লুকাস মৌরার হ্যাটট্রিকে টটেনহ্যাম চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যে বারবার হয়ে চলে অনন্তকাল ধরে এই বলে আসা এবং শুনে আসা কথাগুলি যে কতখানি সত্য এবং তার প্রমাণ দিল টটেনহ্যাম হটসলার।

Written by SNS Amsterdam | May 10, 2019 11:52 am

লুকাস মৌরা (File Photo IANS)

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যে বারবার হয়ে চলে অনন্তকাল ধরে এই বলে আসা এবং শুনে আসা কথাগুলি যে কতখানি সত্য এবং তার প্রমাণ দিল টটেনহ্যাম হটসলার।

২৪ ঘন্টা আগে ইংল্যান্ডের ক্লাব লিভারপুল প্রথম লেগের ফলাফল উল্টে দিয়ে বার্সিলােনাকে দ্বিতীয় লেগের সেমিফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে চলে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডেরই অন্য একটি ক্লাব টটেনহ্যাম হটসপার দেখালাে ইতিহাসেরই পুনরবৃত্তি কাকে বলে।

প্রথম লেগে নেদারল্যান্ডে অ্যাজাক্স আমস্টারডামের কাছে এক গােলে হেরে যাওয়ার পর জোহান ক্রুইফ এরিনাতে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে লুকাস মৌরার দুরন্ত হ্যাটট্রিকে ম্যাচের ফলাফল ৩-৩ করার পর অ্যাওয়ে গােলের সুযােগে মরিসিও পোচেটিনাের দল টটেনহ্যাম ফাইনালে চলে গিয়েছে। অবিশাস্য এই ঘটনা যেন ছাপিয়ে গিয়েছে লিভারপুলের বার্সিলােনাকে হারানোর কাহিনীকেও।

অজাক্স প্রথম লেগে এক গােলে জিতে থাকায় নেদারল্যান্ডের তরুণ দলটি দ্বিতীয় লেগে নিজেদের সবকিছু উজার করে দিয়ে প্রথমার্ধে দুটি গােল করায় তারা ৩-০ গােলে এগিয়ে গিয়েছিল। অধিনায়ক ম্যাথিজ ডি লিট এবং হাকিম জিয়েচ দুটি গােল করায় অ্যাজাক্স ফাইনালে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল। কিন্তু টটেনহ্যাম দ্বিতীয়ার্ধে যা করেছে তা কারােও কল্পনাতেও ছিল না।

আগের রাত্রে লিভারপুল ম্যাচের পুরো ৯০ মিনিট সময় পেয়েছিল বার্সিলােনার ৩-০ গােলে এগিয়ে থাকা মুছে ফেলার জন্য। আর টটেনহ্যাম তার অর্ধেক সময় হাতে পেয়েই দ্বিতীয়ার্ধে লুকাস মৌরার দুটি গােলে ফলাফল একসময় ৩-২ করে দেয়। এরিক টেন হ্যাগের অ্যাজাক্স দলটি তারপরও ফাইনালে যেতে পারে এই সম্ভাবনা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু ব্রাজিলের ফুটুবলার লুকাস মৌরা স্টপেজ টাইমের একেবারে শেষ মুহূর্তে বক্সের মধ্যে থেকে যে নিচু শটটি নেন অ্যাজাক্সের গােলরক্ষক আঁদ্রে ওনানা ডাইভ দিয়ে পড়েও সেই বল আটকাতে পারেননি।

মৌরার হ্যাটট্রিক এবং ফলাফল দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ হয়ে যাওয়ায় অ্যাওয়ে গােলের সুযােগে টটেনহ্যাম ফাইনালে চলে গিয়েছে।

