• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ট্রাম্প প্রশাসন থেকে পদত্যাগ ইলন মাস্কের, প্রকাশ্যে মতবিরোধ

দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর ইলন মাস্ককে নিজের বিশেষ পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

ফাইল চিত্র

সম্পর্কে ভাঙন ধরেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের। ধনকুবের ইলন মাস্ক ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে আচমকাই অব্যাহতি নিয়েছেন। জানা গিয়েছে, তাঁর এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাজেট বিল নিয়ে মাস্কের গভীর অসন্তোষ। বুধবার রাতে এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, মাস্ক ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগের’ প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এবং তাঁর ‘অফ-বোর্ডিং’ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

পদত্যাগের ঠিক আগের দিনই ইলন মাস্ক এক্স-এ ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাজেট বিলকে ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেছেন, ‘এই ব্যয়বহুল বিল দেখে আমি হতাশ। এতে ঘাটতি কমানোর বদলে বরং বাড়ানো হয়েছে। যা সরকারি দক্ষতা বিভাগের উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ এই মন্তব্যের পর থেকেই মাস্কের পদত্যাগের গুঞ্জন জোরালো হয়ে ওঠে এবং রাতের মধ্যেই তা বাস্তবে রূপ নেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত বিল নিয়ে তিনি হতাশ, প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন। তার পরেই বৃহস্পতিবার সকালে মাস্ক তাঁর পদত্যাগের খবর জানিয়ে দেন।  সমাজ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমার নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে।’

Advertisement

দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর ইলন মাস্ককে নিজের বিশেষ পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাস্ককে নিয়োগ করা হয়েছিল ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্টাল এফিসিয়েন্সি’ বা সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হিসেবে, যেখানে তার লক্ষ্য ছিল সরকারি ব্যয় সংকোচন এবং কর্মপদ্ধতিতে উদ্ভাবনা। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল ১৩০ দিনের জন্য। সেই মেয়াদ ৩০ মে, ২০২৫ শেষ হওয়ার কথা। তবে মেয়াদ শেষের আগেই স্বেচ্ছায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন তিনি।

Advertisement

বাজেট নিয়ে মতপার্থক্য ছাড়াও ট্রাম্পের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে তীব্র মতবিরোধ চলছিল ইলন মাস্কের, হোয়াইট হাউস সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। বিশেষ করে, বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁর লক্ষ্যপূরণে বাধা দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। সম্প্রতি জনকল্যাণমূলক কাজে সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি বিলে সই করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই বিলকে ট্রাম্প ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ বলে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু প্রকাশ্যেই এই বিলের বিরোধিতা করেছেন মাস্ক। তাঁর দাবি, এর ফলে রাজকোষে ঘাটতি বাড়বে এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তরের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হবে।

আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানান, ট্রাম্পের এই বিল ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দেবে। তাঁদের যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, ‘এটা একটা বিশাল খরচের বিল। আমরা সরকারের খরচ বাঁচাতে, অপ্রয়োজনীয় খরচে কাটছাঁট করতে এতদিন ধরে ডিওজিই-তে যা যা কাজ করেছি, এই বিল তার ক্ষতি করবে। আমার মনে হয়, একটা বিল হয় বড় হতে পারে, অথবা সুন্দর। কিন্তু দুটো একসঙ্গে হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।’

মাস্কের আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্পের ওই বিলটি আইনে পরিণত করার কাজ এগোতে থাকে। বিল নিয়ে মাস্কের আপত্তি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘এই আইনের কয়েকটি দিক নিয়ে আমি খুশি হতে পারছি না ঠিকই, কিন্তু অন্য কয়েকটি দিক নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত। দেখা যাক কী হয়। এখনও অনেক পথ বাকি।’

তবে সম্প্রতি একাধিকবার ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাস্ক।  এক সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকারে মাস্ক রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে জানিয়েছিলেন, তিনি নিজের ব্যবসায় মন দিতে চান। টেসলা, স্পেসএক্সের মতো সংস্থার কাজ আরও নিবিড় ভাবে পরিচালনা করতে চান। রাজনীতি ‘অনেক হয়েছে’, বলেছিলেন মাস্ক।ইলন মাস্কের এই পদত্যাগ ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীন মতবিরোধ এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে মতভেদের ইঙ্গিত বহন করে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।তাঁদের মতে, ইলন মাস্কের এই পদত্যাগ শুধু প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে।

Advertisement