• facebook
  • twitter
Saturday, 20 December, 2025

অগ্নিযুগের বিস্মৃত নায়ক – প্রদ্যোৎকুমার

আর প্রদ্যোৎ? ভাগ্য সেদিন প্রদ্যোৎ-এর সঙ্গে রসিকতা করেছিল৷ ছিনিমিনি খেলেছিল৷ তিনি ছুটছেন৷ পেছন রাজভক্তের দল৷ আর চিৎকার ‘পাকড়ো পাকড়ো, আসামি ভাগতা হ্যায়৷’

ফাইল চিত্র

চন্দন চক্রবর্তী

ডগলাস নিহত হলেন৷ মেদিনীপুরের পরবর্তী জেলাশাসক মিঃ বার্জ৷ ঘড়ি দেখছেন বার বার৷ যতক্ষণ না ফাঁসির দড়িতে লটকানো হচ্ছে কিচ্ছু বিশ্বাস নেই৷ সময় হল৷ ঘড়িতে সকাল ছ’টা৷ কনকনে হাড় হিম করা ঠান্ডা৷ ১২ জানুয়ারি,১৯৩৩ সাল৷
প্রদ্যোৎকুমারকে জিজ্ঞেস করলেন ‘Are you ready Prodyot?’
মৃত্যু পথযাত্রী প্রদ্যোৎ-এর কণ্ঠে দৃঢ়তা, অথচ ধীর স্থির শান্ত৷

Advertisement

‘One Minute please, Mr. Burge. I have something to say’ অনুমতি পেয়ে মুখে হাসি ভাসিয়ে বললেন, ‘We are determined, Mr. Burge, not to allow any European to remain at Midnapore. Yours is the next turn, get yourself ready.’
বার্জের চোখে মৃত্যুভয়৷ মনে পড়ে বিপ্লবীদের সাবধান বাণী –‘another April is coming. তাহলে কি পরের April–এ আমি৷’
এবারে উচ্চকণ্ঠে প্রদ্যোৎকুমার ‘I am not afraid of death. Each drop of my blood will give birth to hundreds of prodyots in all houses of Bengal. Do your Work please.

Advertisement

জেলার মৃত্যুদণ্ড পাঠ করলেন৷ ফাঁসির মঞ্চে তিনি দাঁড়িয়ে৷ নির্ভীক নিশ্চুপ৷ দূরে দাঁড়িয়ে বড় ভাই প্রভাতভূষণ, মেজ ভাই শক্তিপদ, সেজভাই শর্বরী দাঁড়িয়ে আরও দূরে গেটের বাইরে৷

ফাঁসির রজ্জু পরানো হল৷ মুখ ঢেকে গেল কালো কাপড়ে৷ শেষবারের মত মাতৃমন্ত্র উচ্চারণ ‘বন্দেমাতরম’৷ পায়ের পাটাতন সরিয়ে নেওয়া হল৷ রজ্জুটি কাঁপতে কাঁপতে থেমে গেল৷ তিনি ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে৷ মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলের প্রথম শহিদ প্রদ্যোৎকুমার ভট্টাচার্য৷ অন্যান্য সেল থেকে ভেসে আসছে জোরালো কন্ঠস্বর, ‘প্রদ্যোৎকুমার কি জয়৷’

কে এই ছেলেটি? কোথা থেকে পেল এই দৃঢ়তা! এই শক্তি? কী করেই বা জেল থেকে মা পঙ্কজিনী দেবীকে লেখেন…
‘…. যুগ যুগ ধরে তুমি যে অপমান, লাঞ্ছনা ও নির্যাতন সহ্য করে এসেছো৷ মাটিতে মুখ থুবড়ে বোবা গরুর মত মার খেয়েছ৷ তারই বিরুদ্ধে তোমার মনে যে বিদ্রোহের ধারা অন্তঃসলিলা ফগুর মত বয়ে যাচ্ছিল, সেই পুঞ্জীভূত বিদ্রোহই আমি৷ সেই বিপ্লব যদি আজ আত্মপ্রকাশ করে তার জন্য চোখের জল ফেলবে কেন?’

