সাক্ষাৎকার: রামকুমার মুখোপাধ্যায়

Written by SNS March 17, 2024 4:55 pm

শ্যামল ভট্টাচার্য: আপনার জন্ম ১৯৫৬ সালে কলকাতার লেডি ডাফরিন হাসপাতালে, কিন্ত্ত শৈশব কেটেছে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার গেলিয়া নামক এক গ্রামে৷ আপনার সাহিত্যে কি সেই গ্রামের স্মৃতি প্রভাব ফেলেছে?
রামকুমার মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ, জন্ম কলকাতায় হলেও দেড় বছর বয়েসে গ্রামের বাডি়তে চলে যাই৷ গ্রামটি বিষ্ণুপুর মহকুমার জয়পুর থানায়৷ জয়পুরের বন কিলোমিটার চারেক দূরে৷ কোতুলপুর থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার মূল রাস্তার গায়ে আমাদের গ্রাম৷ কলকাতা থেকে দূরত্ব ১২০ কিলোমিটারের মতো৷ আমার ‘চারণে প্রান্তরে’ উপন্যাসে সে গ্রামের ছবি অনেকটাই ধরা আছে৷ অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘এবং এই সময়’ পত্রিকায় সেটি ছাপা হয়৷ অফপ্রিন্ট থেকে বই হয়েছিল৷ নিজের পয়সায় বই ছাপছি বলে পূর্ণেন্দুদা (পত্রী) একটি রঙ দিয়ে রিভার্সে খুব সুন্দর প্রচ্ছদ করে দিয়েছিলেন৷

প্রশ্ন: আপনার পড়াশোনা কোথায়?
উত্তর: প্রথমে গ্রামের দেশবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ তারপর উচ্চমাধ্যমিক রাজগ্রাম শশিভূষণ রাহা ইনস্টিটিউশনে৷ আমাদের গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে সে স্কুল৷ বেশ বড়োসড়ো স্কুলটি৷ হায়ার সেকেন্ডারিতে পাঁচটা বিভাগ৷ আমার লেখা ‘সম্পাদকের প্রতিবেদন’ গল্পে সে স্কুলের পরিচয় কিছুটা দেওয়া আছে৷ পড়াশোনা, খেলাধুলো, নাটক ইত্যাদি অনেক কারণেই স্কুলটির জেলা জুডে় বেশ নাম ছিল৷ আর কো-এডুকেশন বলে উপরের ক্লাসে একটা রোমান্টিক পরিবেশও ছিল৷

প্রশ্ন: তারপর তো বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে৷
উত্তর: হ্যাঁ, আবাসিক কলেজ৷ ঘডি় ধরে ঘুমোতে যাওয়া আর ঘডি় ধরে ওঠা৷ সারা দিনে খান আঠেরো ঘণ্টা পড়ত৷ তবে ভালোই কেটেছিল৷ সোমবারের প্রথম ক্লাসটি ছিল ভারতীয় সংস্কৃতির উপর৷ সারদাপীঠের অধ্যক্ষ সে ক্লাসটি নিতেন৷ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের এখন যিনি অধ্যক্ষ, সেই স্বামী স্মরণানন্দজিও বছর খানেক উপনিষদ পডি়য়েছিলেন৷ ইংরেজির ক্লাস নিতেন অধ্যাপক সুনন্দ সান্যাল, শুধাংশু মৈত্র, বিমলেন্দু ঘোষের মতো পণ্ডিত ও ছাত্রদরদী অধ্যাপকেরা৷ স্বামী শিবময়ানন্দজিকে প্রায় দু’বছর অধ্যক্ষ হিসেবে পেয়েছিলাম৷ তিনি একবার পুজোর ছুটির সময়, আর একজন সাধুকে সঙ্গে নিয়ে, হেঁটে কামারপুকুর চলে গিয়েছিলেন৷ পকেটে টাকা নিয়ে যাননি৷ সাধারণ ভিক্ষুকের মতো ভিক্ষে করতে করতে চলে গিয়েছিলেন৷ রাতে মন্দিরের চাতাল বা হাটচালায় কাপড় বিছিয়ে শুতেন৷ আমার গল্প লেখার শুরু হস্টেলের শনিবারের সাহিত্যসভা, কলেজের দেয়াল পত্রিকা আর বাৎসরিক ছাপা পত্রিকা থেকে ৷

