• facebook
  • twitter
Monday, 17 March, 2025

বিশ্বরেকর্ড গড়ার নজির গড়লেন মহম্মদ শামি

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জয় ভারতের

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিল ভারত। মূলত শুভমন গিলের অপরাজিত ১০১ রানের ওপর ভর করে এবং মহম্মদ শামির ৫ উইকেট নেওয়ার দৌলতে এই জয় এলো। বাংলাদেশের ২২৮ রানের উত্তরে ভারত চার উইকেট হারিয়ে করে ২৩১ রান। বাংলাদেশের তৌহিদ হৃদয় শতরান করলেও তা কাজে লাগল না।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রিকেট যুদ্ধটা বেশ জমাটি আকার নিয়েছিল বৃহস্পতিবার। একদিকে বাংলাদেশের হুঙ্কার আর অন্যদিকে ভারতের দাপটের ভাবনায় খেলার প্রথম বল থেকেই উত্তেজনায় ভরপুর হয়ে ওঠে। কোনও দলই কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে রাজি হয়নি। তাই ভারত যেমন আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে, তা অবশ্যই প্রশংসা করার মতো। ভারতের বোলাররা দারুণ ছন্দে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বল করেছেন। বিশেষ করে মহম্মদ শামির নাম প্রথমেই উঠে আসবে। তিনি আবার ক্রিকেট মাঠে স্বমহিমায় ফিরে আসার পরে দেখিয়ে দিলেন তাঁর বলে এখনও কত গতি আছে। হয়তো সেই কারণেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সুবিধা আদায় করে নিতে পারেননি। বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি। ৪৯.৪ ওভারে সবাই আউট হয়ে যান ২২৮ রানে।

তবে, তৌহিত হৃদয় একটা অনবদ্য ইনিংস খেললেন। তাঁর ব্যাট থেকে এল ১০০ রান। ঠিক ১০০ রানের মাথায় তিনি হর্ষিত রানার বলে মহম্মদ শামির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। যেভাবে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসান শান্ত বড় গলায় যে কথা বলেছিলেন, তা দেখতে পাওয়া গেল না মাঠে। তিনি শূন্য রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। তবে জাকের আলি ৬৮ রান করে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডকে একটু ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ভারতের মহম্মদ শামি পাঁচটি উইকেট পেলেন ৫৩ রানের বিনিময়ে। আর হর্ষিত রানা তিনটি উইকেট নিয়েছেন ৩১ রান দিয়ে। আর অক্ষর প্যাটেল দুটো উইকেট পান ৪৩ রানের বিনিময়ে। তবে এদিন অক্ষর প্যাটেল হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব দেখাতে পারতেন। কিন্তু ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ক্যাচটি ফেলে দেন। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের ২২৮ রানটা ভারতের কাছে খুব একটা বড় ব্যাপার নয়।

তবে এরই মধ্যে মহম্মদ শামি একটা নতুন রেকর্ড গড়ে ফেললেন। এক দিনের ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বলে এই কীর্তি গড়েছেন ভারতীয় পেসার। বলতে পারা যায় এক দিনের বিশ্বকাপে যেখানে শেষ করেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেখান থেকেই শুরু করলেন মহম্মদ শামি। আইসিসি প্রতিযোগিতায় ফিরে আবার ছন্দে তিনি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নামার আগে ১৯৭ উইকেট ছিল শামির। ২০০ উইকেটে পৌঁছতে দরকার ছিল ৩ উইকেট। জাকের আলিকে আউট করে ২০০ উইকেটে পৌঁছে যান শামি। ২০০ উইকেট নিতে ৫১২৬ বল করেছেন শামি। বিশ্বে এত কম বলে কোনও বোলার ২০০ উইকেট নিতে পারেননি। এত দিন এই রেকর্ড ছিল মিচেল স্টার্কের দখলে। অস্ট্রেলিয়ার পেসার ২০০ উইকেট নিতে করেছিলেন ৫২৪০ বল। আইসিসির এক দিনের প্রতিযোগিতায় ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটও শামির দখলে। ৬০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। জাহির খান নিয়েছিলেন ৫৯ উইকেট। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে জাহিরকে ছাপিয়ে গেলেন শামি।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ইংল্যান্ড সিরিজ়ে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন হয়েছে শামির। সেখানে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, প্রতি ম্যাচে উন্নতি হচ্ছে তাঁর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জসপ্রীত বুমরাহ না থাকায় ভারতের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শামি। প্রথম ম্যাচে ভাল বল করলেন তিনি। প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকারকে আউট করেন তিনি। প্রথম স্পেলে মেহেদি হাসান মিরাজেরও উইকেট নেন শামি। তৃতীয় স্পেলে ফিরে এসে সেই শামিই আবার বাংলাদেশের জুটি ভাঙেন। জাকেরকে আউট করেন তিনি। নিজের নবম ওভারে আউট করেন তানজিম হাসান সাকিবকে। শেষ ওভারে নেন তাসকিন আহমেদের উইকেট। ম্যাচে ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন শামি। শামি প্রমাণ করে দিলেন তিনি এখনও হারিয়ে যাননি।

ভারত জয়ের জন্য ২২৯ রানের লক্ষ্যে মাঠে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল। অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেন করতে আসেন শুভমন গিল। এই দুই ক্রিকেটার বলের দিকে চোখ রেখে যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে আশা করা গিয়েছিল বিনা উইকেটে প্রথম জুটিতে ১০০ রান তুলবেন স্কোরবোর্ডে। কিন্তু হিটম্যান রোহিত শর্মা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তাসকিন আহমেদের একটি বল যেভাবে খেললেন, তা আউট হওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ ছিল না। রোহিত দেখছিলেন বলটা বাইরে যাচ্ছে, তবু কেন ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলতে গেলেন। বল চলে গেল সোজা রিশদ হাসানের কাছে। ভারত প্রথম উইকেট হারায় ৬৯ রানে। কিন্তু তারপরই দেখা গেল দ্বিতীয় উইকেটে খেলতে আসছেন ভারতের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। গ্যালারিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতে গোনা দর্শকরা ভাবতেও পারেননি, কোহলি দ্বিতীয় উইকেটে খেলতে আসবেন। কোহলি প্রথম বল থেকেই বেশ আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন।

কোহলি আক্রমণাত্মক হলেও রিশদ হোসেনের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। বিরাটের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮ বলে ২২ রান। শুভমন গিলের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে শ্রেয়স আইয়ার খেলতে নামলেও তাঁর ব্যাটও ব্যর্থ হয়। শ্রেয়স ১৫ রান করে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে অধিনায়ক শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দেন।