হোয়াইট হাউস থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে চলল এলোপাথারি গুলি। ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোরে ওয়াশিংটনে চলে গুলি । ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন দুই ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য। আশঙ্কাজনক অবস্থান হাসপাতালে ভর্তি দুই গার্ড। অপরাধীকে রেয়াত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মেট্রোপলিটন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক যুবক। তাঁরও গুলি লেগেছে বলে খবর। যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের কাছে ফারাগাট মেট্রো স্টেশনের কাছে আমেরিকার ন্যাশনাল গার্ডের এক মহিলা রক্ষীর বুকে এবং মাথায় গুলি করেন ওই আততায়ী। তার পরেই আর এক রক্ষীকে গুলি করে সামনে এগোনোর চেষ্টা করেন যুবক। তখনই তৃতীয় রক্ষী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন ওই বন্দুকবাজ।
Advertisement
ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউসার জানিয়েছেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হামলা ছিল। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ এফবিআইয়ের ডিরেক্টর কাশ পটেল জানিয়েছেন, আহত দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহত দুই ব্যক্তি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া স্টেট ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্যাট্রিক মরিসের কথায়, ওই দুই কর্মী ঠিক কেমন আছেন, তা এখনও জানা যাচ্ছে না। তবে তাঁদের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।
Advertisement
ট্রাম্প নিজের সমাজমাধ্যম ট্রুথে লেখেন, ‘যে পশু ন্যাশনাল গার্ড কর্মীদের গুলি করেছে, তাকে এর চড়া মূল্য দিতে হবে। ঈশ্বর ন্যাশনাল গার্ড-সহ আমাদের সব সামরিক ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীর মঙ্গল করুন। তাঁরা সত্যিই মহান মানুষ। আমি, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে আপনাদের পাশে আছি।’
অভিযুক্ত যুবক আফগানিস্তানের নাগরিক বলে খবর। ২০২১ সালে বেআইনি ভাবে মার্কিন মুলুকে ঢুকেছিলেন বলে দাবি করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযুক্ত যুবকের নাম রহমানুল্লা লাকানওয়াল। ২৯ বছর বয়সি ওই যুবক আফগানিস্তানের নাগরিক। বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, আফগান নাগরিক রহমানুল্লা ২০২১ সালে অপারেশন ‘অ্যালাইস ওয়েলকাম’-এর সময় আমেরিকায় ঢুকেছিলেন।
পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী আসরাফ গনি প্রাশাসনের আমলে রহমানুল্লা ০১ নম্বর ইউনিটের একজন আফগান যোদ্ধা ছিলেন। তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ এই ইউনিটটির প্রতিষ্ঠা করেছিল মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ। তাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল আমেরিকা। ওই বছরের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দখল নিয়েছিল তালিবান। ‘অপারেশন অ্যালাইস ওয়েলকাম’ শুরু করেছিল জো বাইডেনের সরকার।
ওই অভিযানে বিমানে চাপিয়ে আফগানিস্তান থেকে প্রায় ২০ হাজার আফগান নাগরিক, মার্কিন কূটনীতিকদের আমেরিকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। সেই সময়ই রহমানুল্লা আমেরিকার মাটিতে পা রাখেন। তার পর থেকে তিনি ওয়াশিংটনের বেলিংহামেই থাকতেন।
এর পরেই ট্রাম্প বলেন, ‘এই ঘটনা শুধু সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপই নয়, বরং মানবতাবিরোধী অপরাধ। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটি দপ্তর নিশ্চিত যে, সন্দেহভাজন যুবক বিদেশি। তিনি আফগানিস্তান থেকে এসেছিলেন, যে দেশটি বিশ্বে নরককুণ্ড বলে পরিচিত।’ গুলি চলার ঘটনায় পরোক্ষে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে দায়ী করে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাইডেন প্রশাসন বিমানে করে ওই ব্যক্তিকে এ দেশে ঢুকিয়েছিল। এখন থেকে আমরা আফগানিস্তান থেকে আমেরিকায় আসা সমস্ত ভিনদেশিকে আবার পরীক্ষা করে দেখব।’
এই ঘটনার পরেই সমস্ত আফগান নাগরিকের অভিবাসনের আবেদনের প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ করে দিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিভাগের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘নিরাপত্তা এবং যাচাইকরণের বিধি নতুন করে পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত আফগান নাগরিকদের অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্ত আবেদনের প্রক্রিয়াকরণ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে। এই মুহূর্ত থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর করা হবে। আমাদের মাতৃভূমি এবং আমেরিকার জনগণের সুরক্ষাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
ভোর থেকে গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তাবাহিনী। ওয়াশিংটনে আরও ৫০০ জন ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, ট্রাম্প নিজে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই মূহূর্তে ওয়াশিংটনে বিভিন্ন বিভাগের টাস্ক ফোর্সের মোট ২,১৮৮ জন সেনা নিযুক্ত রয়েছেন। ট্রাম্প ওয়াশিংটনে নেই। থ্যাঙ্কসগিভিং উদ্যাপন করতে ফ্লরিডা গিয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টকে ঘটনার কথা বিশদ জানানো হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে হোয়াইট হাউস।
Advertisement