প্রশ্ন: পরের পড়াশোনা তো কলকাতা আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে?
উত্তর: ঠিক তাই৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে পেয়েছিলাম জ্যোতি ভট্টাচার্য, ভবতোষ চট্টোপাধ্যায়, অরুণকুমার দাশগুপ্তের মতো অধ্যাপকদের৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রিকা ‘ক্যাম্পাস’-এ ‘মাদলে নতুন বোল’ নামে আমার একটা গল্প ছাপা হয়৷ এই নামেই আমার প্রথম গল্প সংকলন বের হয় গত শতকের আটের দশকের মাঝামাঝি৷ ভেবেছিলাম ‘গোষ্ঠ ও অন্যান্য গল্প’ নাম দেব৷ অমলেন্দুদা (চক্রবর্তী) বললেন যে ‘মাদলে নতুন বোল’ দিলে ভালো হবে৷ বোধ হয় সত্তর ও আশির দশকের রাজনৈতিক পরিবেশের কথা ভেবে এই নামটি দিতে বলেছিলেন৷ আমার প্রথম কথাযাত্রা বলেও নামটি দিতে পারেন৷ অমলেন্দুদা থাকতেন হাতিবাগানে, আমি ফডে়পুকুরে৷ ‘পরিচয়’ অফিস থেকে অনেক দিন এক ট্রামেই ফিরতাম৷ অমলেন্দুদা আমার ভাড়াও দিতেন৷ একদিন আমি একা উঠেছিলাম৷ আসলে আমার জেড়তুতো দিদির বিয়ের পরের দিন সন্ধেয় সিদ্ধি খাওয়া হয়েছিল৷ তারপর কলেজ স্ট্রিটে গেছি৷ ফেরার সময় সামনের যাত্রীটিকে কনডাক্টর বলে মনে হয়েছিল৷ ভাড়া নিতে বলাতে তিনি ছিটকে চলে গিয়েছিলেন৷

প্রশ্ন: তারপর গবেষণা তো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে?
উত্তর: হ্যাঁ৷

প্রশ্ন: প্রথম উপন্যাস ‘চারণে প্রান্তরে’র কথা বলেছেন৷ দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ভাঙা নীডে়র ডানা’ নিয়ে কিছু বলুন৷
উত্তর: যতদূর মনে পডে়, সেটা ছিল নয়ের দশকের প্রথম দিক৷ মানসকুমার রায়চৌধুরী নামের একজন বয়স্ক ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ‘সংবাদ দর্পণ’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করেন৷ দুর্গাপুজোর কিছুদিন আগে হঠাৎ তাঁর ইচ্ছে হয় শারদ সংখ্যা প্রকাশ করবেন৷ আমার কাছে উপন্যাস লেখার প্রস্তাব এলো৷ লিখলাম আর ১৮৭০ টাকা সম্মানদক্ষিণা পেলাম৷ শব্দ ধরে পয়সা হিসেব করতে গিয়ে ওই রকম একটা সংখ্যা এসেছিল৷

প্রশ্ন: বিষয় কী ছিল? পরে তো বই হল৷
উত্তর: বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান বা চিক নামের একটি পাখি লোকজন মেরে খেয়ে প্রজাতিটিই প্রায় শেষ করে ফেলেছিল৷ হঠাৎ একটা আমেরিকান জার্নালে ছাপা হলো যে একজোড়া চিক পাখি পাত্রসায়েরের জঙ্গলে দেখা গেছে৷ সে পাখিজোড়ার সন্ধানে হায়দরাবাদ থেকে প্রবাসী বাঙালি দিশা চৌধুরী এলো আর পরিবেশ আন্দোলনে জডি়য়ে পড়ল৷ ডায়েরির ফর্মে লেখা সে উপন্যাস৷ মানস রায়চৌধুরী মশায়ের সে উপন্যাসটি ভালো লেগে যায়৷ ‘ইত্যাদি প্রকাশনী’ নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা শুরু করলেন আর তার প্রথম বইটি হল আমার৷ ছ’ফর্মার বই বলে আগাম ছ’হাজার টাকা দিলেন, কফি খাওয়ালেন আর সেইসঙ্গে কিং সাইজের ‘ইন্ডিয়া কিং’ সিগারেট খাওয়ালেন৷ বলেছিলাম ছ’শো কপি ছাপতে, তিনি ছাপলেন তিন হাজার একশো কপি৷ বছর দুয়েকের মধ্যে বিক্রিও করে দিলেন৷ শেষ দিকে দু’কপি বই কিনতে পাঠিয়েছিলাম৷ তিনি দাম না নিয়ে শেষ তিনটি কপি এমনিই দিয়েছিলেন৷ শেষ বার দেখা হওয়ার সময় বলেছিলেন উপন্যাস লিখলে ফর্মা পিছু হাজার টাকা করে অগ্রিম রয়েলটি দেবেন৷ নানা কাজ ও অকাজে পরে আর উপন্যাস জমা দেওয়া হয়নি৷

