• facebook
  • twitter
Thursday, 12 June, 2025

বিক্ষোভ-আন্দোলনে জেরবার, চাপে ইউনূস সরকার

শাস্তি পেলে সেই কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা যাবে না।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নয়া অধ্যাদেশকে ‘দমনমূলক’ আখ্যা দিয়ে সরকারকে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারিরা। দাবিপূরণ না-হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই সরকারি কর্মচারীরা। আন্দোলনের জেরে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশের  ইউনূস সরকার। টানা চার দিন ধরে ঢাকায় সরকারি সচিবালয়ের ভিতর বিক্ষোভ মিছিল করে আসছেন বিভিন্ন দপ্তর এবং বিভাগের কর্মচারীরা। মঙ্গলবারও এই কর্মসূচির ডাক দেন তাঁরা। এদিনও সকাল থেকে সচিবালয়ের ভিতরে সেখানকার কর্মচারী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সাংবাদিকরাও ঢোকার অনুমতি পাননি। এদিন সচিবালয়ের মূল প্রবেশপথের সামনে মোতায়েন করা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি এবং বিশেষ বাহিনী সোয়াটকে। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় সচিবালয়, ইউনূসের সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ এবং সংলগ্ন এলাকা। এই এলাকায় মিটিং-মিছিল, সভা করা নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

 
পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেন কর্মচারীরা।  সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রত্যাহারের দাবিতে এই কর্মসূচী। এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল আসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি মতপ্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন। পরে তিনি জানিয়েছেন, এই অধ্যাদেশ বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করার কোনও প্রশ্ন নেই। বরং ভবিষ্যতে এই আন্দোলন আরও তীব্র হবে।  
 
ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের এই আন্দোলন। সম্প্রতি শেখ হাসিনার আমলের ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি আইন সংক্রান্ত আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ -এর খসড়া অনুমোদিত হয়। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আন্দোলনে নামেন সে দেশের সরকারি কর্মীদের বড় একটি অংশ। আন্দোলনের মধ্যেই গত রবিবার নয়া অধ্যাদেশ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপরই আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ে।
 
সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীরা যদি এমন কোনও কাজ করেন, যা সরকার বা প্রশাসনের আনুগত্যের পরিপন্থী, তা হলে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে। তা ছাড়া যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ছুটি নিলে, সহকর্মীকেও এই কাজে প্ররোচিত করলে কিংবা নির্দিষ্ট কাজ করতে ব্যর্থ হলেও সরকারি কর্মচারীদের চাকরি চলে যেতে পারে বলে এই নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে। এই সবই অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কোনও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হবে। কোনও কর্মচারী দোষী সাব্যস্ত হলে কেন তাঁকে শাস্তি দেওয়া হবে না, তা জানাতে ৭ দিন সময় দেওয়া হবে। শাস্তি পেলে সেই কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা যাবে না।
 
এই সংশোধিত অধ্যাদেশকে ‘কালো অধ্যাদেশ’ বলে অভিহিত করে আন্দোলনে নেমেছেন একাধিক কর্মচারী সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁদের বক্তব্য, এই অধ্যাদেশ সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করা না-হলে আন্দোলন চলবে। 
 
ইউনূস সরকার এখনও পর্যন্ত এই আন্দোলনরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম সমর্থক, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারি কর্মচারীদের সমালোচনা করে  হুঁশিয়ারির দিয়ে বলেছেন, আন্দোলনরত কর্মীদের অন্যত্র বদলি করা হতে পারে।
 
সরকারি কর্মচারিদের এই বিক্ষোভের মধ্যেই সোমবার থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জনের ডাক দিয়েছেন তারা। তাঁরা কাজে যোগ না-দিলে প্রাথমিক স্তরে পঠনপাঠন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 
 
গত জুলাইয়ে গণবিক্ষোভের জেরে গদিচ্যুত হতে হয়েছিল হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূস। বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষের দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে  কর্মচারী, শিক্ষক, রাজনৈতিক দল এবং সামরিক বাহিনীর চাপের সম্মুখীন হয়েছে তাঁর সরকার।

সরকারের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ও নির্বাচনী সময় নিয়ে বিতর্কের জেরে  পদত্যাগ করতে পারেন ইউনূস সরকার এমন সম্ভাবনা দেখা দেয়। যার ফলে দেশের রাজনীতি আরও অস্থির হয়ে ওঠে। যদিও ইউনূস সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না।তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ না করে কোথাও যাব না। ইউনূস সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইউনূস বলেছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ।সেনার তরফেও দ্রুত নির্বাচন ঘোষণার কথা বলা হয়।