• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

কর্পোরেটের পাহারাদার

সম্প্রতি ডাল আমদানিকে কেন্দ্র করে মোদী সরকার নীরবে আদানি সেবায় মগ্ন হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশে ডাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। সেটা আমদানি করত মূলত আদানির সংস্থা।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

কর্পোরেট মালিক আদানি ও আম্বানির প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। কর্পোরেটের টাকায় চলে শাসক দল বিজেপি। ফলে সেই দল ও তার নেতারা যে কর্পোরেট স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবে, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য আদানিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা একটু বেশিই। তাই আদানিদের বাসনা পূরণে মোদী কখনও কার্পণ্য করেন না। আদানিদের ইচ্ছা ছিল দেশের বিমানবন্দরগুলির কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখার। সেই ইচ্ছাপূরণ করে মোদী তাই দেশের জনগণের করের টাকায় গড়ে তোলা বিমানবন্দরগুলি এক এক করে তুলে দিয়েছেন আদানিদের হাতে। এখন দেশের সব বিমানবন্দরগুলি এক এক করে তুলে দিয়েছেন আদানিদের হাতে। এখন দেশের সব বিমানবন্দরগুলি চলে গেছে আদানিদের কব্জায়।

এবার চলছে দেশের খনিজ সম্পদ হস্তান্তরের কাজ। বিভিন্ন রাজ্যের পাহাড়-জঙ্গলের নিচে অফুরন্ত খনিজ সম্পদ লুটের বন্দোবস্ত হচ্ছে। ফলে সর্বত্র লক্ষ লক্ষ একর বনাঞ্চলের দখল পাচ্ছে আদানিরা। মোদী জমানায় যত রকমের নতুন শিল্প প্রকল্প হচ্ছে তার বেশিরভাগই চলে যাচ্ছে আদানিদের হাতে। আদানি সহ মোদী-ঘনিষ্ঠ কয়েকটি কর্পোরেটের দখলে চলে যাচ্ছে দেশের বিপুল সম্পদ। সৌর বিদ্যুৎ, উইন্ড মিল, আধুনিক চিপ প্রকল্প, এমনকী সামরিক উৎপাদন প্রকল্পও কার্যত উপহার হিসাবে পাচ্ছে আদানি-আম্বানিরা। অর্থাৎ গত এক দশকে দেশের শিল্প-বাণিজ্যের মানচিত্রটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। গড়ে উঠেছে একচেটিয়া কর্পোরেট সাম্রাজ্য, যার শীর্ষে রয়েছেন আদানি-আম্বানিরা।

Advertisement

কর্পোরেটের অধিক মুনাফা এবং অর্থনীতির লাগাম কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়াই মোদী সরকারের আসল উদ্দেশ্য। অবশ্য কর্পোরেটদের ক্ষেত্রেও পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার আছে। যে সব কর্পোরেট আরএসএস-ঘনিষ্ঠ এবং মোদী-শাহর বন্ধুস্থানীয় তারাই সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী। মোদী জমানায় কর্পোরেট সম্পদ ও মুনাফা বৃদ্ধির সিংহভাগ গিয়েছে আদানি-আম্বানিদের ঘরে। আরএসএস-এর রাজনৈতিক শাখা বিজেপি মতাদর্শগতভাবে হিন্দুত্ববাদীর অনুসারী হলেও এবং ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা করলেও আদতে অর্থনীতির প্রশ্নে তারা একচেটিয়া কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থেই কাজ করে।

Advertisement

সম্প্রতি ডাল আমদানিকে কেন্দ্র করে মোদী সরকার নীরবে আদানি সেবায় মগ্ন হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশে ডাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। সেটা আমদানি করত মূলত আদানির সংস্থা। রাশিয়া ও কানাডা থেকে হলুদ ডাল আমদানি করে অতি সস্তায় যা দেশে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য থেকে অনেক কম। সেই সস্তার আমদানি করা ডাল বাজারে বিক্রি করে দু’হাতে মুনাফা কামিয়েছে আদানিরা। আর মার খায় দেশের ডাল উৎপাদক কৃষকরা। পরে দেশে ডালের উৎপাদন বাড়লেও আদানিদের ডাল আমদানি চালু রাখতে আমদানি শুল্ক ফেরানো হয়নি। উপরন্তু ২০২৬ সালেও তা শুল্ক মুক্ত রাখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ আরও এক বছর চুটিয়ে মুনাফা করতে পারবে আদানিরা।

প্রসঙ্গত, নীতি আয়োগ এবং কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্ট অ্যান্ড প্রাইসেস-এর পক্ষ থেকে দেশের বাজারে সস্তার ডাল আমদানি বন্ধ করার সুপারিশ করা হলেও সরকার তা গ্রাহ্য করেনি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে যে ডাল আমদানি করা হচ্ছে, তা পশু খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সেই ডাল অনেক বেশি দামে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে বাজার থেকে। কৃষকরাও পাচ্ছেন না ডালের ন্যায্য দাম। বিনিময়ে আদানিদের অতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত হয়েছে। এটাই মোদী সরকারের আসল চরিত্র। কর্পোরেট বন্ধু মোদী আদানিদের স্বার্থ ও মুনাফাকেই বড় করে দেখছেন। মোদীর এই কর্পোরেট দুর্বলতাই দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছেন আদানি-আম্বানিরা। আরএসএস মুখে যতই স্বদেশি পণ্য ও জাগরণের কথা বলুক না কেন কর্পোরেট মুনাফার পাহারাদারও সঙ্ঘ পরিবার।

Advertisement