অর্থনীতির নােবেল : বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, ব্রাকও প্রশংসিত হয়েছে

অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার ডাফলাে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এখুনি অর্থনীতিতে পয়সা আনতে হবে এবং গরিবের হাতে আরও বেশি টাকা আনতে হবে।

Written by Basudeb Dhar Dhaka | October 17, 2019 3:19 pm

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি, এস্থার ডাফলাে এবং মাইকেল ক্রেমারকে নােবেল দেয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে সেটি হলাে দারিদ্র বিমােচনে তাদের পরীক্ষানির্ভর গবেষণা পদ্ধতি। বাংলাদেশ থেকেই যাত্রা শুরু করা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কিংবা ব্র্যাকের মতাে প্রতিষ্ঠানগুলােও এক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে।

অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার ডাফলাে পরে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এখুনি অর্থনীতিতে পয়সা আনতে হবে এবং গরিবের হাতে আরও বেশি টাকা আনতে হবে। যদিও দারিদ্র বিমােচন নিয়ে গত দুদশকে বিশ্বজুড়ে গবেষখরা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করেছেন। অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার ডাফলাে তাঁদের একটি বইয়ে অবশ্য বলেছে, দিনে সােয়া এক ডলার বা তার চেয়ে কম আয় করা চরম দরিদ্রদের দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রথেকে বের করে আনা খুবই কঠিন।

তাঁদের গবেষণায় তাঁরা সেই চেষ্টাই করেছে। যাতে করে দারিদ্রের ফাঁদ থেকে মানুষকে বের করে আনার উপায় বের করা যায়। আর এজন্য তাঁরা দারিদ্র বিমােচন বা নিরসনের এতােদিনকার তাত্ত্বিক উপায় থেকে বেরিয়ে এসে প্রায়ােগিক ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন।

কলকাতায় জন্ম নেয়া মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ ও তাঁর সহযােগীরা বাংলাদেশের ব্র্যাকের একটি মডেল নিয়ে কাজ করেছেন অন্য কয়েকটি দেশে। আর এক্ষেত্রে তাঁরা গবেষণা করেছেন অনেকগুলাে দারিদ্র দেশে। ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ও অর্থনীতিবিদ হােসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, দারিদ্র বিমােচনের ক্ষেত্রে আগের গবেষণা বা কাজগুলাের সাথে অভিজিৎ ব্যানার্জি, এসথার ডাফলাে ও মাইকেল ক্রেমারের কাজের পার্থক্য হলাে এতে দর্শন বা তত্ত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রায়ােগিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে। যদিও এর সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলােচনা হচ্ছে, তারপরেও এখানে দারিদ্রবিমােচন কর্মসুচির নকশা ও তা সফল হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের আরেক অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান বলছেন, এককথায় কোন কোন পদক্ষেপে দারিদ্র আরও দ্রুত নিরসন করা যায় সেটিই এবারের নােবেলজয়ীরা বের করার চেষ্টা করেছেন।

সৌদি ব্যবসায়ীর অর্থে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনােলজি বা এমআইটিতে গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আব্দুল লতিফ জামিল পােভার্টি অ্যাকশন ল্যাব। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল ক্রেমারকে সাথে নিয়ে সেখান থেকেই গবেষণাটি করেছেন অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার ডাফলাে। দ্য রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস বলেছে, তাঁদের নতুন নিরীক্ষাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়ন অর্থনীতিতে রূপ নিয়েছে, যা এখন গবেষণার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বিকশিত হচ্ছে।

ধরুন কোনাে এলাকার মানুষ দরিদ্র। স্বাভাবিকভাবে সেখানকার মানুষজন তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানাের বদলে কোথাও কাজে দিয়ে অর্থ পেতে আগ্রহী থাকেন। এই গবেষকরা বলেছেন এই অভিভাবকদের কিছু অর্থ দিলে হয়তাে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন। কিন্তু তারা এই পরামর্শ দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তারা তাদের গবেষণায় নির্দিষ্ট এলাকা থেকে নমুনা ব্যক্তি বাছাই করে তাদের অর্থ দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন যে সেটি আসলেই কাজ করছে কিনা।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এই গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেছেন যে কোনাে ধরনের শিক্ষা দরকার এবং কি করলে মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষা নেয়ার জন্য পাঠাবাে। ধরুন একটি দরিদ্র এলাকায় মানুষ কৃষিকাজ করছে। সেই এলাকার লােকদের শহরে আসার বাসের টিকেট দেওয়া হলাে। এই টিকেট দেয়ার পর এই গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেছেন যে ওই টিকেট ব্যবহার করে মানুষগুলাে তাদের পণ্য নিয়ে শহরে যেতে উৎসাহী হচ্ছে কিনা এবং গেলে তাদের লাভ হচ্ছে কিনা।

হােসেন জিলুর রহমান বলেছেন, দারিদ্র বিমােচন করতে হলে দার্শনিক জায়গা নয় বরং অবকাঠামােগত সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র বিমােচন করতে হবে, এটিই এবারের নােবেলজয়ী অর্থনীতিবিদরা বােঝানাের চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ দারিদ্র বিমােচন কর্মসূচির নকশা এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে কোনাে অংশের কারণে সফল হচ্ছে বা হচ্ছে না সেটার জন্য পদ্ধতিগত অভিনবত্ব এনেছেন তাঁরা। 

অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন এই গবেষকরা দারিদ্রের বড় ক্যানভাস ভাগ করে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। তারা কৃত্রিমভাবে পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করেছেন। এবং দারিদ্রের কারণগুলাে ভেঙে এর ভেতরে ঢুকে বিশ্লেষণ করে নীতিগত সুপারিশ করেছো–এটাই তাদের বিশেষত্ব। একেক এলাকায় একেক ধরণের দারিদ্র। অর্থ দিয়ে তারা কী করবে? এ ধরণের ছােট ছােট ভাগে ইস্যগুলাে বের করে তারা দেখেছে যে আসলে কোথায় জোর দিতে হবে।