একই চিঠিতে লিখেছেন প্রদ্যোৎকুমার, ‘মানুষকে আমরা খুন করিনা, মানুষকে আমরা বাঁচাই৷ মানবের হিংস্রতা থেকে মানবকে রক্ষা করার জন্যই আমাদের প্রয়াস৷’

আবার ‘বিপ্লব’কে সহজ সরল ভাষায় বর্ণনা করে লিখেছেন, ‘বিপ্লব জিনিষটা কিছু আমোদের নয় কিন্তু মানব জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যুগে যুগে এটা প্রয়োজন হয়েছে৷’

কে লিখেছেন? ভাবা যায়, কখন লিখেছেন? জেলে ছোট্ট এক কনডেমড সেল থেকে৷ আলো ঢোকে না, বাতাস কথা বলে না৷ শুধু ভারী বুটের শব্দ, শুধু সকালের কিছু চড়াই পাখির পিক পিক পিক আওয়াজ৷ যখন তিনি জেনে গেছেন ফাঁসির দিন আগত৷

ছেলেটি সবে মেদিনীপুরে হিন্দু স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে স্থানীয় কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়েছেন৷ কত স্বপ্ন, কত ইচ্ছে – পড়াশুনা করে বড় হবেন৷ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রের প্রতি সবারই আশা তিনি মুখ উজ্জ্বল করবেন৷ করলেনও সেটা৷ কিন্তু অন্যভাবে৷ গুটিকয়েক অভিভাবকের বদলে দেশমাতৃকার মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন৷ কি সেই দিক? স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মা অর্থাৎ দেশমা তথা নিজের মাকে উদ্ধার করা৷

তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ভক্ত৷ মেদিনীপুরের ওলিগঞ্জের বাড়ির কাছেই ক্ষুদিরামের দিদি অপরূপা দেবীর বাড়ি৷ সময় পেলেই দৌড়৷ দিদির কাছে ক্ষুদিরামের কথা, তাঁর বলিদান, দেশের জন্য আত্মত্যাগ তাঁকে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে ঠেলে দিতে থাকে৷

প্রদ্যোৎ-এর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা, শিক্ষা, জ্ঞান বিশেষ করে রবীন্দ্রচর্চা দেখে বিপ্লবী দিনেশ গুপ্ত আকৃষ্ট হন৷ ‘এই রকম ছেলেই তো চাই৷ এরাই তো পারবে দেশকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে৷’ গুরু-শিষ্যের সাক্ষাৎ তিলক পাঠাগারে৷ ১৯৩০ সালেই মেদিনীপুরের গুপ্তচক্রের পরিচালক ফণীন্দ্রকুমার দাস বি.ভি বা বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এ তাঁর নাম লেখালেন৷

চলল শরীরচর্চা সঙ্গে সঙ্গে লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশুনা করা৷ পড়া আর পড়া৷ পৃথিবীর নানা দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস – আয়ারল্যাণ্ড, ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া, তুরস্ক, চিন, জাপান, আমেরিকা কত কত দেশ৷ রানাপ্রতাপ থেকে ডি ভ্যালেরা মাটসিনি, গ্যারিবল্ডী,কামাল পাশা, লেলিন৷ একদিকে স্বামী বিবেকানন্দর রচনা, অন্যদিকে অশ্বিনী দত্তের ভক্তিযোগ, সখারাম দেউস্করের দেশের কথা, রবীন্দ্রকাব্য, গীতা৷ সমস্ত বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে গান্ধিজি বললেন, ‘Had India sword I would have asked her to draw it. But she had no sword-I ask her to adopt Non Co-operation. Non Violence may be accepted as Creed or Policy.’

