পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারের রক্তপাতহীন , সংঘর্ষহীন , সুশল নির্বাচন হত না । নির্বাচন এলেই বিহারে কী হবে , সেই প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে ফিরত । কিন্তু এখন সেই বিহারে নির্বাচন রক্তপাতহীন শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছে । তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে , সেখানে কী এমন ঘটল , যার জনা এই সুখকর পরিবর্তন ? এটা নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশনের পুরাে কৃতিত্ব নয় — কৃতিত্ব যদি দিতেই হয় , সাধুবাদ যদি জানাতেই হয় , তাহলে তা দিতে হবে রাজ্যের মানুষকে , ওই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির নেতানেত্রীদের এবং প্রশাসনকে । মানুষ যদি মনে করেন , ভােট পেতে তারা হিংসায় মাতবেন না , সংঘর্ষে জড়াবেন না , তাহলেই এই পরিবর্তন আসা সম্ভব এবং এসেছে ।

বিহার যদি পারে হিংসামুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন , তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কেন পারবে না ? এ রাজ্যের মানুষ রাজনৈতিকভাবে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি মাতেন । শিক্ষাদীক্ষায় অনেক এগিয়ে । তাহলে তারা ভােট এলে আগ্রাসী মনােভাব পরিত্যাগ করে , শান্তিপূর্ণভাবে যাতে ভােট হয় তার জন্য চেষ্টা  করবেন না ? সেই যে নির্বাচনে মৃত্যুর বহর , হানাহানি , জোরজুলুম করে ভােট আদায় , যা  চলছে বাম আমল থেকে , তার শেষ হবে না ? নির্বাচন মানেই অশান্তি সে পুরসভা , পঞ্চায়েত অথবা বিধানসভা , লােকসভা নির্বাচন হােক, মৃত্যু থেমে থাকবে না । এই অপবাদ কবে ঘুচবে ? এখন পর্যন্ত এ রাজ্যে যতগুলি কেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছে , কোনওটাই ঘটনমুক্ত নয় , হয় ছােট না হয় বড় । তবে সুখের বিষয় , এখন পর্যন্ত একজনের প্রাণহানি হয়েছে । বাকি ১৭ আসনের ভােট যাতে ছােটখাটো ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে , তার জন্য আমাদের আশা রইল । আর যদি সত্যিই কোনও বিচ্ছিন্ন হিংসার ঘটনা না ঘটে তাহলেও তাে তা আনন্দের , পরম সুখের । অভিজ্ঞতায় তাে বােঝা গেল , বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও হিংসা এড়ানাে গেল না । বাকি রইল রাজনৈতিক দলগুলির নেতাকর্মী সমর্থকদের মনে শুভবুদ্ধির উদয় । তা হল‘ আমরা ভােট পেতে হিংসার আশ্রয় নেব না ।

Advertisement