মুম্বই হামলার অন্যতম প্রধান চক্রী তাহাউর রানাকে আমেরিকা থেকে বিশেষ বিমানে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ দিল্লি বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণ করে। ভারতে আসার পর একটি বিবৃতি দিয়ে তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ জানিয়েছে, ‘২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হানার মূল চক্রী তাহাউর হুসেন রানাকে বৃহস্পতিবার ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ২০০৮ সালের ওই ঘটনায় মূল চক্রীকে বিচারের আওতায় আনার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালানো হচ্ছিল।’
মুম্বই হামলার অন্যতম প্রধান চক্রী তাহাউর রানাকে তিহাড় জেলে রাখা হতে পারে। ২০০৮ মুম্বই হামলার এই চক্রী তথা লস্কর-ই-তৈবার এই জঙ্গি বৃহস্পতিবারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ফিরছেন। জানা গিয়েছে, তিহাড় জেলের যে ওয়ার্ডে তাঁকে রাখা হবে , সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রানাকে কয়েক সপ্তাহ এনআইএ-র হেফাজতে রাখা হবে। এই বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশমতো যাবতীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসের চক্রান্তে অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে বিচারের জন্য এরপর মুম্বই পুলিশের হেফাজতে পাঠাতে পারে এনআইএ। বিশেষ সূত্রে খবর, ২৬/১১ কাণ্ডে ধৃত এক মাত্র জীবিত জঙ্গি, পরে যার ফাঁসি হয়েছিল, সেই আজমল কাসভের সেল-ই হতে চলেছে রানার ঠিকানা।
Advertisement
মহারাষ্ট্র কারা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে আর্থার রোড জেলের ১২ নম্বর ব্যারাকটি সম্পূর্ণভাবে পৃথক। সেখানে নজরদারি, এবং যাতায়াতে কড়াকড়ি ছিলই। বন্দিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রয়েছে আলাদা পাকশালা। ওই ব্যারাকে মোট তিনটি ‘সেল’ রয়েছে। তারই মধ্যে যে কোনও একটিতে রানাকে রাখা হতে পারে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এনআইএ-র হাতে রানাকে তুলে দিয়েছে আমেরিকা। তাঁকে বিশেষ বিমানে দিল্লিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিমান দিল্লি পৌঁছতে পারে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
Advertisement
দিল্লির পালম বিমানবন্দর থেকে এনআই-এর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হবে তাহাউরকে। ফলে বিমানবন্দর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে এনআইএ-র সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। রানার যাত্রাপথে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, তার জন্য সোয়াট তথা স্পেশাল ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স কমান্ডো মোতায়েন করা হয়েছে। কনভয়ে থাকবে সাঁজোয়া গাড়িও। একটি ‘মার্কসম্যান’ সাঁজোয়া গাড়ি সবসময়ের জন্য মোতায়েন থাকবে।
এনআইএ-র সদর দপ্তরকেও নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। সাধারণ মানুষের যাতায়াত আপাতত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জওহরলাল নেহরু মেট্রো স্টেশনের ২ নম্বর গেট নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, আমেরিকা থেকে ভারতে যে বিশেষ বিমানে রানাকে নিয়ে আসা হচ্ছে, সেটির যাত্রাপথে আমেরিকার সঙ্গে যৌথ ভাবে নজরদারি চালাচ্ছেন গোয়েন্দা, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারের ১৬ বছর পর রানাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে আমেরিকা। ভারতে বিমান থেকে নামার পরই তাহাউরকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রেপ্তার করা হবে।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ১০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের একটি দল আরব সাগর গিয়ে মুম্বইয়ে ঢোকে। একটি রেলস্টেশন, দুটি বিলাসবহুল হোটেলে হামলা চালায় এই দলটি। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলা ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়। একমাত্র জীবিত অবস্থায় ধরা পড়েন আজমল কাসভ। ২০১২-র ২১ নভেম্বর ফাঁসির এক দিন আগে পর্যন্ত আর্থার রোড জেলের ১২ নম্বর ব্যারাকের ‘আন্ডা সেল’ ছিল কাসভের ঠিকানা। ফাঁসির আগের রাতে বোরখা পরিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে। সেখানেই ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল কাসভকে।
তাহাউর রানার জন্ম পাকিস্তানে। পরবর্তীকালে তিনি কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ডেভিড কোলম্যান হেডলি ওরফে দাউদ গিলানির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন রানা। সেই সময় তিনি অবশ্য মার্কিন নাগরিক ছিলেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ডেভিড কোলম্যানের সঙ্গে এক ব্যবসার সূত্রে আলাপ হয় রানার। ২০০৮ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের স্থান নির্বাচন করেছিলেন ডেভিড। ওই বছর ২৬ নভেম্বর পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর মদতে লস্কর-ই-তৈবা মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটায়। ২০০৯ সালে শিকাগোয় ধরা পড়েন ডেভিড। তদন্তে জানা যায়, রানার সাহায্যেই ভারতে এসেছিলেন ডেভিড। জঙ্গিরা কোন পথে এ দেশে ঢুকে হামলা চালাবে তাঁর রোডম্যাপ তৈরি করেছিলেন তিনি। পরে আমেরিকায় গ্রেপ্তার হন রানা। এর পরই তাঁকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয় ভারত। ভারতে প্রত্যর্পণ এড়াতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি রানা। কিন্তু শেষে মেশ মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা রানার আবেদন খারিজ করায় তাঁর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপরই তাঁকে ভারতে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
Advertisement



