মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই (ফেডেরাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন)-এর নতুন ডিরেক্টর হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কাশ প্যাটেল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কাশ। বৃহস্পতিবার কাশের নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছে আমেরিকার সেনেট। তাঁর পক্ষে ভোট পড়ে ৫১টি এবং বিপক্ষে ৪৯টি। ডেমোক্র্যাট সেনেটরদের সবাই তাঁর বিপক্ষে ভোট দেন। ভোটাভুটিতে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সেনেটের দুই মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সদস্য। তাঁরা হলেন সুজান কলিন্স ও লিসা মুরকোস্কি।
বাছাইপর্বের শেষে কাশ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে জানান, এফবিআইয়ের উপর নতুন করে আস্থা ও ভরসা ফিরিয়ে আনাই হবে তাঁর একমাত্র কাজ। একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, যারা আমেরিকার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তাদের খুঁজে বের করে মানা হবে। তা সে তারা পৃথিবীর যে কোণাতেই লুকিয়ে বসে থাকুক না কেন। এই প্রথম এফবিআইয়ের ডিরেক্টর হিসাবে কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে নিয়োগ করা হল।
এর আগে এফবিআইয়ের ডিরেক্টর ছিলেন ক্রিস্টোফার রে। তিনিও ট্রাম্পের বিশেষ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। ১০ বছর ধরে তিনি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। এ বার তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পাচ্ছেন কাশ। যদিও কাশের নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মার্কিন সেনেটের অন্যতম সদস্য সুজান কলিন্সের মন্তব্য, গোয়েন্দা সংস্থার মাথায় কোনও ‘অরাজনৈতিক’ ব্যক্তির থাকা উচিত। কাশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংসর্গের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
কাশ প্যাটেলের পুরো নাম কাশ্যপ প্রমোদ প্যাটেল। যদিও আমেরিকার প্রশাসনিক মহলে তিনি পেন্টাগনের ‘কাশ’ নামেই খ্যাত। ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত প্যাটেল। কাশের বাবা উগান্ডার ও মা তানজানিয়ার হলেও নিউইয়র্কেই জন্ম কাশের। ১৯৭০ সাল থেকে তাঁর পরিবার আমেরিকা চলে আসে। নিউইয়র্কেই আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। পরে অবশ্য ফ্লোরিডায় চলে যান।
ফ্লোরিডায় রাজ্য ও ফেডারেল আদালতে ক্লায়েন্টদের প্রতিনিধিত্ব করে পাবলিক ডিফেন্ডার হিসাবে তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন কাশ। পূর্ব আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মামলায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিচার বিভাগে প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে হোয়াইট হাউসে কাউন্টার টেররিসম ডিরেক্টরেট অফ দ্য ন্যাশনাল সিকিওরিটি কাউন্সিল বা এনএসসির সিনিয়র ডিরেক্টর পদে ছিলেন কাশ।
বেসামরিক আইনজীবী হিসাবে প্রতিরক্ষা বিভাগে তাঁর মেয়াদকালে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে জোর দেন কাশ। কংগ্রেসম্যান ডেভিন নুনেসের নজরে পড়েন এই তরুণ আইনজীবী। নুনেস হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন প্যাটেলকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সিনিয়র কাউন্সেল হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন।
কাশ প্যাটেল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই শিরোনামে এসেছিলেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার নিয়ে এফবিআইয়ের তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে বিতর্কিত জিওপি মেমোর খসড়া তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। আমেরিকান মিডিয়া একে ‘কাশ মেমো’ হিসেবে উল্লেখ করে। ৪৪ বছর বয়সী প্যাটেল ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা নীতিতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন।
এর আগে একাধিকবার কাশ খোলাখুলিভাবে এফবিআই সংস্কারের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। রক্ষণশীল শন রায়ান শোতে একটি সাক্ষাৎকারে, প্যাটেল এফবিআইয়ের গোয়েন্দা-সংগ্রহের কার্যক্রম ভেঙে দেওয়া এবং এর সদর দফতর পুনর্নির্মাণসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।