কিন্তু সমগ্র বিপ্লবীরা মানতে নারাজ৷ ‘স্বাধীনতা যেভাবেই আসুক তাকে বরণ করে নিতে হব’- লোকমাণ্য তিলকের নির্দেশই তাঁদের অন্তরের কথা৷ তাই প্রদ্যোৎ তাঁর মাকে লিখেছিলেন,‘…ইংরেজ আমাদিগকে কালিতে চিহ্নিত করে৷ কিন্তু ভারী দুঃখ হয় যখন অহিংসবাদীরাও আমাদের হিংস্র বলে, নিন্দা করে৷ আর মনে হয় পরাধীন দেশে এইটাই বুঝি সবচেয়ে বড় অভিশাপ৷ আমরা যে আদর্শের সন্ধানে চলেছি তা অহিংসাবাদীদের কল্পনারও অতীত৷’

কখনও বড়বৌদি বনকুসুম দেবীকে লিখছেন এক প্রাজ্ঞ দার্শনিকের মতো… ‘জীবনটা কী? একটা অনুভবের সমষ্টি বই তো নয়৷ এই অনুভবের স্মৃতিধারাই মানবের জীবন৷ এবং সেই একটানা জীবনস্রোত যেদিন একটা প্রবল অনুভবের আবর্ত সৃষ্টি করে তারই নাম তো প্রাণের জাগরণ৷’
বিভির সৈনিক হওয়ার পর থেকেই প্রদ্যোতের জপমালা হল মাতসিনির সেই অমর বাণী- ‘Your Country should be your temple. God at the summit, a people of equals at the base.’

১৯৩০ সাল ছিল বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অগ্নিগর্ভ বছর. ১৩ই এপ্রিল, ডাণ্ডী অভিযান৷ ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন৷ সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহ৷ ২৫শে অগাস্ট কুখ্যাত পুলিশ কমিশনার টেগার্ট সাহেবের ওপর বোমা বর্ষিত হল৷ ২৯শে অগাস্ট ঢাকায় আইজি অফ পুলিশ লোম্যানকে হত্যা এবং মেডিকেলের ছাত্র বিনয়ের গা ঢাকা দেওয়া৷ তারপর এল সেই ৮ই ডিসেম্বর৷ বিনয় বাদল দীনেশের রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ এবং আইজি অফ প্রিজনস সিম্পসনকে হত্যা৷ বাদল গুপ্ত, বিনয় বসু, দিনেশ গুপ্তর আক্রমণ৷ পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে বাদল মৃত্যুবরণ করলেন৷ আর বিনয় নিজেরই ক্ষতস্থান বিষাক্ত করে মৃত্যুকে বেছে নেন৷
দিনেশ ধরা পড়লেন৷ তাঁর ফাঁসি হল ১৯৩১, ৭ই জুলাই৷

গুরু দিনেশের মৃত্যু প্রদ্যোৎকে আরও উদ্দীপ্ত করল৷ শুধু দিনেশের কথা মনে হয়—‘Choosing the time for final strike’.
কিন্তু কবে আসবে সেই সময়? আর যে তর সয় না৷ এদিকে ডগলাসের অত্যাচার বেড়েই চলেছে৷ বিশেষ করে হিজলির কারাগারে নৃশংস অত্যাচার ও গুলি চালনায় যেভাবে বিপ্লবী সন্তোষকুমার মিত্র এবং তারকেশ্বর সেনগুপ্তকে হত্যা করা হয় তা অবর্ণনীয়৷ অথচ জগলাস বাহবা দিলেন৷ না জগলাস, তোমাকে আর বেঁচে থাকতে দেওয়া যায় না৷ তৈরি হও৷ বিপ্লবীদের রক্তে তখন সর্বনাশের নেশা ধরিয়ে দিয়ে গেছেন দিনেশ গুপ্ত৷

শেষে নির্দেশ এল কলকাতা থেকে এবারে ডগলাসকে খতম করতে হবে৷ কিন্তু প্রদ্যোতেরর বয়স কম বলে প্রভাংশু শেখর পালের সঙ্গে স্থান পেল প্রমথ মুখার্জী৷ প্রদ্যোৎ জানতেন, ‘Their’s not to reason why/Their’s but to do and die’. কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে দেখা গেল প্রমথ নার্ভাস৷ গতিবিধি অত্যন্ত অস্বাভাবিক৷

