নেপালের জমি দখল করে রাস্তা বানাচ্ছে চিন, ঘোরানো হচ্ছে নদীর গতিপথও

চিন দেশের উত্তরে তিব্বত সীমান্তে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছ। সেই কাজ করতে গিয়ে অন্তত এগারোটি স্থানে চিন সীমান্ত লঙঘন করে নেপালের জমি দখল করেছে।

Written by SNS Kathmandu | June 25, 2020 11:04 am

নেপালে চিন দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ। (Photo: IANS)

এবার চিনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ উঠল নেপাল সরকারের অভ্যন্তরেই। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শৰ্মা ওলির সরকারের সার্ভে দফতরের এক রিপোর্ট সামনে এসেছে। সেখানে কৃষি মন্ত্রকের সার্ভে রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে। চিন দেশের উত্তরে তিব্বত সীমান্তে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছ। সেই কাজ করতে গিয়ে অন্তত এগারোটি স্থানে চিন সীমান্ত লঙঘন করে নেপালের জমি দখল করেছে।

দশটি জায়গায় ৮১.৫৪ একর (৩৩ হেক্টর) জমি নেপালের হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নেপাল ভূখন্ডের পাহাড়ি নদীগুলির গতিপথ ঘুরিয়ে তিব্বতে জলের ব্যবস্থাও করেছে চিন! এমনটাও খবর। যদিও চিনা দখলদারি সম্পর্কে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

এদিকে প্রায় ৪০০ কিমি ভারতীয় ভূখন্ডকে জুড়ে নেপাল পার্লামেন্ট নয়া মানচিত্রের অনুমোদন দিয়েছে। নেপালের সরকারের সঙ্গে বেজিংয়ের বন্ধুত্বতার কথা রাজনৈতিক মহলে উঠে এসেছিল নতুন মানচিত্রে নেপাল পার্লামেন্ট সায় দেওয়ার সময়। কিন্তু এবার চিনা দখলদারির উল্লেখ নেপালের একটি রিপোর্টে সামনে আসায় নতুন করে বিতর্ক মোড় নিয়েছে।

এর আগে নেপালের সিন্ধুপালচক জেলার সীমান্তবর্তী এগারো হেক্টর জমি তিব্বতের অংশ হিসেবে দাবি করেছে চিন। চিনা আগ্রাসনের আশঙ্কায় সেখানকার নেপালি গ্রামবাসীরা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। ঠিক এই অংশেই খারানে খোলা এবং ভোটে কোশী নদীর গতিপথ আলাদা হয়েছে। নেপালের আশঙ্কা হিমালয়ের বরফগলা জলে পুষ্ট ওই দুই নদীর গতিপথও ভবিষ্যতে তিব্বতের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করবে চিনা ইঞ্জিনিয়াররা।

ভারত ও বাংলাদেশের আপত্তি উড়িয়ে চিনের ইউনান প্রদেশে মেকং অববাহিকায় ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একাধিক পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে চিন। লাদাখের অধিকৃত আকসাই চিন এলাকায় একাধিক নদী ও হিমবাহের গতিপথ বদলে দিয়ে জলের দখল নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চিনের বিরুদ্ধে।

একইভাবে তিব্বত থেকে নেপালের দিকে প্রবাহিত সুমজং, কামখোলা এবং অরুণ নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার মধ্য নেপালের সঙ্গুয়াসভা জেলার জলের অভাব দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় ইতিমধ্যেই নেপালের নয় হেক্টর জমি বেজিংয়ের গ্রাসে চলে গিয়েছে। নেপাল কৃষি সার্ভে দফতরের রিপোর্টে বলা হয়েছে এভাবে নদীর গতিপথ বদলে জমি দখলের প্রক্রিয়া জারি থাকলে অচিরেই আমাদের কয়েকশো হেক্টর জমি তিব্বতের হয়ে যাবে।

নেপালের কৃষি মন্ত্রকের সার্ভে দফতরের রিপোর্টে বলা হয়েছে নেপাল-তিব্বত সীমান্তের হুমলা জেলায় দশ হেক্টর, মধ্য অংশের রাসুয়া জেলায় ছয় হেক্টর জমি দখল করে চিন রাস্তা নির্মাণ করছে। সেই সঙ্গে গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে বাগডারে খোলা এবং কারনারি নদীর। অদূর ভবিষ্যতে চিন অধিকৃত তিব্বতের দিকে নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার আগামীতে জল সঙ্কটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে নেপালে।

এদিকে নেপালের সঙুয়া সভা জেলার জলের অভাব তৈরি হচ্ছে। ওই জেলায় নেপালের নয় হেক্টর জমি নাকি চলে গিয়েছে বেজিংয়ে গ্রাসে। নেপালের কৃষি মন্ত্রকের সার্ভে রিপোর্ট বলছে এভাবে লতে থাকলে অচিরেই নদীর গতিপথ বদলের কারণে আমাদের কয়েকশো হেক্টর জমি তিব্বতের হয়ে যাবে। নেপালের সিন্ধুপালকচ জেলার সীমান্তবর্তী ১৯ হেক্টর জমি তিব্বতের অংশ হিসাবে দাবি করছে চিন।

ইতিমধ্যে নেপালি গ্রামবাসীরা চিনের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। হিমালয়ের বরফ গলা জলে পুষ্ট খারানেখোলা এবং ভোটেকোশি নদীর গতিপথও ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। চিনের সরকারি টিভি চ্যানেল গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টুইটারে মে মাসে পুরো মাউন্ট এভারেস্টকে চিনের অংশ বলে দাবি করেছে। পরে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ওঠায় টুইটটি মুছে দেওয়া হয়।

চিন সীমান্ত চিহ্নিত করতে একশটির বেশি পিলার বসিয়েছিল ষাটের দশকে নেপাল সরকার জমি সমীক্ষার পরে। সার্ভে রিপোর্টে উদ্বেগ বেড়েছে নেপালের কারণ চিন ও সশস্ত্র পুলিশের চৌকি বসাতে পারে নেপালের দখলীকৃত জমিতে। সব মিলিয়ে চিনা আগ্রাসন নিয়ে নেপালের অন্দরেই সমস্যা বাড়ছে।