বাংলাদেশে শবে বরাতের তারিখ নিয়ে বিতর্ক গড়ালাে উচ্চ আদালতে

বাংলাদেশে শবে বরাতের তারিখ ঘােষণার বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়িয়েছে। ২০ এপ্রিল শবে বরাত পালনের কথা। অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১ এপ্রিল শবে বরাত পালনের ঘােষণা দিয়েছে।

Written by Basudeb Dhar Dhaka | April 17, 2019 7:38 am

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি (Photo: IANS)

বাংলাদেশে শবে বরাতের তারিখ ঘােষণার বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়িয়েছে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন গত ৬ এপ্রিল জানিয়েছিলাে যে আগামি ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে মুসলমানদের শবে বরাত পালিত হবে। ফাউন্ডেশন বলেছিলাে, ৬ এপ্রিল দেশের কোথাও চাঁদ দেখা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত সঠিক নয় দাবি করেছে মজলিসে রুইয়াতুল হিলাল নামে একটি সংগঠন। ২০ এপ্রিল দিবাগত রাতে শবে বরাত ঘােষণার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়েরের অনুমতিবিষয়ক শুনানিতে গতকাল সােমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছে, পবিত্র শবে বরাত ধর্মীয় স্পর্শকাতর ইস্যু, এটি মামলার বিষয়বস্তু বানানাে ঠিক হবে না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নূরুল ইসলাম বলেছেন, ৬৪ জেলার প্রতিটিতে জেল প্রশাসকের নেতৃত্বে যে কমিটি রয়েছে সেসব কমিটি ও আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালােচনা করে শাবান মাস ও শবে বরাতের বিষয়ে ঘােষণা দেওয়া হয়েছিলাে। তিনি আরও বলেন, চাঁদ দেখা কমিটিগুলােতে জেলা প্রশাসক, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ছাড়াও স্থানীয় আলেমদের প্রতিনিধিরা থাকেন।

দেশের প্রতিটি জেলা কমিটি নিশ্চিত হয়ে জানিয়েছিলাে যে তাদের জেলায় কেউ চাঁদ দেখেনি ৬ এপ্রিল। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির যে সভায় ২১ এপ্রিল শবে বরাত পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে সভাপতিত্ব করেছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নিজেই ধর্ম সচিবসহ মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা ছাড়াও মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন এবং আবহাওয়া অধিদফতরের প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে যােগ দিয়েছিলেন। কমিটির সদস্য তালিকায় কয়েকটি মসজিদের খতিব ও ইমামসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আলেমও রয়েছেন।

এদিকে মজলিসে রুইয়াতুল হিলালের সভাপতি এবিএম রুহুল হাসান বলেছেন, তারা নিয়মিত চাঁদ পর্যবেক্ষণ করেন এবং চাঁদ সংক্রান্ত গবেষণার পাশাপাশি সারাদেশে তাদের স্বেচ্ছাসেবীরাও চাঁদ উঠেছে কিনা সেটি দেখতে কাজ করেন। যেদিন আমরা চাঁদ খুজি তার আগেই আমরা তা অনুধাবন করি। কয়েকটি প্যারামিটার আছে। সবগুলাে প্যারামিটারেই অত্যন্ত সম্ভাবনা ছিলাে। তিনি আরও জানান, সেদিন কিছু জায়গায় আকাশ মেঘলা ও কিছু জায়গায় পরিষ্কার ছিলাে। সেজন্যই স্বেচ্ছাসেবীদের আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে বলেছিলাম। হাসানের দাবি, ৬ এপ্রিলেই খাগড়াছড়িতে চাঁদ দেখা গেছে সন্ধ্যা ৬ টা ৩৫ মিনিটে যা স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে দেখেছেন।

তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জেও চাঁদ দেখা গেছে সেদিন। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কেউ আমলে না নিয়ে শাবান মাস ও শবে বরাতের তারিখ ঘােষণা করেছেন। এবিএম রুহুল হাসান বলেন, শরিয়ত অনুযায়ী দুজন মুসলমান পুরুষ যদি চাঁদ দেখেন তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহণযােগ্য হবে। আমরা খাগড়াছড়ি ও মুন্সিগঞ্জ থেকে সতেরাে জন সাক্ষী এনেছিলাম, যার মধ্যে মসজিদ মাদ্রাসার ইমামও রয়েছেন।

মজলিসে রুইয়াতুল হিলালের পক্ষ থেকে পরে সংবাদ সম্মেলন করা হলে জরুরি সভা ডাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলাম বলেন, ভিন্নমত আসায় গত শনিবার তারা বৈঠক করেছেন যেখানে ভিন্নমত প্রদানকারীরাও যােগ দিয়েছিলেন। আমরা আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে এগারাে সদস্যের একটি উপ-কমিটি করেছি। আশা করছি আগামি দু’দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আমরা পৌছাতে পারবাে।

তবে মজলিসে রুইয়াতুল হিলালের সভাপতি হাসান বলেন, ওই বৈঠকে তাদের বক্তব্য ঠিক মতাে শােনা হয়নি। ২০ এপ্রিল শবে বরাত পালনের কথা। অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১ এপ্রিল শবে বরাত পালনের ঘােষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা চাই শরিয়ত অনুযায়ী কাজ হােক। সঠিক তারিখে হােক। ধর্মীয় চেতনা থেকেই এটা বলছি আমরা।

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিতে আছেন এমন কয়েকজন বলেছেন, দেশের একটি সম্প্রদায় আছে যারা একদিন আগে রােজা শুরু বা ঈদ পালন করে তাদেরই একটি অংশ এবার শবে বরাত নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও ভিন্নমত পােষণকারী মজলিসে রুইয়াতুল হিলালের সভাপতি এবিএম রুহুল হাসান বলেছেন, চাঁদ জন্য ও দেশের আকাশে চাঁদ দেখা যাওয়া-এগুলাের যথাযথ প্রশিক্ষিত পর্যবেক্ষকও এ প্রতিষ্ঠানটির নেই। সে কারণেই চাঁদ দেখা নিয়ে সমস্যা হয়। আবার স্থানীয় পর্যায়ে কেউ চাঁদ দেখলে সেটি প্রশাসনকে জানানােও সহজ কাজ নয়। ফলে অনেকে দেখেও আগ্রহী হন না। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, খালি চোখে দেখা না গেলে তখন বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ ও মহাকাশ গবেষণার সাথে জড়িতরা চাঁদ নিয়ে নির্ভুল তথ্য দিয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা। সে কারণেই এ নিয়ে বিভ্রান্তির আবকাশ নেই বলে মনে করছেন তারা।

হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়েরের জন্য অনুমতি প্রত্যাশীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারি আটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। তিনি বলেন, যাঁরা রিট করার অনুমতি চেয়েছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ শাবান মাসের চাঁদ দেখেছেন বলছেন। এই বিষয়ক যেসব তথ্য তাঁদের কাছে আছে, তা-সহ তাদের লিখিত আবেদন ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জমা দিতে বলেছেন আদালত। তাদের লিখিত আবেদন যেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন জমা নেয়, তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপকে বলা হয়েছে। পবিত্র শবে বরাত করে তা নির্ধারণে ১৭ এপ্রিল জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আছে। এই তথ্যসহ সব তথ্য পর্যালােচনা করে ধর্মীয় অনুশাসন অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন আদালত।

২০ এপ্রিল দিবাগত রাতে শবে বরাত ঘােষণা দিতে নির্দেশনা চেয়ে মসজিদের ইমাম, খতিবসহ ১০ ব্যক্তি রিট দায়েরের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন বলে জানান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, রিট দায়েরে ইচ্ছুক আবেদনকারীদের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।