প্রশ্ন: পরের উপন্যাস ‘মিছিলের পরে’?
উত্তর: হ্যাঁ, বেরিয়েছিল ‘বারোমাস’ পত্রিকার ১৯৯৫-এর শারদ সংখ্যায়৷ ব্রিগেডের মাঠে জনসভায় যোগ দিতে আসা পাঁচ জেলার পাঁচজন দলছুট মানুষকে নিয়ে সে উপন্যাস৷ পাঁচজনের মধ্যে একজন যুবতী আর একজন কিশোর৷ শীতের রাতে ব্রিগেডে আগুন জ্বেলে তারা রাত কাটায় আর নিজেদের জীবনের কথা বলে৷ পঞ্চমজন কথা শুরুর আগেই ভোর হয়ে যায় আর সে বলে পরের বার দলছুট হলে তার জীবনের গল্প শোনাবে৷

প্রশ্ন: এর পরেই বোধ হয় ‘দুখে কেওড়া’ আর ‘ভবদীয় নঙ্গরচন্দ্র’ উপন্যাস দুটি ছাপা হয়৷
উত্তর: ঠিক তাই৷ এই দুটি নামে আমাদের গ্রামে দু’জন মানুষ ছিল৷ একজন পশ্চিম আর একজন উত্তর পাড়ায় থাকত৷ প্রথম উপন্যাসটি প্রশ্ন ও উত্তর পদ্ধতিতে লেখা যদিও প্রশ্নগুলো ছাপা হয়নি৷ দ্বিতীয়টি চিঠির আকারে৷ ‘দুখে কেওড়া’ উপন্যাসটি সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দিতে আর নবমালতী নেওগ চক্রবর্তী ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন৷

প্রশ্ন: আপনি তেলুগু গল্পকার সোমাইয়াজুলু ‘চাসো’র বাইশটি গল্প বাংলায় অনুবাদ করেছেন৷ ‘ভারতজোড়া গল্পকথা’, ‘ভারতজোড়া কথনকথা’ এবং ‘ভারতজোড়া কাব্যগাথা’ নামে ভারতীয় গল্প, লোককথা ও কবিতার তিনটি সংকলনও করেছেন৷
উত্তর: তা তোমাদের মতো অনুবাদকদের সাহায্যের ফলেই সম্ভব হয়েছে৷ তাছাড়া সাহিত্য অকাদেমিতে কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকায় ভারতীয় সাহিত্য পাঠ এবং নানা ভাষার লেখকদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ ঘটেছে৷ এই সব লেখকেরাও নানাভাবে সাহায্য করেছেন৷ সাহিত্য অকাদেমিতে থাকার ফলে ‘কথার কথা’র মতো উপন্যাস লিখতে পেরেছি৷ তুমি জানো যে, উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা আদিবাসী ভাষার লোকগল্পকে ব্যবহার করে কাল্পনিক সেমিনারের ফর্মে লেখা এই উপন্যাসটি৷ বইটি বিশেষ আলোচিত হয়নি, কিন্ত্ত রবিশঙ্কর বল ‘শিলাদিত্য’ পত্রিকায় লিখেছিল যে, আমার লেখা উপন্যাসের মধ্যে ওটিই ওর সবচেয়ে প্রিয়৷

