আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার গভীর রাতে অন্তত ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে শুল্ক বিষয়ক চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। চিঠিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। যদিও এই হার এখনও অনেক বেশি, তবে এপ্রিল মাসে ঘোষিত ৩৭ শতাংশ শুল্কের তুলনায় এটি ২ শতাংশ কম। এই ঘোষণায় আংশিক স্বস্তি মিলেছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারক মহলে। চিঠিটি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নামে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও ১৩টি দেশের ক্ষেত্রেও নতুন করে শুল্ক নীতির ঘোষণা এসেছে। এর মধ্যে জাপান ও মালয়েশিয়ার উপর শুল্ক হার সামান্য বাড়ানো হয়েছে। এই দুই দেশের ক্ষেত্রে আগে শুল্ক হার ছিল ২৪ শতাংশ, যা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে কাজাখস্তান, লাওস, মায়ানমার, তিউনিশিয়া, সার্বিয়া, কম্বোডিয়া ও বসনিয়ার উপর আরোপিত শুল্ক হার কিছুটা কমানো হয়েছে।
Advertisement
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, লাওসের উপর ৪৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ, মায়ানমারের উপর ৪৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার উপর ৪৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৬ শতাংশ, বসনিয়ার উপর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার উপর ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২ শতাংশ এবং তিউনিশিয়ার উপর ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে পূর্বঘোষিত শুল্ক হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়ার উপর ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের উপর ৩৬ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার উপর ৩২ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে।
Advertisement
এদিকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে মার্কিন প্রশাসনের হুমকিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই ঘোষণায়। ট্রাম্প ‘ব্রিক্স’ জোটের দেশগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, যদি কোনও দেশ ‘আমেরিকা বিরোধী নীতি’ অনুসরণ করে, তাহলে তাদের উপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ‘ব্রিক্স’-এর সদস্য দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আগের ঘোষিত ৩০ শতাংশ শুল্ক অপরিবর্তিত রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে ভারত এবং আমেরিকার বাণিজ্যচুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়ে ওঠেনি। দু’দেশের মধ্যে দর কষাকষি অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।
নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছি। চিনের সঙ্গেও চুক্তি হয়ে গিয়েছে আমাদের।’ ট্রাম্পের দাবি, বাণিজ্যিক ভাবে আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা এগিয়ে গিয়েছে। বাকি দেশগুলি যদি আমেরিকার শর্ত পূরণ না-করে, তবে তাদের নতুন শুল্ক-বিজ্ঞপ্তি ধরানো হবে।
যে দেশগুলিকে চিঠি পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প, তাদের সঙ্গে আসলে আমেরিকার কোনও বাণিজ্যিক বোঝাপড়া হয়ে ওঠেনি। সেই কারণেই নিজেদের সিদ্ধান্ত চিঠি দিয়ে ওই দেশগুলিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে হোয়াইট হাউস। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অন্য যে দেশগুলির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা কোনও চুক্তি করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। তাই আমরা তাদের শুধু একটি করে চিঠি পাঠাচ্ছি। ওই দেশগুলিকে কত শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, তা জানিয়ে দিতে আমরা বিভিন্ন দেশকে চিঠি পাঠাচ্ছি।’
Advertisement