তারপর ডাক এল প্রদ্যোৎকুমারের৷ ৩০ শে এপ্রিল, ১৯৩২৷ জেলা বোর্ডের সভা৷ তখনও সন্ধ্যা হয়নি৷ সভার কাজ চলছে৷ সভাপতি স্বয়ং অত্যাচারী ডগলাস৷ সব কটা গেটে সশস্ত্র প্রহরী৷ ডগলাসের নিজের হাতে রয়েছে গুলিভরা রিভলবার৷ সব বৃথা৷ মৃত্যু যার শিয়রে, কে তাকে আটকাবে? দুই দুর্ধর্ষ তরুণ বিদ্যুৎগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন৷ দ্রিম দ্রিম গুলির পর গুলি চলল৷ সবাই হতভম্ব, বিমূঢ়৷ তখন যে যার প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত৷ সেই সুযোগে দু’জনেই বিদ্যুৎ গতিতে পালিয়ে গেলেন৷ ওদিকে রক্তাক্ত ডগলাস লুটিয়ে পড়লেন৷ রাত ৯-৩০, হাসপাতালে মারা গেলেন৷
প্রভাংশু শেখর পাল গুলি চালাতে চালাতে অমর লজের পাশ দিয়ে পালিয়ে গেলেন৷

আর প্রদ্যোৎ? ভাগ্য সেদিন প্রদ্যোৎ-এর সঙ্গে রসিকতা করেছিল৷ ছিনিমিনি খেলেছিল৷ তিনি ছুটছেন৷ পেছন রাজভক্তের দল৷ আর চিৎকার ‘পাকড়ো পাকড়ো, আসামি ভাগতা হ্যায়৷’ পরিকল্পনা মতো দক্ষিণদিকের সায়েন্স লজের ঝোপের দিকে দৌড়লেন৷ বার বার রিভলবারের ট্রিগারে চাপ দিচ্ছেন, না সেদিন তা সাড়া দেয়নি৷ ছুটতে ছুটতে উনি একটা পোড়ো ঘরে ঢুকে পড়ে রিভলবারে গুলি ভরে চালাতে শুরু করলেন৷ না, গুলি তো রয়েছে তবে! যান্ত্রিক ত্রুটি৷ আর সময় নষ্ট নয়৷ দৌড় – কাঁটাতারের বেড়ায় পা জড়িয়ে মাটিতে পড়ে যান৷ অকেজো রিভলবার ছিটকে পড়লো৷ প্রহরীরা জেনে গেছে রিভলবার কাজ করছে না৷ রাজভক্তের দল ঝাঁপিয়ে পড়ল৷ ‘পকড় লিয়া, মারো মারো’৷ সপ্তরথী ঘিরে ধরে অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে আর ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে রইলেন অভিমন্যু তথা প্রদ্যোৎকুমার ৷ তারপর চলল নৃশংস অমানুষিক অত্যাচার৷ পিঠোপিঠি সেজদাদা শর্বরীভূষণ ভট্টাচার্যকে ধরে আনা হল৷ চলল অত্যাচার৷ শত অত্যাচারেও প্রদ্যোৎ তাঁর সঙ্গীর নাম বলেননি৷ যাঁর গুলিতে ডগলাসের মৃত্যু হয়েছিল৷ কারণ তিনি জেনে গিয়েছেন অরবিন্দ ঘোষের কথা – ‘ Be rare in your acquaintances. Seal your lips to regid secrecy. Don’t breathe this to your nearest and dearest.

ভরা আদালতে ভূপেন দারোগা বলেছিলেন, ‘ছিঃ প্রদ্যোৎ তোমার মতো বুদ্ধিমান ছেলে একটা অকেজো রিভলবার নিলে যা কাজের সময় সাড়া দিল না৷’ তিনি শিকলবাঁধা দুই হাত তুলে বলেছিলেন – ‘Irony of fate Bhupenbabu. Had my revolver spoken out I would not have been here and in this condition. The story would have been otherwise.

কারাগারের মধ্যেই তাঁর দেহ দাহ করা হল৷ আগুনের লেলিহান শিখা আর জেল বন্দিদের বন্দেমাতারাম ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হল৷ কিছু গোরা সৈনিক কুচকাওয়াজ করে ফিরছিলেন৷ সবাই টুপি খুলে সম্মান জানালেন৷ অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘Growing a new man. Don’t lament.

