• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ওভালের স্বপ্নের আকাশে ভারতের জয়গান

দুঃসাহসের পরিচয়ের নাম মহম্মদ সিরাজ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

চক দে ইন্ডিয়া। মিরাকেল! অবিশ্বাস্য! নাটকীয় জয়! ভাবনার বাইরে! বিদেশের মাটিতে ভারত প্রমাণ করে দিল সংগ্রামের জয় হয়। মহম্মদ সিরাজের বলের জাদুতে ইংল্যান্ডের শিবির ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। কারা যেন দূর থেকে বলেছিলেন, কঠিন সময় ভারত যেভাবে যুদ্ধ জয় করতে পারে, তা অন্য কোনও দেশ সেখানে মুখ তুলে দাঁড়াতে পারে না। ভারতের সাহসী ক্রিকেটাররা যেভাবে বুক জিতিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে দুরন্ত জয় তুলে নিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে, তা যেন এক রূপকথার গল্প। আর এই রূপকথার নায়ক হলেন মহম্মদ সিরাজ। ভারত দুর্ধর্ষ জয় পেল পঞ্চম টেস্টে ৬ রানে ইংল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে। একেই বলে ভারতের অসাধারণ সাফল্যের মানচিত্র।

যেখানে খেলার শেষ দিনে মাত্র ৩৬ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভারত আক্রমণ শানিয়ে জয়ের হাসি হাসতে চারটি উইকেট দরকার ছিল। আর এই কাজটার জন্য বিশ্বকর্মা হতে পারেন একমাত্র বোলাররাই। তা প্রমাণ করে দিয়েছে ভারতের সেরা বোলার মহম্মদ সিরাজ ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। সোমবার মাঠে নামছিল ভারতীয় দল, তখন তাঁদের মধ্যে একটা জেদ খেলা করছিল। এই ম্যাচটা জিততেই হবে, এমন একটা শপথ নিয়ে ক্রিকেটাররা সাহসী ভূমিকা নিয়ে ইংল্যান্ডকে জবাব দিতে তৈরি হয়েছিলেন। সত্যিই তাই হল। রবিবার যেখানে খেলা শেষ হয়েছে, তখন দুই দলের কাছেই জয়ের মঞ্চটা তৈরি ছিল। এমনকি এই মঞ্চকে আলোকিত করার জন্য ভারতীয় বোলাররা দুঃসাহসিক লড়াই করে ইংল্যান্ডকে সপাটে উড়িয়ে দিয়েছেন। একেই বলে অনিশ্চিত ক্রিকেট। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত জনগণমন অধিনায়ক তার সুর সবার হৃদয়ে খেলে গেল। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল শ্বাসরুদ্ধ। কীভাবে নাটকের পটভূমিকা বদলে যাবে, তা কেউই আগাম জানিয়ে দিতে পারেননি। কিন্তু ভারতের বোলাররা যেভাবে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড শিবিরে আঘাত হেনেছেন, তার কোনও বিশ্লেষণ করা যাবে না। হয়তো অধিনায়ক শুভমন গিল ব্রিগেডের জন্য সব বিশেষণ একের পর এক লেখা হয়ে যাবে।

Advertisement

ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান জো রুট ও হ্যারি ব্রুক শতরান করার পরেই অনেকেই হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন ভারত পঞ্চম টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু ভারতের খেলোয়াড়রা প্রমাণ করে দিয়েছেন, যে কোনও মুহূর্তে তাঁরা জ্বলে উঠতে পারেন। তাই তো সোমবারের সকালের সূর্যটা ভারতের জয়ের কথা বলেই আকাশে উঁকি দিয়েছিল। তাই শুরু থেকেই ভারতের আক্রমণাত্মক ভূমিকাকে তারিফ করতেই হবে। অপরাজিত দুই ক্রিকেটার জেমি স্মিথ ও ওভারটন ব্যাট করতে আসেন।

Advertisement

উইকেটে বল করার জন্য তৈরি মহম্মদ সিরাজ। দিনের প্রথম উইকেটটা তুলে নিলেন মহম্মদ সিরাজ। তাঁর ক্ষুরধার বোলিংয়ের কাছে স্মিথ একেবারে বোকা বনে গেলেন। উইকেটে বলটা যখন পড়েছে, তখনই স্মিথ কীভাবে তা সামাল দেবেন, তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। তাঁর ব্যাটে লেগে বল চলে গেল উইকেট রক্ষক ধ্রুব জুরেলের হাতে। স্মিথ আউট ২ রানে। ইংল্যান্ডে স্কোরবোর্ডে তখন ৭ উইকেটে ৩৪৭ রান। স্মিথের উইকেট ভেঙে যাওয়ার পরেই ভারত আরও বেশি মনোবল ফিরে পেল। জাগো ভারত এই আহ্বানে বোলাররা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে উঠলেন। ইংল্যান্ড ৩৫০ রানে পৌঁছে যায়। ক্রিজে ওভারটন ৯ ও অ্যাটকিনসন ২ রান করে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ভারতের দুরন্ত বোলার মহম্মদ সিরাজ আবার ইংল্যান্ড শিবিরকে ধাক্কা দিলেন। আউট ওভারটন মাত্র ৯ রানে। ইংল্যান্ড তখন ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৫৪ রান। ভারতীয় শিবির টগবগ করে ফুটছে। ব্যাট করতে আসেন তং। বল করছেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। কোনও রান নেওয়ার আগেই প্রসিদ্ধের বলে সরাসরি আউট হয়ে যান তং। খেলা আরও জমে গেল। শেষ উইকেটটি নেওয়ার জন্য আবার গর্জে উঠলেন মহম্মদ সিরাজ। সিরাজের বলে বোল্ড আউট অ্যাটকিনসন। তাঁর ব্যাট থেকে ১৭ রান আসে।

ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হল ৩৬৭ রানে। ভারতের জয় ৬ রানে। এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে হৃদয়ে লিখে রাখার জন্য ভারতের সফল ক্রিকেটাররা উল্লাসে মেতে উঠলেন। এই জয় যেন এক অজানা কাহিনি। তাই ওভালের টেস্ট জয় লেখা থাকবে সবার হৃদয়ে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২-১-এ পিছিয়ে থেকে সিরিজ ড্র করাটাও একটা আলাদা অনুভূতির পরিচয়। তাই তো সিরাজ আকাশের দিকে হাত ছুড়ে বলতে চেয়েছেন, আমি হ্যারি ব্রুকের ক্যাচটা নিয়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। তখন আমি খলনায়ক হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার জবাব দেওয়ার জন্য আমাকে জ্বলে ওঠার সাহস দিয়েছিলেন ঈশ্বর। আর এই খলনায়ক থেকে শুধু নায়ক নয়, মহানায়কে নাম লিখিয়ে ফেললেন মহম্মদ সিরাজ। সিরাজ এই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫টি উইকেট নিয়ে এক অভাবনীয় নজির গড়ে ফেললেন। এই টেস্টে কোথায় যেন লুকিয়ে ছিল উদ্বেগ, এত টেনশন, এত আবেগ। যদি ওভাল টেস্টে ভারতের জয় না দেখতে পারলে বোঝাই যেত না! ওভালের মাঠে শুধুই ভারতের জয়গান।

Advertisement