১৯৯৬ সালের পর অ্যাাজাক্স আবার ফাইনাল খেলার স্বপ্নও শেষ হয়ে যায় এখানে। অ্যাজাক্সের ফুটবলাররা কান্নায় ভেঙে পড়ে মাঠে শুয়ে পড়েন। তাদের বিপুল সমর্থকরা স্তম্ভিত হয়ে যান। অথচ প্রথমার্ধে অ্যাজাক্স দুটি গােল করার পর মনে হয়েছিল ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে। অ্যাজাক্স আগেই রিয়েল মাদ্রিদ এবং জুভেন্তাসের মতাে দলকে হারানােয় তাদের সম্পর্কে প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। সেই প্রত্যাশা কিন্তু ম্যাচ শুরুর মুহূর্ত আগে প্রথম ধাক্কা খায়।

প্রথম একাদশে নাম থাকা সত্ত্বেও অ্যাজাক্সের ব্রাজিলিয়ান উইংগার ডেভিড নেরেস ওয়ার্ম আপ করার পরও দল থেকে সরে দাঁড়ান। তার বদলে ডেন কাসপার ডেলবার্গকে নামাতে হয় অ্যাজাক্সকে। পরিণতিতে কোচ এরিক টেন হ্যাগ ডুসান ট্যাগিকে লেফট উইংয়ে সরিয়ে নিয়ে যান। অ্যাজাক্সও ম্যাচ শুরু হওয়া মাত্র টটেনহ্যামের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ম্যাচের ৫ মিনিটে ডুসান ট্যাডিকের একটি শট বাঁচাতে গিয়ে টটেনহ্যামের গােলরক্ষক হুগাে লরিস কর্নার করে বসেন। কর্নারের পর ল্যাসে স্পেনের পাঠানাে ফ্লোটার থেকে ম্যাথিজ ডি লিট হেট করে অ্যাজাক্সকে এগিয়ে দেন।

হ্যারি কেন এবং সন হিউম মিনকে ছাড়াই খেলতে নামা টটেনহ্যাম প্রথম লেগে হেরেছিল কিন্তু দ্বিতীয় লেগে সন দলে ফিরে আসায় তাদের আক্রমণ অনেকখানি ধারাল হয়ে যায়। সন হিউম মিনের শট পােস্টে লেগে ফিরে আসে এবং পাল্টা আক্রমণে আবার অ্যাজাক্স দ্বিতীয় গােলটি পেয়ে যায়। ডুসান ট্যাডিক জিয়েচকে লক্ষ্য করে বল কাট ব্যাক করেছিলেন কঠিন কোন থেকে জিয়েচের বাঁ পায়ের শট হুগাে লরিসকে দাঁড় করিয়ে রেখে গােলে ঢোকে।

তবু এরপরও মরিসিও পােচেটিনের দল দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছে। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে লুকাস মৌরা যে নিচু শটটি নেন বক্সের মধ্যে থেকে তা অ্যাজাক্স গোলরক্ষক ওনানাকে সহজেই পরাস্ত করে গােলে ঢােকে। চার মিনিট বাদই অ্যাজাক্স গােলরক্ষক ওনানা টটেনহ্যামের লােরেন্টের শটটি আটকালে ফিরতি বল লুকাস মৌরার পায়ে পড়ে। মৌরা তা থেকেই নিজের দ্বিতীয় গােলটি করেন। আর একটি গােল পেলেই টটেনহ্যাম ফাইনালে চলে যাবে। ম্যাচে এইরকম একটি টেনশানের মধ্যে অ্যাজাক্স দলটি চাপের মুখে নিজেদের সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে।

তবুও তাদের তারকা স্ট্রইকার জিয়েচ ম্যাচের ৭১ মিনিটে দূর থেকে বল পােস্টে মারেন। অন্যদিকে, টটেনহ্যামের জ্যাং ভট্টেনডেনের শট বারে লেগে ফেরে। অ্যাজাক্সের তখনও ধারণা ছিল তারা এই ম্যাচ জিতবে। কিন্তু স্টপেজ টাইমে লুকাস মৌরার তৃতীয় গােল তথা হ্যাটট্রিক অ্যাজাক্সের সব স্বপ্ন শেষ করে দেয়।

পড়ুন । কেঁদে ফেলে পােচেটিনাে বললেন লুকাস মৌরা একজন সুপার হিরো