বাংলাদেশে অশান্ত পরিস্থিতি ক্রমশ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। উন্মত্ত জনতার তাণ্ডবের মধ্যেই এ বার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল, বিএনপি নেতার বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে ভিতরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে ওই নেতার সাত বছরের শিশুকন্যার। বিএনপি নেতা নিজে এবং তাঁর আরও দুই নাবালিকা কন্যা গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর জেলায়। ওই এলাকার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের বিএনপি’র সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেনের বাড়িতেই এই নৃশংস হামলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গভীর রাতে বেলাল হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে ছিলেন। সেই সময় কয়েকজন উন্মত্ত ব্যক্তি বাড়ির সদর দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। এর পর ঘরের ভিতরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
Advertisement
এই ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা মহম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ জানান, আগুনে পুড়ে এক ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে কি না, তার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ দমকল দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করা হলেও শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
Advertisement
পরিবারের সদস্যরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দরজা তালাবন্ধ থাকায় বেরোতে পারেননি কেউ। আগুনে ঝলসে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বেলালের সাত বছরের কন্যা আয়েশা আক্তারের। গুরুতর ভাবে দগ্ধ হন বেলাল হোসেন এবং তাঁর আরও দুই কন্যা বীথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তার। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বীথি ও স্মৃতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বেলাল হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি নেতার বাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে বিএনপি। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান বলেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরানো হয়েছে। এটি স্পষ্টতই একটি সন্ত্রাসী হামলা। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি।’
এই পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুরের ঘটনায় শিশুমৃত্যু নতুন করে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে বাংলাদেশে অশান্তি আরও বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জুড়ে সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে। ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই ঘটনার পর থেকে একাধিক সরকারি ভবন, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় এবং সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সামনে এসেছে। সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
Advertisement



