• facebook
  • twitter
Friday, 19 December, 2025

অবসরের আগে ছক্কা মারার প্রবণতা বিচারকদের: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে— কোনও নির্দেশ আদৌ অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা, তা নির্ধারণ করা হবে কী ভাবে?

প্রতীকী চিত্র

অবসরের ঠিক আগে বিচারকদের একের পর এক নির্দেশ দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে স্পষ্ট আপত্তি জানাল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, অবসরের প্রাক্কালে কিছু বিচারকের আচরণ ‘শেষ ওভারে ব্যাটারদের ছক্কা মারার মতো’, যা বিচার ব্যবস্থার পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মধ্যপ্রদেশের এক নিম্ন আদালতের বিচারকের করা আবেদনের শুনানিতে এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট বিচারকের অবসর নেওয়ার কথা ছিল গত ৩০ নভেম্বর। কিন্তু অবসরের মাত্র ১০ দিন আগে, ১৯ নভেম্বর, মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ফুল কোর্ট বৈঠকের সিদ্ধান্তে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, অবসরের ঠিক আগে তাঁর দেওয়া কয়েকটি নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেই তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

Advertisement

প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের সঙ্গে এই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিপুল এম পঞ্চোলি। শুনানিতে বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘আবেদনকারী অবসরের একেবারে মুখে দাঁড়িয়ে ছক্কা মারতে শুরু করেছেন। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা। আমরা এই বিষয়ে এখন বেশি কিছু বলতে চাই না।’ একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, অবসরের আগে বিচারকদের অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে একের পর এক নির্দেশ দেওয়ার প্রবণতা ইদানীং চোখে পড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।

Advertisement

আবেদনকারীর পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী বিপিন সাঙ্ঘি জানান, সংশ্লিষ্ট বিচারকের কর্মজীবনের রেকর্ড অত্যন্ত ভালো। তাঁর দাবি, বার্ষিক গোপন রিপোর্টেও ওই বিচারক বরাবরই উচ্চ রেটিং পেয়েছেন। আইনজীবীর যুক্তি ছিল, কোনও বিচারবিভাগীয় আধিকারিকের দেওয়া নির্দেশ উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে এবং সেগুলি সংশোধনের সুযোগও থাকে। শুধুমাত্র বিতর্কিত বা ভুল নির্দেশের কারণেই কাউকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।

এই যুক্তির সঙ্গে নীতিগত ভাবে সহমত পোষণ করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানায়, কেবলমাত্র ভুল বা প্রশ্নবিদ্ধ নির্দেশ দেওয়ার জন্য কোনও বিচারবিভাগীয় আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তবে আদালত একই সঙ্গে স্পষ্ট করে দেয়, বিচারের ত্রুটি এবং অসদাচরণের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা আলাদা করে বিচার করা অত্যন্ত জরুরি।

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে— কোনও নির্দেশ আদৌ অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা, তা নির্ধারণ করা হবে কী ভাবে? আদালতের মতে, এই বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং তাড়াহুড়ো করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।

শুনানিতে আরও জানানো হয়, গত ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশ সরকারকে বিচারবিভাগীয় আধিকারিকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬১ বছর করার নির্দেশ দিয়েছিল। তার ফলে সংশ্লিষ্ট বিচারকের অবসরের তারিখ বদলে গিয়ে ২০২৬ সালের ৩০ নভেম্বর হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিতর্কিত নির্দেশগুলি দেওয়ার সময় ওই বিচারক অবসরের বয়স বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

তবে মামলাটি সরাসরি শুনতে রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত আবেদনকারীকে হাই কোর্টেই নতুন করে আবেদন জানাতে বলেছে এবং আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হাই কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement