গত ১৬ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার রাজ্যের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হতেই চরম বিভ্রান্তিতে পড়েছেন হাওড়ার জগৎবল্লভপুর ব্লকের মাজু গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎ কুমার দে। বছর চুয়াল্লিশের ওই ব্যক্তি ভোটার তালিকায় নিজের নাম খুঁজতে গিয়ে দেখেন, তালিকায় তাঁকে ‘মৃত’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই অদ্ভুত ভুল সামনে আসতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে তাঁর গোটা পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জগৎবল্লভপুরের মাজু গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ মাজুর বাসিন্দা বিদ্যুৎ দে দীর্ঘদিন ধরেই ভোট দিয়ে আসছেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যেমন তাঁর নাম ছিল, তেমনই ২০২৫ সালের ভোটার তালিকাতেও তাঁর নাম নথিভুক্ত রয়েছে। এমনকি সদ্য হওয়া এসআইআর প্রক্রিয়ার ফর্মেও তিনি নিজে সই করে সমস্ত তথ্য জমা দিয়েছিলেন। তবু খসড়া তালিকায় তাঁর স্ত্রী রূপশ্রী দে-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। শুধু পরিবারের কর্তার নামই উধাও। খসড়া তালিকায় হঠাৎ করে তাঁকে মৃত দেখানোয় পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
Advertisement
বিদ্যুৎ দে বলেন, নিজের চোখে তালিকায় মৃত লেখা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। জীবিত থেকেও যদি সরকারি খাতায় মৃত হয়ে যাই, তাহলে আমার নাগরিক অধিকারই বা কোথায় থাকবে? সেই চিন্তাতেই রাতে ঘুম আসছে না।
Advertisement
পুরোনো ভোটার তালিকা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ দে জগৎবল্লভপুর বিধানসভার ২৯১ নম্বর পার্টের ভোটার। তাঁর এপিক নম্বর এমএক্সএফ ১৫৫২২৯৮। দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিয়মিত ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আসছেন। অথচ খসড়া তালিকার এই ভুলের জেরে এখন তাঁকে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ঘুরতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিএলও ও বিডিও-কে জানানো হয়েছে। এই ঘটনার দায় পুরোপুরি কমিশনের উপর চাপিয়ে জগৎবল্লভপুরের বিধায়ক সীতানাথ মণ্ডল বলেন, এই অপরিকল্পিত এসআইআর প্রক্রিয়ার ফলেই এমন ঘটনা ঘটছে। তালিকা থেকে সাধারণ মানুষের নাম বাদ যাচ্ছে, জীবিত মানুষকে মৃত দেখানো হচ্ছে। এর দায় পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই এই অপরিকল্পিত এবং দিশাহীন এসআইআর-এর বিরোধিতা করে আসছেন। জ্ঞানেশ কুমার আর শুভেন্দু অধিকারী, দু’জনে শুধু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি খুঁজছেন। তার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই জীবিত ভোটারকে মৃত হিসেবে দেখাচ্ছে কমিশন।
বিএলএ অনিমা মণ্ডল জানান, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ দে-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করছি, চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তাঁর নাম সঠিক ভাবেই অন্তর্ভুক্ত হবে।
তবে ততদিন পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—একটি ভুল নথিভুক্তির কারণে কতটা অনিশ্চয়তায় পড়তে হয় একজন সাধারণ ভোটারকে, তারই জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে দক্ষিণ মাজুর এই ঘটনা।
Advertisement



