কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে দুর্নীতির তদন্তে গ্রেফতার প্লাতিনি

ফ্রান্সের প্রাক্তন ফুটবল বিশ্বকাপার এবং ইউনিয়ন অফ ইউরােপীন ফুটবল অ্যাসােসিয়েশন বা উয়েফার প্রাক্তন সভাপতি মিশেল প্লাতিনিকে গ্রেফতার করা হল।

Written by SNS Paris | June 21, 2019 4:52 pm

মিশেল প্লাতিনি (File Photo: IANS)

ফ্রান্সের প্রাক্তন ফুটবল বিশ্বকাপার এবং ইউনিয়ন অফ ইউরােপীন ফুটবল অ্যাসােসিয়েশন বা উয়েফার প্রাক্তন সভাপতি মিশেল প্লাতিনিকে গ্রেফতার করা হল।

এক বিচার বিভাগীয় মুখপাত্র এ খবর দিয়ে জানিয়েছেন ২০২২ সালে কাতারকে বিশ্বকাপ ফুটবল সংগঠনের অধিকার দেওয়া নিয়ে যে দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে তাতেই গ্রেফতার হলেন প্লাতিনি। অনলাইন নিউজি পাব্লিকেশন মিডিয়াপার্টের রিপাের্ট স্বীকার করে নিয়ে এই বিচার বিভাগীয় বলেছেন, প্লাতিনিকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে ওই মুখপাত্র নিজের নাম প্রকাশে রাজি হননি কারণ যে তদন্ত চলছে তা নিয়ে আলােচনা করার কোনও অধিকার তাদের নেই বলে মুখপাত্রটি জানিয়েছেন।

মিশেল প্লাতিনি ফ্রান্সের কিংবদন্তী ফুটবলার প্যারিসের বাইরে দুর্নীতি নিরােধক অফিসে তাঁকে আটক করেছে বিচার বিভাগীয় পুলিশ। তাছাড়াও ফ্রান্সের প্রাক্তন সভাপতি নিকোলাস সার্কোজির প্রাক্তন ক্রীড়া পরামর্শদাতা সােফিয়ে ডিঅনকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। সার্কোজির অধীনে কাজ করতেন প্রাক্তন সচিব। এলসি-র প্রাক্তন সচিব ক্লাউডে গুয়েন্টকেও তদন্তকারীরা সাক্ষী হিসেবে তুলে নিয়ে গেলেও তাঁকে আটক করা হয়নি।

ফ্রান্সের অর্থনৈতিক বিষয়গুলি দেখেন যে আইনজীবীরা তাঁরা ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ এবং ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের বিডিং প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন। তাঁরা আগে প্রাক্তন ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ব্যক্তিগত দুর্নীতি, ফৌজদারী বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা এবং প্রভাব ছড়ানাের কারণগুলিতে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক আইনজীবীদের সেল এই তদন্ত শুরু করেছিল।

প্লাতিনির আইনজীবী এবং পরামর্শদাতা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া চেয়ে মন্তব্যের জন্যে এজেন্সির পাঠানাে মেসেজগুলির উত্তর দেননি। অভিযােগ মিশেল প্লাতিনি কাতারকে বিশ্বকাপ ফুটবলের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ভােট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটিকে কেন্দ্র করেই মূল তদন্ত প্রক্রিয়া এগােচ্ছে।

২০১০ সালে যখন বিশ্বকাপের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে ভােট প্রক্রিয়া চলছিল তখন সেপ ব্লাটার ফিফার সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০২২ বিশ্বকাপের দায়িত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া নিয়ে একটি গােপন ভদ্রলােকের চুক্তি থেকে প্লাতিনি সরে আসেন বলে দোষারােপ করেছেন।

২০১৫ সালে সংবাদ সংস্থাকে প্লাতিনি বলেছিলেন, যে তিনি হয়তাে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল কর্তাদের বলে থাকবেন যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবির সমর্থনে ভােট দেবেন। কিন্তু তিনি নিজের মত পাল্টে ফেলেন ২০১০ সালে নভেম্বর মাসের একটি বৈঠকের পর। সেই বৈঠকের উদ্যোক্তা ছিলেন তখনকার সভাপতি নিকোলাস সার্কোজি। প্যারিসে নিজের বাড়িতে তিনি বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে কাতারের ক্রাউন প্রিন্স, এখন যিনি এমির তামিম বিন হামাদ উপস্থিত ছিলেন।

দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পরে প্লাতিনি বারবার বলেছিলেন, ওই বৈঠক কাতারকে ভােট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করতে ডাকা হয়নি। সার্কোজি কখনােই আমাকে কাতারকে ভােট দিতে বলেননি । কিন্তু আমি জানতাম কোনটা করলে ভাল হবে।

২০১৫ সালেই এক সাক্ষাৎকারে সেপ ব্লাটার দাবি করেন, প্লাতিনি বিশ্বকাপের জন্য ভােট গ্রহণের আগে তাঁকে বলেছিলেন, আমি আর আপনার দলে নেই কারণ আমাকে দেশের প্রধান বলেছেন, ফ্রান্সের অবস্থান তিনিই ঠিক করবেন। ফাইনানসিয়াল টাইমসে ব্রাটারের এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল।

২০১৫ সালেই ফিফায় প্লাতিনি এবং ব্লাটারকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অর্থনৈতিক দুর্নীতির দায়ে ফিফা প্লাতিনিকে নির্বাসিতও করে। অভিযােগ ছিল ব্লাটারের অনুমতি নিয়ে প্লাতিনি দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার ব্যাপারে দুর্নীতি করেছেন। প্লাতিনির এই নির্বাসন এবছর অক্টোবর মাসে শেষ হওয়ার কথা। প্রথমবার মধ্যপ্রাচ্যে ফুটবল বিশ্বকাপ করার জন্য কাতার যে রাস্তা নিয়েছিল সেটা নিয়েই ফিফা তদন্ত শুরু করে। মার্কিন অ্যাটর্নি মিখাইল গার্সিয়া আবিষ্কার করেন, কাতারের কিছু কিছু কাজকর্ম আইন মােতাবেক হয়নি যা ফিফার সনদ অনুযায়ী হওয়া উচিত ছিল।