প্রদ্যোৎকুমার ভট্টাচার্য চলে গেলেন৷ কিন্তু তাঁর অগ্রজ শর্বরীভূষণের উপর দফায় দফায় অত্যাচার চলেছিল৷ ডগলাস হত্যার পর তো হয়েছিলই৷ পরের বছর আর এক কুখ্যাত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ হত্যার পরা ভট্টাচার্য পরিবারে শুরু হয়েছিল নির্যাতন৷ চলল অকথ্য অত্যাচার শর্বরীর ওপর৷ চারবছর জেল হাজতে ছিলেন৷ শেষে তিনি রাঁচির উন্মাদ আশ্রমে পুরো যৌবনকাল কাটান৷ এবং ১৯৮০ সালে ২৮ শে মার্চ তিনি সেখানেই দেহ রাখেন৷ মানুষটা হয়তো জেনে যেতে পারেননি দেশ স্বাধীন হয়েছে কিনা!

ডাক নাম কচি৷ গ্রামের নাম বড় সুন্দর৷ গোকুলনগর (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার দাসপুর থানার অর্ন্তগত)৷ জন্মেছিলেন ৩ রা নভেম্বর, ১৯৩১ সনে৷ বাবা ভবতারণ ভট্টাচার্য, মা পঙ্কজিনী দেবী৷ চার ভাই প্রভাতভূষণ, শক্তিপদ, শর্বরীভূষণ আর ছোট ভাই প্রদ্যোৎ৷ তিন বোন লতিকা, কণিকা, মণিকা৷

সে গ্রামেও লালমাটির মেরাম রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে কাঁসাই নদীর পাড়ে৷ সবুজ গ্রামের উৎসাহী মানুষজন এখনও প্রদ্যোৎ-শর্বরীর স্মৃতি আঁকড়ে বসে থাকেন৷ জন্মদিন মৃত্যুদিন পালন করেন৷ লালপেড়ে শাড়ি আর শঙ্খ বাজিয়ে প্রভাতফেরি হয়৷ সারাদিন ছোটদের নিয়ে কত অনুষ্ঠান করেন৷ নিজেদের চেষ্টায় স্কুলবাড়ি, লাইব্রেরি, প্রদ্যোৎ প্রভাংশুর মূর্তি বসিয়েছেন৷ প্রদ্যোৎ -এর বাড়ি এখন ধূলিসাৎ৷ মাটিতে মিশে গেছে৷ মাটিতে মেশেনি গোকুলনগর বা আশপাশের গ্রামবাসীদের অন্তর আত্মার৷ তারা একনও স্বপ্ন দেখেন৷ এই বিপ্লবী দু’ভাই দুজনেই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন৷ সরকার কি তাদের জন্য, অন্তত এই ভিটেমাটি রক্ষা করে একটি মিউজিয়াম বা অন্য কিছু করতে পারেন না? মেদিনীপুর শহরে তাঁর স্মৃতিতে প্রদ্যোৎভবন হয়েছে৷ পূর্ণ্যবয়ব মূর্তি, জেলের মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভ অনেক কিছু হয়েছে৷ কিন্তু বহু স্মৃতি বিজরিত শহিদ প্রদ্যোৎ রোডে তাঁর বসত বাড়িটির একটি ঘর ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই৷ ফাঁকা ঘর৷ সেই ঘরে প্রদ্যোৎ, শর্বরী থাকতেন৷ কিছুই কি করা যায় না?

সবশেষে একটি প্রাসঙ্গিক আবেদন, আজকের স্কুল পড়ুয়াদের প্রদ্যোৎকুমারের জীবনাদর্শে অনুপ্রাণিত করার জন্য কি পাঠ্যপুস্তক তাঁর স্থান হতে পারে না?

ঋণ স্বীকার – শৈলেশ দে-র আমি সুভাষ বলছি, রক্তের অক্ষরে ইরা ধর, সুবল সামন্ত সম্পাদিত ‘অগ্নিযুগের দুই সৈনিক শহীদ প্রদ্যোৎকুমার ও বিপ্লবী প্রভাংশুশেখর৷

Advertisement