প্রশ্ন: ‘ধনপতির সিংহলযাত্রা’র জন্য আপনি আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন৷ এরপর লিখেছেন ‘হর-পার্বতী কথা’৷ এই দুটি আপনার অন্য উপন্যাসগুলি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা৷ একটি মধ্যযুগের বঙ্গদেশের কথা আর অন্যটি ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাচীন সময় নিয়ে৷ কেন এমন দুটি উপন্যাসের কাজ করলেন?
উত্তর: দেখবে আমাদের দেশে এমনকিছু মানুষ আছেন যাঁরা মনে করেন যে, উনিশ শতকে ইংরেজ আমলের নবজাগরণের আগে বাঙালির কিছুই ছিল না৷ আমি বলতে চেয়েছি পনেরো ও ষোলো শতকে বাঙালির সত্যিকারের প্রথম নবজাগরণ ঘটে৷ সমুদ্র-বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য, কারু ও চারুশিল্প, ধর্ম এবং শরীর ও মনের বল ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাঙালি প্রায় শিখরে পেঁৗছে গিয়েছিল৷ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের আড়াই-তিনশো বছর আগে এটা ঘটে৷ আর ‘হর-পার্বতী কথা’য় আমি ভারতবর্ষকে বুঝতে চেয়েছি৷ এই উপন্যাসের একদিকে যদি মুনি-ঋষিরা থাকে তবে অন্য দিকে আছে আদিবাসী ও ছোটছোট গ্রামের বাসিন্দারা৷ দেখবে হর-পার্বতীর বিয়ের পর ঐশ্বর্যে লালিত পার্বতীকে একটির পর একটি গ্রাম পার করে কৈলাসে নিয়ে গেছে হর৷ পার্বতী বদলেছে সাধারণ মানুষের সাহচর্যে আর হর বদলেছে পার্বতীর সংস্পর্শে৷ এই যাত্রা পুরাণনির্ভর নয়, এটা আমার ঔপন্যাসিক কল্পনা এবং পাহাডি় অঞ্চলে ঘোরার অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি৷ দুটি উপন্যাসেই গদ্যের গড়ন অন্যরকম৷ উপন্যাস তো শুধু কাহিনি ও চরিত্র নির্মাণ করে না, সে বিষয় ও সময়ভিত্তিক ভাষাও তৈরি করে৷ তা থেকেই দুটি কালপর্বের এই শৈলী নির্মাণ৷

প্রশ্ন: পরবর্তী উপন্যাস ‘জোব মুখুজ্যে বাক্যালাপ’-এ খেলা করলেন অতীত ও বর্তমান নিয়ে৷ প্রায় চারশো বছরের সময়পর্বকে এক জায়গায় আনলেন৷ এটা সহজ ব্যাপার নয়৷ এই টাইম মেশিনে কি জেট ল্যাগ জাতীয় অভিজ্ঞতা ?
উত্তর: ঠিক তা নয়৷ সাঁওতালি মেয়েদের সংঘবদ্ধ নাচে দেখবে হাত ধরাধরি করে খানিক এগিয়ে এসে আবার পিছনে ফিরে যায়৷ আবার এগিয়ে আসে আবার সামান্য অন্যভাবে পিছনে চলে৷ তারপর প্যাটার্ন ভাঙে ও নতুন করে গডে়৷ সে রকমই একটা প্রচেষ্টা৷ ‘ধনপতির সিংহলযাত্রায়’ ছিল বঙ্গদেশ, ‘হর-পার্বতী কথা’য় ভারতবর্ষ আর ‘জোব মুখুজ্যে বাক্যালাপ’-এ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য৷

