• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

ভারতের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধে হিতে বিপরীত হতে পারে, সতর্ক করলেন ট্রাম্পের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ আধিকারিক

ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির মুখে ক্রমাগত মর্জিমাফিক শর্ত দিচ্ছেন ট্রাম্প। সেই শর্তগুলি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক স্বার্থকে ভঙ্গ করছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতের সঙ্গে ট্রাম্পের গোয়ার্তুমি নিয়ে সতর্ক করলেন তাঁর এক প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ আধিকারিক। ট্রাম্পের এই ‘শুল্ক যুদ্ধ’র জন্য আমেরিকাকে বড় মূল্য চোকাতে হতে পারে বলেও সতর্ক করলেন ওই আধিকারিক। ট্রাম্পের এককালের ঘনিষ্ঠ ওই সহযোগীর নাম জন বোল্টন। তিনি ট্রাম্পের প্রথম দফার শাসনকালে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। বোল্টন জানিয়েছেন, ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে ট্রাম্প ভেবেছিলেন ভয়ে ভারত পিছু হটবে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে নয়াদিল্লি দমে যাওয়া তো দূরের কথা, বরং উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে, যা আমেরিকার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।

প্রসঙ্গত, বর্তমান বিশ্বে আমেরিকার প্রতিযোগী দুই শক্তিশালী দেশ চিন ও রাশিয়া। তাদের সংস্পর্শ থেকে ভারতকে সবসময় দূরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। এটাই ছিল তাদের কূটনৈতিক কৌশল। গত বেশ কয়েকবছর ধরে সেই প্রচেষ্টায় অনেকটা সফলও হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শুল্ক যুদ্ধের জেরে দীর্ঘ দুই দশকের সেই সাফল্যে এবার জল ঢেলে দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনটাই দাবি করলেন প্রাক্তন আধিকারিক বোল্টন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘এর জন্য ওয়াশিংটনকে বড় মূল্য চোকাতে হবে।’

Advertisement

সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন জন বোল্টন। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমেরিকা চেয়েছিল, ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়ে রাশিয়ার ক্ষতি করবে। কিন্তু তা তো হলই না। বরং ভারত সেই রাশিয়ার থেকেই তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি মস্কো এবং বেজিংয়ের আরও কাছাকাছি চলে এলো। এটা শুধু স্বল্পমেয়াদে নয়, দীর্ঘমেয়াদেও ভারত-মার্কিন সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বোল্টন।

Advertisement

ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির মুখে ক্রমাগত মর্জিমাফিক শর্ত দিচ্ছেন ট্রাম্প। সেই শর্তগুলি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক স্বার্থকে ভঙ্গ করছে। এই শর্তগুলি রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কেরও ঘোরতর পরিপন্থী। কিন্তু এই জটিল পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখেছেন নয়াদিল্লির প্রতিনিধিরা। তাঁরা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে প্রকাশ্য বাগ্‌‌যুদ্ধে না জড়িয়ে স্থৈর্য বজায় রেখে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, ট্রাম্প চেয়েছিলেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতকেও মাথানত করে রাখতে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। বিশেষ করে সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক মহলে বার বার (আনুমানিক বার ত্রিশেক) নিজের কৃতিত্ব দাবি করলেও ভারত সেই দাবি স্বীকার করেনি। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বারবার বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়েছে। তাতে যথেষ্ট গোঁসা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তাতে ট্রাম্পের হতাশা, রাগ ও তিক্ততা গ্রাস করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেজন্যই তিনি উল্টো পথে হেঁটে ভারতের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আড়াই দশক পিছিয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে এক ধাক্কায় আড়াই দশক আগের তিক্ততায় নিয়ে যেতে চাইছেন কেন? আসলে অন্যান্য দেশ মাথানত করে ট্রাম্পের শর্ত মেনে নিলেও ট্রাম্পের হুমকির মুখেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি নয়াদিল্লি। এ ব্যাপারে শনিবারই ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। আবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও দশদিন পরে মস্কো যাচ্ছেন।

Advertisement