• facebook
  • twitter
Friday, 12 December, 2025

শিল্পীর নবজন্ম

একদিন যেমন সোনা যুদ্ধকে প্রভাবিত ও পরিচালিত করিয়াছিল আজ পৃথিবীর শান্তিকেও তেমনি সোনাই প্রভাবিত ও পরিচালিত করিতেছে।

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর

Advertisement

যুদ্ধের মধ্যে অন্য কোনো আন্তর্জাতিক পত্রিকা ইহার সমকক্ষ হইয়াছে বলিয়া আমি জানি না। ইউরোপের স্বাধীনচেতা বুদ্ধিজীবীদের নাম ও প্রবন্ধ এই পত্রিকাখানি একত্রিত করিয়াছিল। ই.ডি.মরেল, বার্ট্রাণ্ড রাসেল, ফ্রিডেরিস ভান এডেন, হেরিয়েট রোলাণ্ড হলস্ট, এ. ফোরেল, লাৎসকো, ফ্রিৎস এডলার প্রমুখ বুদ্ধিজীবীগণ এবং প্রবাসী রুশবিপ্লবীগণের সমগ্র দলটিই এই পত্রিকার মারফত আত্মপ্রকাশ করিতেন। আমিও ইহাতে ‘To the Eternal Antigone,’ ‘A Woman’s Voice in the Battle’, ‘Liberty’, সেক্সপিয়র সম্পর্কে প্রবন্ধ এবং ১৯১৬ সালের নভেম্বর মাসে ‘The Murdered People’ এই সকল প্রবন্ধ প্রকাশ করি। শেষোক্ত প্রবন্ধটি যুদ্ধ সম্পর্কে আমার মনোভাবের একটি নূতন পর্যায়ের সূচনা করে। এই রচনাগুলি আমার ব্যথার ধ্যানের একটি বৎসরের বহু অন্ধকার দিন। ইহার মধ্য দিয়াই আমি ক্লেরাঁবো-র সহিত বেদনার পথে চলিয়াছিলাম। ফ্রান্স ও তথা সমগ্র ইউরোপকে যে রক্তবন্যায় তখন প্লাবিত করিয়াছিল তাহার হাত হইতে পালাইয়া প্রথমে জেনেভায় ও পরে শিয়েরে আমার যে কয়জন অল্প সংখ্যক ফরাসী বন্ধু আশ্রয় লইয়াছিলেন— এই রচনাটি প্রথমে তাহাদের পড়িয়া শুনাই। এই দলটির মধ্যে ছিলেন রেনে আর্কস, পি. জে. জুভ, ফেরেনাঁ ডেপ্রেস, গ্যাস্টন থিয়েসন, ফ্রাউস মাসেরেল, ক্লড স্যালিভেস্, মাদমোয়াজেল এস দ্যুশেন ও আমার বীর ভগ্নী মাদলসন। কেবল মাত্র যুদ্ধের সঙ্গে নহে, প্রাচীন সমাজ ও তাহার অন্তর্লীন ধনতন্ত্রী বুর্জোয়া ব্যবস্থার সহিত সর্বসম্পর্ক ছেদনের সুস্পষ্ট ঘোষণআ ছিল, এই প্রবন্ধটির সূচনাতে সমস্ত সতর্কতা আমি দূরে পরিহার করিলাম। জাতিসমূহের বিরুদ্ধে এক তীব্র অভিযোগ আনিলাম। আমি মুখোশ উন্মোচন করিয়া দেখাইলাম সত্যকারের পাপীকেঃ সত্যকারের পাপী—সোনা।

Advertisement

‘‘ইউরোপীয় রাজনীতিতে আজ যে অবর্ণনীয় বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হইয়াছে— সবচেয়ে বড় আবর্জনা সেথায় সোনার তাল। যে শৃঙ্খল সমাজকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে, তাহার প্রান্তভাগ রহিয়াছে কুবেরের হাতে; শুধু কুবের হে, কুবেল ও তাহার কুকর্মের অনুচরদের হাতে। কুবেরই আজ প্রত্যেক রাষ্ট্রের সত্যকারের প্রভু ও নেতা। তাহার হাতে তাহারা আজ হীন ব্যবসার ও কদর্য লেনদেনের কেন্দ্রে পরিণত হইয়াছে। আদর্শের জন্য মানুষ আত্মদান করে কিন্তু আত্মদান করিতে যাহারা পাঠায় তাহারা জীবনে স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই জানে না। যুদ্ধ দীর্ঘ হইলে ক্রমেই স্পষ্ট হইয়া উঠে যে যুদ্ধ কতখানি বাণিজ্যের জন্য, কতখানি অর্থের জন্য…’’

সেদিন যাহা সত্য ছিল আজ তাহা একশত গুণ বেশি সত্য। একদিন যেমন সোনা যুদ্ধকে প্রভাবিত ও পরিচালিত করিয়াছিল আজ পৃথিবীর শান্তিকেও তেমনি সোনাই প্রভাবিত ও পরিচালিত করিতেছে। খুশি হইলে এই সোনা যুদ্ধের পথ গ্রহণ করিবে, একটি যুদ্ধ, প্রয়োজন হইলে দশটি যুদ্ধ হয় ত’ হইবে আগামী কাল (হয় ত’ আজই) যদি না বিপ্লব আসিয়া তাহাকে বাধা দেয়। কারণ, আজ এই বিপ্লব আসিয়াছে—তরুণ, জোয়ান ও সশস্ত্র। বিপ্লব আজ আমাদের দ্বারে পাহারা দিতেছে। ১৯১৬ সালের নভেম্বর মাসে ইহার আগমনকে আমি দেখিতে পাইয়াছিলাম, ইহার অভ্যুদয়কে আমি অভিনন্দন জানাইয়াছিলাম, কিন্তু বেদনার সহিত মনশ্চক্ষে ইহাও আমি দেখিয়াছিলাম যে এই বিপ্লবের অভ্যাগমে ঘৃণার অভিযান দ্বিগুণ শক্তি লইয়া জাগিয়া উঠিবে, ধ্বংসের শ্মশানে ইউরোপ মরিয়া পড়িয়া রহিবে।

(ক্রমশ)

Advertisement