• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্রথমবার বিহারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর হাত ছাড়া নীতীশ কুমারের

স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব সাধারণত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের হাতেই থাকে

বিহারের মসনদে ফের নতুন ইনিংস শুরু করলেন নীতীশ কুমার। মাঝের কয়েক মাস বাদ দিলে ২০০৫ সাল থেকে টানা কুড়ি বছর বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি আগলে রেখেছেন তিনি। বিহারের রাজনীতিতে ‘পাল্টু রাম’ বলে পরিচিত নীতীশ কুমার যে দলেই থাকুন না কেন স্বরাষ্ট্র দপ্তর বরাবর তাঁর হাতেই থেকেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিহার মন্ত্রীসভায় মন্ত্রীদের দপ্তর বন্টন করা হয়। নতুন মন্ত্রীসভায় বিহারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব পেলেন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধুরী।

দশমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নীতীশ কুমার। বৃহস্পতিবার তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর শুক্রবার শপথ নিয়েছেন তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যরা। সেখানে দেখা গেল ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর হাতেও একাধিক দপ্তর রয়েছে। সাধারণ প্রশাসন, মন্ত্রীসভা সচিবালয় এবং নজরদারি দপ্তরের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীই সামলাবেন। কোনও দপ্তর মন্ত্রীবিহীন থাকলে তার দায়িত্বও সামলাবেন নীতীশ কুমার। দুই দশক ধরে বিহারের শাসনভারের দায়িত্ব রয়েছে তাঁর হাতেই। খাতায়কলমে মন্ত্রীসভার প্রধান সদস্য হলেও এবার নীতীশের হাতে থাকছে না স্বরাষ্ট্র দপ্তর।

Advertisement

স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব সাধারণত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের হাতেই থাকে। পশ্চিমবঙ্গেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম আমলেও জ্যোতি বসু কিংবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতেই এই দপ্তর ছিল। স্বরাষ্ট্র দপ্তর নিজেদের হাতে রেখে মুখ্যমন্ত্রীরা রাজ্যে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব ধরে রাখেন বলে মনে করা হয়। সেদিক থেকে এবার ব্যতিক্রম হতে চলেছে বিহারে। স্বরাষ্ট্র দপ্তর নীতীশের হাত থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বিহারের কর্তৃত্ব এবার নীতীশের হাতে নিরঙ্কুশ থাকছে না বলে ওয়াকিবহাল মহলের অনেকে মনে করছেন। এই ঘটনা বিহারের রাজনীতিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেও মনে করা হচ্ছে। বিহারে এবার পদ্ম শিবিরে প্রভাব বাড়বে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। বিভিন্ন সংবাদসংস্থা আগেই জানিয়েছিল, এনডিএ বিহারে বৃহত্তম শরিক হিসেবে স্বরাষ্ট্র দপ্তর নিজেদের হাতে রাখতে চলেছে। শেষমেশ সেই ঘটনাই বাস্তবায়িত হল। বিহারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর নিজেদের হাতেই রাখল গেরুয়া শিবির।

আগে উপমুখ্যমন্ত্রী ও অর্থদপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন বিজেপির সম্রাট চৌধুরী এবার তিনি পেলেন উপমুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রদপ্তর। দ্বিতীয় উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিজয়কুমার সিনহাকে দেওয়া হয়েছে রাজস্ব, ভূমি সংস্কার এবং খনন দপ্তরের দায়িত্ব।বিজেপির মঙ্গল পাণ্ডে জোড়া দায়িত্ব সামলাবেন। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আইন দপ্তরের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জয়ওসয়ালকে দেওয়া হয়েছে শিল্প দপ্তর। নীতীন নবীন পেয়েছেন সড়ক উন্নয়ন দপ্তর। প্রাক্তন আরজেডি নেতা, বর্তমানে বিজেপি বিধায়ক রামকৃপাল যাদবকে কৃষিমন্ত্রী করা হচ্ছে। আর এক বিজেপি বিধায়ক দিলীপ জয়সওয়াল পাচ্ছেন বাণিজ্য দপ্তরের দায়িত্ব।

স্বরাষ্ট্র দপ্তর হারালেও অর্থ দপ্তর নীতীশের দলের হাতে থাকছে। বিহারের নতুন অর্থমন্ত্রী জেডিইউ বিধায়ক বিজেন্দ্রপ্রসাদ যাদব। তা ছাড়াও শক্তি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, খাদ্য ও ক্রেতাসুরক্ষা দপ্তরের দায়িত্ব পাচ্ছেন তিনি। নীতীশ-ঘনিষ্ঠ জেডিইউ বিধায়ক বিজয় চৌধুরী আবাসন, জলসম্পদ এবং পরিষদীয় দপ্তরের দায়িত্ব সামলাবেন। গ্রামোন্নয়ন এবং পূর্ত দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেডিইউ-র শ্রাবণ কুমারকে। গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের দায়িত্ব পাচ্ছেন জেডিইউ-এর অশোক চৌধুরী। সুনীল কুমারকে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাদপ্তর। মদন সাহনিকে সমাজকল্যাণ দপ্তর দেওয়া হয়েছে।

জামুই কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক শ্রেয়সী সিংহ গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি কমনওয়েল্‌থ গেমসে সোনাজয়ী শুটার ছিলেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দ্বিগ্বিজয় সিংহের কন্যা শ্রেয়সী বিহারের ক্রীড়া এবং তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের দায়িত্ব সামলাবেন। এনডিএ-র শরিক দল আরএলএম-এর তরফে উপেন্দ্র কুশওয়াহার পুত্র দীপক প্রকাশ পঞ্চায়েতি রাজ দপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছেন। আর এক শরিক দল হাম-এর তরফে জিতনরাম মাঝির পুত্র সন্তোষ সুমনকে ক্ষুদ্র জলসম্পদ দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিহারে বিজেপির বিরাট সাফল্যের পর মন্ত্রীসভায় নীতীশের ক্ষমতায় কিছুটা রাশ টানা হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলির বেশিরভাগটাই বিজেপি নিজেদের দখলে রেখেছ। তুলনায় জেডিইউ-র ঝুলি কিছুটা হলেও ফিকে।

Advertisement