• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

গাজার ২০-দফার শান্তি পরিকল্পনা ট্রাম্পের, বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

অনেক গাজার বাসিন্দা এই পরিকল্পনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, এটি ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার একটি কৌশল মাত্র।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

গাজায় শান্তি স্থাপনে ২০-দফার পরিকল্পনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ঘোষিত এই ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর এই পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। গাজার চলমান সংঘর্ষ শেষ এবং বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদ এবং সন্দেহ দুই-ই রয়েছে। কিছু আরব রাষ্ট্রের নেতারা ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সম্ভাবনাময় পথ হিসেবে তাঁরা দেখছেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, পরিকল্পনার সফলতা সম্পূর্ণভাবে হামাসের গ্রহণযোগ্যতা ও বাস্তবায়নের উপর নির্ভরশীল, যা এখনও অনিশ্চিত।

Advertisement

পরিকল্পনার পক্ষে যেসব রাষ্ট্র আশাবাদী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, সেগুলি হল— মিশর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এইসব রাষ্ট্র ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তার নেতৃত্ব ও শান্তির পথ খোঁজার প্রয়াসে আস্থা রেখেছে। আবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ট্রাম্পের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনায় আশা ব্যক্ত করেছে।

Advertisement

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত এই বহুমুখী পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাই। এটি ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের একটি কার্যকর পথ প্রস্তাব করে।”

অন্যদিকে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ কেউ সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের মতে, হামাস এখনও এই পরিকল্পনা নিয়ে “ভালো ইচ্ছার” মূল্যায়ন করছে। তবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) এটিকে “অঞ্চল ধ্বংসের প্রক্রিয়া” হিসেবে অভিহিত করেছে। অনেক গাজার বাসিন্দা এই পরিকল্পনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, এটি ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার একটি কৌশল মাত্র।

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার মূল উপাদানগুলি:

গাজায় সকল সামরিক অভিযান স্থগিত রাখা এবং ইসরায়েলি সেনাদের নির্ধারিত সীমান্তে ফিরে যাওয়া।
৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত ইসরায়েলি বন্দীর মুক্তি এবং বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি।
গাজাকে “চরমপন্থা-মুক্ত অঞ্চল” হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ গাজার প্রশাসন দেখভাল করবে, যেখানে ফিলিস্তিনি প্রযুক্তিবিদ্যাগত কর্তৃপক্ষ নীতি বাস্তবায়ন করবে।
গাজার মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত মানবিক সহায়তাকারীর প্রবেশে ছাড় দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে নজরদারি।

তবে, এই পরিকল্পনার সফলতা হামাসের গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উপর নির্ভরশীল, যা এখনও অনিশ্চিত। এছাড়া, কাতার ও সৌদি আরবের ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। যদিও কাতার গত দুই বছরে যুদ্ধকালীন আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখেছে। ইসরায়েল ভবিষ্যতে রিয়াধের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে নজর রাখছে।

এই শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণার মধ্যেও নেতানিয়াহুর সরকারের মধ্যে বিরোধ অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো চুক্তির জন্য চরমপন্থী মন্ত্রীরা হামাস ধ্বংসসহ নানা শর্ত আরোপ করছে।

প্রসঙ্গত, গাজার বর্তমান সংঘাত ইতিমধ্যে ভয়ানক মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ৬৬,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি হয়েছেন নিহত এবং গোটা অঞ্চলটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কি সত্যিই এই মানবিক বিপর্যয় থামানো যাবে, সেটিই এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রধান আলোচ্য বিষয়।

Advertisement