• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

আলোচনায় বসবে রাশিয়া-ইউক্রেন, পুতিনের সঙ্গে কথা বলে দাবি ট্রাম্পের

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে অতি শীঘ্র শান্তি আলোচনায় বসতে চলেছে। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে অতি শীঘ্রই শান্তি আলোচনায় বসতে চলেছে। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন ফোনে টানা দু’ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। সূত্রের খবর, ট্রাম্পকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে তৈরি মস্কো। গত সপ্তাহেই ইস্তানবুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের আধিকারিকদের মধ্যে একদফা বৈঠক হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সেই দিনই প্রথম সরাসরি আলোচনায় বসে দুই দেশ।

যুদ্ধ পরিস্থিতি এতদূর গড়ানোর জন্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের দিকেও আঙুল তোলেন ট্রাম্প। মস্কো এবং কিভের সংঘাত নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫০০০ তরুণ সৈনিকের মৃত্যু হচ্ছে…! আমরা এটা থামানোর চেষ্টা করছি।’ ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিন নামে একজন খুব ভালো মানুষের সঙ্গে আমার ছোট আলোচনা হয়েছে। আমাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমার মনে হয় (যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার) বিষয়টি এগোচ্ছে।’

Advertisement

এদিকে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক চলাকালীন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। তাঁর দাবি, সোমবার আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দু’বার কথা হয়েছে তাঁর। পুতিনের আগেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রাম্প। পরে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের নেতা এবং ট্রাম্পের সঙ্গে একত্রে ফোনে কথা হয় জেলেনস্কির। যদিও জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে মুখ খোলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Advertisement

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন সবসময় শান্তির পক্ষে। রাশিয়া যদি হত্যা বন্ধ না করে, বন্দিদের মুক্তি না দেয়, যদি পুতিন আবার কোনও অবাস্তব দাবি তোলেন, তবে বুঝে নিতে হবে রাশিয়া যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে। সূত্রের খবর, রাশিয়ার তরফে বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান ও পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। এছাড়া ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসাবে মেনে নেওয়া ও পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন অংশে সার্বভৌমতা বজায় রাখা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলি তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি-সহ ইউরোপের দেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদের ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা (যুদ্ধ) থামাতে চাইছি। সেখানে প্রকৃতঅর্থেই রক্তস্নান চলছে। এটি আমাদের যুদ্ধ নয়। তা-ও আমাদের পক্ষে যতটা করা সম্ভব, আমরা করছি। আগের প্রশাসনের আমলের ঘটনা আমাকে সামাল দিতে হচ্ছে।’

ইস্তানবুলের শান্তি আলোচনা নিয়ে মুখ খুলেছেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শান্তি ফেরানোর জন্য নমনীয়তা দেখানো উচিত।’ মস্কো যে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় সত্যিই আন্তরিক, তা বোঝাতে একটি স্মারকলিপির প্রস্তাবও দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন পুতিন।

প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার ক্ষমতায় আসার পর শুরু থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যেমন চাপ দিয়েছেন, তেমনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকেও প্রচণ্ড চাপে রেখেছেন ট্রাম্প। এমনকী যুদ্ধ শুরু করা নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে দুষতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

দুই দেশকে যুদ্ধ-বিবাদ থামিয়ে আপোস মীমাংসার দিকে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প। এই শর্ত না মানলে পাল্টা তাঁদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক অসহযোগিতারও প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের সেই উদ্যোগে অনেকটাই কাজ হয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। দুই দেশ পরস্পর বোঝাপড়ার লক্ষ্যে তিন বছরের মাথায় প্রথমবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছে ইস্তানবুলে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। টানা তিন বছরে বার বার যুদ্ধ থামানোর একাধিক চেষ্টা হয়েছে। সরাসরি আলোচনাতেও বসেছেন দুই দেশের কর্তারা। কিন্তু কেউই যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসেনি। হামলা পাল্টা হামলায় একে অপরকে রক্তাক্ত করছে রাশিয়া-ইউক্রেন। প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষ। দু’দেশের সংঘাতের বলি নিষ্পাপ শিশুরাও।

Advertisement