• facebook
  • twitter
Monday, 19 May, 2025

প্রচারের আড়ালে ফুটবলার তৈরি করছেন সমর দেব

খেলোয়াড়ী জীবনের আকস্মিক ছেদ হলেও ফুটবলকে সে ছেড়ে যায়নি

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

জীবনযুদ্ধের কঠিন লড়াই, তবু ফুটবলার তৈরিতে তার আনন্দ।নিজে বড় ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন।কিন্তু ফুটবলার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চোটের কবলে আর বড় ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্নপূরণ হয়নি।বেলঘড়িয়ার নিমতা অঞ্চলের বাসিন্দা সমর খুব অল্প বয়সে এলাকার কোচ তড়িৎ ঘোষের প্রশিক্ষণে খেলা শুরু করে। বেলঘড়িয়া মিশন মাঠ থেকে সে জেলার ক্লাব নিমতা স্পোটিং ইউনিয়নের হয়ে খেলে ফুটবল মহলের নজর কারে।মাত্র ১৫ বছর বয়সেই কলকাতা লিগের সেকেন্ড ডিভিশন ক্লাব ট্যাংরা এফসির হয়ে গড়ের মাঠে তার খেলা শুরু হয়।এরপর সিটি এফসিতে খেলার সময় কোচ জহর দাস ও কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের প্রশিক্ষণ তার খেলার উন্নতি ঘটায়।প্রথম ডিভিশনে মহামেডান এসি যেবছর চ্যাম্পিয়ন হয়,সেবছর সমর ঐ ক্লাবের উল্লেখযোগ্য ফুটবলার ছিলেন।এরপর জর্জ টেলিগ্রাফ, টালিগঞ্জ,কালিঘাট এমএস,পিয়ারলেস ক্লাবের মতো একাধিক সুপার ডিভিশনের ক্লাবে খেলার পরে,সে ওএনজেসি ক্লাবের হয়ে আই লিগ খেলার সুযোগ পায়।ডুরান্ড কাপে ভালো খেলার পরেই চোট তাকে খেলার মাঠ থেকে কেবল দূরে সরিয়ে দেয়নি,সেসময় গুরুত্বপূর্ণ চাকরিটাও চোটের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায়।

খেলোয়াড়ী জীবনের আকস্মিক ছেদ হলেও ফুটবলকে সে ছেড়ে যায়নি।জেলার সুখচর ইউনিয়ন ফুটবল ক্লাবকে কোচিং করানোর পাশাপাশি সে কোচিংয়ের সি-লাইসেন্সটাও করে ফেলেছে। গত তিন বছর ধরে সে কোচ গৌতম ঘোষের সরকারি কোচ হয়ে কাজ করছে।কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্লাব যথাক্রমে বিএসএস ও জর্জ টেলিগ্রাফে কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর এবছর কালিঘাট মিলন সংঘ ক্লাবের কোচিং স্টাফে সে যুক্ত হয়েছেন।

সমর কেবল কলকাতা লিগের সময় কোচিং করান, এমনটা নয়।সারাবছর জেলার দুই ফুটবল ক্লাবে সে ধারাবাহিকভবে কোচিং করান।সুখচর ইউনিয়ন ফুটবল ক্লাব ও ফ্যাশান জোনের হয়ে বিভিন্ন ম্যাচে তাকে কোচিংয়ের দায়িত্বে দেখা যায়।তার কোচিংয়েই এবছর সুখচর ইউনিয়ন ফুটবল ক্লাব জেলার প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার ডিভিশনে উঠেছে।

গত মরশুমে তার প্রশিক্ষণের ১৮ জন ফুটবলার কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশনে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছে।তার প্রশিক্ষণের ফুটবলার জুয়েল আহমেদ মজুমদার এবছর বাংলা সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের সদস্য।জুয়েল আহমেদ গত তিন বছর ধরেই কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশনের বিভিন্ন ক্লাবে যোগদান করেছিল। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে খেলার সুযোগ পাওয়ার জন্যই জুয়েল গতবার জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাবে সই করে।ধারাবাহিক প্রতি ম্যাচে ভালো খেলে এবার বাংলা সন্তোষ ট্রফি দলে জুয়েল তার জায়গা করে নেয়।বাংলা দল সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং রাজ্য সরকার জয়ী ফুটবলারদের চাকরি দেওয়ার জন্য জুয়েলেরও চাকরিটা হয়ে যায়।জুয়েল আহমেদ ছাড়াও সমরের প্রশিক্ষণের অমিত এক্কা ও রাজেন ওরাও এবারের সন্তোষ ট্রফি বাংলা দলের ৩৫ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল।

সিনিয়র ফুটবলার ছাড়াও সমর অনূর্ধ্ব-১০ থেকে অনূর্ধ্ব-১৭ জুনিয়র ফুটবলারদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।তার প্রশিক্ষণের জুনিয়র ফুটবলার রাজদীপ পাল এবছর অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় লিগে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের হয়ে দারুন পারফরম্যান্স করছে।রাজদীপের মোহনবাগান এসজি রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়।রাজদীপ ২৩টা গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসাবে নির্বাচিত হয়। ইতিমধ্যে রাজদীপ মোহনবাগান এসজির হয়ে জাতীয় লিগেও গোল করে চলেছে।প্রথম দুটো ম্যাচেই সে সাত গোল করেছে।

জুয়েল ও রাজদীপদের এমন সাফল্য সমরকে তৃপ্তি দিয়েছে বটে।কিন্তু আরও অনেক জুয়েল ও রাজদীপের জন্য সমর সুনামের সাথে কোচিংটা করাতে চায়।বাড়িতে একমাত্র রোজগারে বাবার বয়স হয়েছে।বয়স্ক বাবা ও মা নিয়ে সমর কেবল সংসারের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে চলেছে তাই নয়।অবিবাহিত সমর তার প্রিয় দুই ভাইপো ও ভাইজির পড়াশোনার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।

পারিবারিক সমস্ত দায়িত্ব পালন করেও সমর কোচিংয়ে তার পরবর্তী ফুটবল জীবনকে প্রতিষ্ঠা দিতে চান। ইতিমধ্যে কোচিং লাইসেন্সের পরবর্তী ধাপগুলোর পরীক্ষার প্রস্তুতি সে নিচ্ছে। কোচিং করাতে এসে বর্তমান সময়ে তাকে নানা প্রলোভনের সামনেও পড়তে হয়।কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে সমর আরো অনেক ফুটবলার বাংলাকে উপহার দিতে চায়।পারিবারিক নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থেকেও সমর সুনামের সঙ্গেই কোচিংটা করাতে চায়।