প্রশ্ন: আপনার লেখা গল্প পড়ছি প্রায় তিন দশক ধরে৷ ‘মাদলে নতুন বোল’, ‘রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের ছোটগল্প’, ‘পরিক্রমা’, ‘শাঁখা’, ‘প্রিয়াঙ্কার ছেলেই’ ইত্যাদি থেকে ‘গল্পসমগ্র’৷ ২০২৩ সালে দশটি নতুন গল্প নিয়ে ‘বাংলার এম এ’ প্রকাশিত হল৷ অধিকাংশ গল্পে কোভিডের কথা এল৷
বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারীর সময়ে বাংলার গ্রাম ও শহরের জনজীবনে তার কেমন প্রভাব পড়ল তা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন৷
উত্তর: ওই রকম মারণ রোগের সময়ে সাহিত্যে তার ছায়া পড়বেই৷ বইটিতে তেমন গল্প বেশ কয়েকটি আছে৷ সে সঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোতজমির দখল নেওয়ার কথাও আছে৷ ‘হেঁসো’, ‘রাক্ষস’, ‘সাদা রং টিয়া’, ‘মাংস’ ইত্যাদি গল্পে তার ছবি বোধহয় দেখেছ৷

প্রশ্ন: হ্যাঁ, পডে়ছি৷ লিখেছিও৷ এবার আসি আপনার লেখার বৈশিষ্ট্যে৷ গ্রামের মানুষজন, পরিবেশ, জমিজমা, পশুপাখি, লোকাচার ইত্যাদি আপনার লেখায় সরাসরি প্রভাব ফেলে৷ সে সব গল্প উপন্যাসে উঠে এসেছে নানাভাবে৷ প্রান্তিক ও নিম্নবর্গীয় মানুষের কথা বারবার উঠে এসেছে আপনার লেখায়৷ ‘দিবাকরের পিসি’ উমাশশী দেবী ও ফেঁতিরানি দাসীকে একটি করে উপন্যাস উৎসর্গ করেছেন৷ এঁরা কি আপনার লেখালিখিতে কোনো ভূমিকা পালন করেছেন?
উত্তর: যাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটিয়েছি তাদের কথা আমার লেখায় বেশি করে এসেছে৷ ছোটবেলায় পাড়ার দিবাকরের পিসি উমাশশী দেবীর কাছে গল্প শুনতাম৷ পিসি অসাধারণ কথক ছিল৷ চোখের সামনে সবকিছু ফুটে উঠত৷ আর ফেঁতিদি ছিল নিরক্ষর কীর্তন গায়িকা৷ তার কথনের নাম ছডি়য়েছিল বাঁকুড়া জেলা ছাডি়য়ে মেদিনীপুর জেলা ও জামশেদপুরে৷ পিসি আর ফেঁতিদির বলার গড়নটা আমি লেখার সময়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করি৷

প্রশ্ন: আর অন্য লেখকদের প্রভাব?
উত্তর: দেখো, কবিকঙ্কণ মুকুন্দ, ভারতচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, তারাশঙ্কর, বিভূতি, মানিক, সতীনাথের মতো বাংলা ভাষায় আমার অনেক গুরু৷ পরবর্তী সময়ে কমলকুমার মজুমদার, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মহাশ্বেতা দেবী, দেবেশ রায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো লেখকদের লেখা গল্প ও উপন্যাস পডে়ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি৷ এছাড়া অন্যান্য ভারতীয় ও বিদেশী ভাষার কথাকারেরা তো আছেনই৷

প্রশ্ন: আপনার সমসাময়িক লেখকদের কথা কিছু বলবেন?
উত্তর: আমাদের সময়ের লেখকদের নিয়ে ‘শতাব্দী শেষের গল্প’ নামের একটা সম্পূর্ণ বই আছে৷ এছাড়াও আমার ‘গদ্য সংগ্রহ’ বইটিতেও বেশ কিছু বইয়ের আলোচনা আছে৷ ‘সেরা নবীনদের সেরা গল্প’ সংকলনটি আমাদের সময়ের লেখকদের গল্প নিয়ে তৈরি করা৷ পরের সময়ের লেখকদের নিয়ে ‘আরও নবীন আরও সেরা’ নামে আর একটি সংকলন করি৷ একেবারে সাম্প্রতিক সময়ের লেখকদের লেখা নিয়ে একটি সংকলনের কাজও চলছে৷

প্রশ্ন: আপনার নতুন লেখা?
উত্তর: গেরাসিম লেবেদেভকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখছি৷ কিছু অংশ নানা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে৷ আশা করছি এ বছরেই লেখাটি শেষ হবে৷
আজ তাহলে এ পর্যন্ত থাক৷ ভালো থেকো৷