• facebook
  • twitter
Sunday, 16 February, 2025

শেষ ম্যাচ জিতে হাসিমুখে সতীর্থদের কাঁধে চড়ে মাঠ ছাড়লেন ঋদ্ধিমান

ইডেনে ইনিংস ও ১৩ রানে বাংলা হারাল পাঞ্জাবকে

নিজস্ব চিত্র

ইডেন উদ্যানে শনিবার পাঞ্জাবকে হারিয়ে বাংলার খেলোয়াড়রা যখন মাঠ ছাড়েন, তখন ক্রিকেট জীবনের শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন ঋদ্ধিমান সাহা। ইডেনে খেলা শেষে সতীর্থদের কাঁধে চেপে মাঠ ছাড়লেন তিনি। এ বার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে চান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান।

শেষ ম্যাচে জয়ের হাসি হাসলেন ঋদ্ধিমান সাহা। ইডেনে ইনিংস ও ১৩ রানে বাংলা হারাল পাঞ্জাবকে। অর্থাৎ, জিতেই ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন বাংলার উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান।

ইডেনে খেলা শেষে সতীর্থ অভিষেক পোড়েল ও প্রদীপ্ত প্রামাণিক কাঁধে তুলে নেন ঋদ্ধিকে। এই ম্যাচে উইকেটরক্ষকের দস্তানাও পরেন ঋদ্ধি। সতীর্থদের কাঁধে চেপে ঋদ্ধির মুখে ছিল চওড়া হাসি। বাকি ক্রিকেটাররা তাঁকে ঘিরে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।

ক্রিকেট জীবন শেষ। এ বার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে চান ঋদ্ধি। খেলা শেষে তিনি বলেন, “সত্যিই অনেকটা পথ পেরোলাম। প্রত্যেকটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। যে দলের হয়ে খেলেছি নিজের সেরাটা দিয়েছি। অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমার এই যাত্রাপথে যারা পাশে থেকেছে প্রত্যেকের কাছে ঋণী। এবার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পালা।”

ঋদ্ধির দায়বদ্ধতার প্রশংসা করেছেন বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল। এক সময় তাঁরা একসঙ্গেই খেলেছেন। নিজের পুরনো সতীর্থের প্রশংসা শোনা গিয়েছে লক্ষ্মীর মুখে। তিনি বলেন, “ঋদ্ধি সমসময় দলের জন্য খেলেছে। তরুণদের সাহায্য করেছে। সবচেয়ে ভাল বিষয় হল, দেশের হয়ে খেলার মাঝেও ঋদ্ধি সময় বার করে বাংলার হয়ে খেলেছে। ওর দায়বদ্ধতা দেখে বাকিদের শেখা উচিত। কেরিয়ারের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ও একই রকম থেকে গেল। ভবিষ্যতের জন্য ওকে শুভেচ্ছা।”

বাংলার অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদারও দীর্ঘ দিন ঋদ্ধির সঙ্গে খেলেছেন। অনেক সময় কাটিয়েছেন। সেই সময়ের কথা জানিয়েছে অনুষ্টুপ। তিনি বলেন, “জুনিয়র ও সিনিয়র স্তরে আমরা একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। ভাল ব্যাটার হওয়ার পাশাপাশি উইকেটের পিছনেও ঋদ্ধি দুর্দান্ত। অসাধারণ সব ক্যাচ ধরেছে। ওর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।”

১৮ বছরের ক্রিকেট জীবন ১২২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ঋদ্ধি। করেছেন ৬৪২৩ রান। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ২০৩। প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩১৩টি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। করেছেন ৩৭টি স্টাম্প। দীর্ঘ দিন বাংলার রঞ্জি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্রুততম শতরানের রেকর্ড রয়েছে ঋদ্ধির। মাত্র ২০ বলে এই কীর্তি করেছিলেন তিনি। তবে এক কর্তার সঙ্গে বিবাদের জেরে ২০২২ সালে বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরা চলে যান ঋদ্ধি। দু’টি মরসুম সেখানে খেলার পরে আবার বাংলায় ফিরে আসেন তিনি।

বাংলার হয়ে ভাল খেলায় জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছেন ঋদ্ধিমান। ভারতের হয়ে ৪০টি টেস্ট ও ৯টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি। টেস্টে ১৩৫৩ রান ও এক দিনের ক্রিকেটে ৪১ রান করেছেন তিনি। টেস্টে ৯২টি ক্যাচ ধরেছেন ঋদ্ধি। করেছেন ১২টি স্টাম্প।

এক দিনের ক্রিকেটে ধরেছেন ১৭টি ক্যাচ। একটি স্টাম্প করেছেন। উইকেটের পিছনে তাঁর দুর্দান্ত রিফ্লেক্সের জন্য ঋদ্ধিমানতে সমর্থক ও বিশেষজ্ঞেরা ‘সুপারম্যান’ বলেও ডাকতেন। ২০২১ সালের পর থেকে আর জাতীয় দলে সুযোগ পাননি তিনি। শিলিগুড়ির ছেলে ঋদ্ধিমান সবসময়ে নিষ্ঠার সঙ্গে ক্রিকেট খেলাকে আয়ত্ব করেছিলেন। তিনি মাঠে নামলে কোনও সময়ের জন্য ভাবতেন না নিজের জন্য খেলছি। দল ও দেশটাই তাঁর কাছে বড় কথা। সাফল্য দেখাটাই তাঁর পাখির চোখ ছিল। পরবর্তী ধাপে তিনি নিজেকে কিভাবে ব্যস্ত রাখবেন সেটাই দেখবার বিষয়।