সম্প্রতি একটি সংস্থার সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে ‘দরিদ্রতম’ মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পত্তির নিরিখে সমীক্ষায় উঠে এসেছে, মমতার সম্পত্তি মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা! এই সমীক্ষা চালিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস। সংক্ষেপে তাদের পরিচয় এডিআর নামে। সমীক্ষা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীরা নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা যোগ করেছেন তার ভিত্তিতে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে ‘ধনী’ মুখ্যমন্ত্রী অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৯৩১ কোটি টাকা!
কিন্তু মমতার সম্পত্তির খোঁজ নিতে গিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গিয়েছে। সেটা হল, লোকসভার এমপি এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি কোনওদিন মাস-মাইনে, ভাতা কিছুই তোলেননি। ফলে কেন্দ্র এবং রাজ্য কোষাগারে মমতার নামে ১৪ কোটিরও বেশি টাকা পড়ে আছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এই টাকার পরিমাণ এবং পরিণতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাঁর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, সব মিলিয়ে টাকার পরিমাণ কত? আর এত টাকা যাচ্ছে বা কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘কিছুই জানি না, আমার কোনও আগ্রহ নেই!’
Advertisement
১৯৮৪ সাল থেকে মমতা লোকসভার সদস্য। ১৯৮৯ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র পরাজিত হলেও ফের ১৯৯১ সাল থেকে তিনি একটানা ২৫ বছর এমপি ছিলেন। মোট ৩০ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালে কোনও মাস-মাইনে এবং ভাতা তিনি নেননি। তোলেননি পেনশনের একটি টাকাও। বর্তমানে এমপি’দের মাস মাইনে ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। লোকসভা চললে প্রতিদিন ২৫০০ টাকা ভাতা। নির্বাচনী এলাকার মাসপিছু ভাতা ৮৫ হাজার টাকা। অফিস খরচ ৭৫ হাজার টাকা। ফোন ও ইন্টারনেট দেড় লক্ষ টাকা। এছাড়াও সাড়ে চার লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল, জল ইত্যাদি বাবদ থাকেন এমপি-রা। ৫ বছরের বেশি এমপি থাকলে আরও আড়াই হাজার টাকা বেশি।
Advertisement
৩০ বছর যে কোনও এমপি’র এইসব প্রাপ্য টাকা কম করে হিসবে নিলে দাঁড়ায় মাসিক বেতনই প্রায় ৪ কোটি। দৈনিক ভাতা দেড় কোটির কাছাকাছি। সংসদীয় কেন্দ্রের ভাতা বাবদ প্রায় আড়াই কোটি। অন্যান্য ভাতা ধরলে নিদেনপক্ষে ১ কোটি। আর পেনশনের টাকাই তো ১ কোটি ৭৫ লক্ষ। সর্বমোট ১১ কোটির মতো।
মমতা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে আছেন সাড়ে ১৪ বছর। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর মাস-মাইনে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। আছে ভাতাও। বছরে ২৫ লক্ষের ওপর। ১৪ বছরের হিসাব করলে ৩ কোটিরও বেশি। তাহলে মেপি এবং মুখ্যমনত্রীর ভাতা-মাইনে মিলে প্রায় ১৪ কোটি টাকা পড়ে আছে সরকারি কোষাগারে। ভূভারতে কোনও মুখ্যমন্ত্রী কিংবা এমপি-র ক্ষেত্রেও এই নজির আছে বলে তো জানা নেই। তবে সমীক্ষায় মমতার ১৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি আছে বলে জানানো হলেও, মুখ্যমন্ত্রী সেটা সম্পত্তি বলতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘এটা আমার সঞ্চয়। বই এবং গান লিখে যে রয়্যালটি পাই, এটা তার হিসাব। এর বাইরে আমার কিছু নেই।’
Advertisement



